দখলদাররা গিলে খাচ্ছে কীর্তনখোলা নদী

বরিশাল নগরী ঘেঁষে বয়ে যাওয়া প্রাণ ও প্রকৃতির স্নিগ্ধ স্রোতধারার কীর্তনখোলা নদী পাঁচ হাজার দখলদারের কবলে জর্জরিত। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দখল হয়েছে নগরীসংলগ্ন নদীতীর। ফলে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে কীর্তনখোলার আয়তন। পাশাপাশি দখলের বিরূপ প্রভাব পড়ছে নদীর স্বাভাবিক গতি-প্রবাহ, পরিবেশসহ মানবজীবনে। প্রশাসনের নাকের ডগায় তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে এই বেপরোয়া দখলদারিত্ব চললেও নদী রক্ষায় কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ নগরবাসীর। তাই প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের প্রকৃতি রক্ষায় প্রভাবশালীদের বেপরোয়া দখলদারিত্ব ঠেকাতে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গসহ নগরবাসীর সহযোগিতা কামনা করেছেন সচেতন মহল। দেশের আইন অনুযায়ী, নদীতীরের যে অংশে শুষ্ক মৌসুমে চর পড়ে এবং বর্ষা মৌসুমে ডুবে যায় তাকে ফোরশো বলা হয়। ওই ফোরশো এলাকায় কারও অধিকার না থাকায় তা দখল করলে দখলদার হিসাবে চিহ্নিত হবেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বরিশালের তথ্যানুযায়ী, গত ৪০ বছরে কীর্তনখোলার দুই পাড়ে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করে দখল করেছে ৫ হাজার ১৯২ জন প্রভাবশালী দখলদার। এর মধ্যে সাতটি বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান এই নদী দখলে জড়িত বলে অভিযোগ। এছাড়া নগরীর রূপাতলী, ধান গবেষণা রোড, বেলতলা, কালিজিরা, কর্ণকাঠী এলাকার নদীতীরে গড়ে উঠেছে ডকইয়ার্ড, গোডাউন, কারখানা, ইট-বালু বিক্রির প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি রসুলপুর চর, মোহাম্মদপুর চর, দপদপিয়ার চর, কর্ণকাঠী চর, পলাশপুর চর, খোন্নারের চর, বাড়িয়ার চর ও দপদপিয়া ফেরিঘাটসংলগ্ন এলাকার নদী তীর দখল করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি দখল হয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন দপদপিয়া এলাকাসহ বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া এলাকার শহর রক্ষা বাঁধের দুই পাশ। দখল করা নদীতীরে দোকানপাট, স-মিল, ইট-বালুর ডিপো, অফিস, ঘরবাড়ি এমনকি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে নদীর তীর দখল করে। তবে দখলদাররা বলছেন, নদীর পাড়ের বেশিরভাগ জমির দলিল রয়েছে। এছাড়াও আগে ভাঙনে বিলীন হওয়া জায়গায় চর জেগে উঠায় দাগ অনুযায়ী সেই জমি দখল করা হয়েছে। নগরীর ধান গবেষণা রোডের বাসিন্দা ইমতিয়াজ অমিত বলেন, বছরের পর বছর ধরে নদীতীর দখল হলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তর কিছুই বলছে না। এভাবে চলতে থাকলে কীর্তনখোলা নদী খালে পরিণত হবে। তাই অবিলম্বে প্রকৃতি বাঁচাতে নদীটি দখল মুক্ত করার দাবি জানান তিনি। কর্নকাঠী এলাকার জেলে বৃদ্ধ আবদুল জব্বার বলেন, কীর্তনখোলায় আগে জাল ফেললেই মাছ পাওয়া যেত। এখন দখল দূষণের কারণে আগেকার মতো মাছ নেই। দিন দিন নদীতে মাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে বলে জানান তিনি। বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ ও জনসুরক্ষা ফোরামের আহ্বায়ক শুভংকর চক্রবর্তী বলেন, নদীরক্ষায় আমাদের কার্যকরী উদ্যোগের অভাবে দিন দিন তা দখল হয়ে সংকুচিত হচ্ছে। তাই পরিবেশ রক্ষায় এই নদীকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সময়ের দাবি। এজন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোসহ রাজনৈতিক-সামাজিক ব্যক্তিদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা দরকার বলে জানান তিনি। বরিশাল জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেনকে কল দিলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে বিআইডব্লিউটিএ বরিশালের বন্দর কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, এই বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।