ভার্চুয়াল আসক্তি থেকে মুক্ত হওয়ার সুযোগ রমজান

২৮ মার্চ, ২০২৩ | ৫:৩৭ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

দেখতে দেখতে মাহে রমজানের চারটি দিন চলে গেছে। আমরা রোজার মজা পাচ্ছি কিনা সেটি এখনই দেখার সময়। যদি আপনার মসজিদের সঙ্গে, কুরআনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রে স্বতঃস্ফূর্ততা আসে, তাহলে বুঝতে হবে আপনি মজা পাচ্ছেন। আর যদি নিজেকে জোর করে মসজিদে নিতে হয়, কুরআন পড়তে হয়, তাহলে বুঝতে হবে ধীরে ধীরে আপনি আগের জীবনে ফিরে যাচ্ছেন। রোজার মজা হারিয়ে যাওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। এর একটি ভার্চুয়াল ভাইরাস। মোবাইল, ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া আসক্ত ব্যক্তি কখনোই রোজার মজা পাবে না। প্রথম কয়েক দিন সে ভান করবে, রোজা রাখছি, মসজিদে যাচ্ছি, বেশ মজা পাচ্ছি। কিন্তু ভান বেশি দিন চালিয়ে নেওয়া যায় না। অল্প সময় পরই আসল চেহারা বেরিয়ে আসে। তখন দেখা যায়, আজান হয় মোবাইল আসক্ত ব্যক্তি আর মসজিদে ছুটে যায় না। মূল্যবান রাত কেটে যায়, ইবাদতে দাঁড়ানোর সৌভাগ্য তার হয় না। খুবই দুঃখজনক ঘটনা। হে ভাই আমার, রমজানের যে অমূল্য রাতগুলো তুমি অহেতুক নেট ব্রাউজিং, চ্যাটিং, গেমিংয়ে কাটিয়ে দিচ্ছ, তোমার কি এতটুকুন আফসোসও হয় না! হায়! কীভাবে মরে গেল আমাদের চেতনা। মুসলিম বিশ্বে দুর্ভাগ্যের ছায়া এমনি এমনি নেমে আসেনি। জীবন থেকে রহমত, বরকতের ডানা আল্লাহতায়ালা এমনি এমনি সরিয়ে নেয়নি। বর্তমান প্রজন্মের বড় একটি অংশ রমজানকে সবচেয়ে ঘৃণ্যভাবে যাপন করছে। ইফতারের পর থেকে শুরু হয় মোবাইল চালানো। তারাবিহ, তাহাজ্জুদ, দোয়ার আসর, কুরআনের আসর কোনো কিছুতেই ভার্চুয়াল ভাইরাসে আক্রান্ত ভাইটিকে পাওয়া যায় না। গা শিউরে ওঠার মতো খবর হলো, এমন হতভাগা তরুণও আমাদের দেশে আছে, রমজানের সারা রাত কাটিয়ে দেয় ইন্টারনেটের নোংরা দুনিয়ায়। আজানের ১০ মিনিট আগে কোনো রকম সেহরি খেয়ে পরদিন উপবাস পালন করে। এক ওয়াক্ত নামাজও পড়ে না! প্রিয় ভাই! সারা বছরই তো মোবাইলে বুঁদ ছিলে। এবার সময় এসেছে গা ঝাড়া দিয়ে দাঁড়ানোর। নেশাখোর যেমন রমজানকে নেশা ছাড়ার মাস হিসাবে গ্রহণ করে, তেমনি আমরা যারা ভার্চুয়াল ভাইরাসে আক্রান্ত, আমাদেরও রমজানকে গ্রহণ করতে হবে সুস্থ জীবনে ফিরে আসার মাস হিসাবে। বিষয়টি সহজ নয়, কিন্তু সম্ভব। নিজের ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগান। মোবাইল চালানোর সময় নিজেকে প্রশ্ন করুন, এ আমি কী করছি! এতে আমার কী উপকার হচ্ছে! একজন নেশাখোর যেমন নেশা ভেতরে নেয়, কিন্তু সে জানে না সে কী করছে, আমারও তো সে অবস্থা হচ্ছে। নেশাখোর যেমন নেশাময় জীবন ঘৃণা করে, কিন্তু নেশা থেকে বের হতো পারে না, আমিও তো এভাবে সময় নষ্ট করাকে অপছন্দ করি, কিন্তু হাত থেকে তো মোবাইল রাখতে পারছি না। এভাবে নিজের সঙ্গে নিজে বাহাস করুন। আর পাঁচ মিনিট চালিয়ে মোবাইল রেখে দেব, আজ চালিয়ে নিই, কাল থেকে মনোযোগ দিয়ে ইবাদত করব, এসব প্রবোধ দিয়ে নিজেকে নিজে প্রতারিত করবেন না। কেউ আপনাকে ঠকালে আপনি রেগে যান, কিন্তু এই যে দিনের পর দিন নিজেই নিজেকে ঠকাচ্ছেন, এতে আপনার বিবেক কেন জেগে ওঠে না! হে আমার ভাই! রোজার সুঘ্রাণ জীবনে মেখে নেওয়ার এ সুযোগ তুমি আর না-ও পেতে পার? কীভাবে নিশ্চিত হলে এ রমজানই তোমার জীবনের শেষ রমজান নয়। গত বছর এক যুবককে বলেছিলাম, বন্ধু! রমজানকে কাজে লাগাও। নিজেকে গড়। প্রভুর সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াও। জবাবে যুবকটি লাজুক স্বরে বলেছিল, হুজুর! ব্যক্তিগত কিছু ঝামেলায় আছি। ব্যস্ততা খুব বেশি। ব্যবসাও ভালো যাচ্ছে না। আগামী রমজানে ইনশাআল্লাহ বেশি করে ইবাদত করে নেব। আফসোস! রমজান শুরুর এক সপ্তাহ আগে সে ভাইটি আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন। মাত্র এক সপ্তাহ! সময় হয়ে গেছে। চলে যাওয়ার ডাক এসে গেছে। শবেবরাত পার হওয়ার পরও তো ভাইটি বুঝতে পারেনি আসন্ন রমজান তার ভাগ্যে জুটবে না। গত রমজানের ব্যস্ত দিনগুলোতে একবারের জন্যও তার মনে হয়নি, জীবনের শেষ রমজান অতিবাহিত করছি! জীবনে কত রমজান এলো-গেল। হেলায় কাটিয়েছি। এ রমজানও আমরা যারা হেলায় অতিবাহিত করছি তারা কী জানি, আগামী রমজানে আমরা হয়তো হয়ে যাব কবরের মেহমান। আসুন! ভার্চুয়াল নেশাকে না বলি। রোজার মজায় ডুব দেই। মহান আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন। আমিন।