সারা বিশ্বে ৩ হাজারের বেশি বিলিয়নিয়ার বা শতকোটিপতি আছেন। তবে এসব বিলিয়নিয়ারদের ব্যক্তিগত জীবন একরকম নয়। তাদের পারিবারিক জীবনে অনেকে একাধিক বিয়ে করেছেন। অনেকে বিচ্ছেদ বা সম্পর্ক ভাঙার পর একাকী জীবন কাটাচ্ছেন। বিশ্বের আরও দশজন মানুষের মতো তাদের জীবনেও রয়েছে ভাঙা–গড়ার চল।
দেখা যাক, ফোর্বসের শীর্ষ ১০ তালিকায় থাকা ধনীদের স্ত্রী কারা এবং এই ধনীদের ব্যক্তিজীবনই বা কেমন।
ইলন মাস্ক
টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী ও বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের বিবাহিত জীবন বর্ণময়। এই ধনীর সন্তান ১৪টি এবং সন্তানের মা তিনজন। ২০০০ সালে মাস্ক প্রথম বিয়ে করেছিলেন তার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেমিকা জাস্টিন মাস্ককে। তাদের সংসারে রয়েছে ছয় সন্তান। তবে ২০০৮ সালে তাদের সম্পর্ক ভেঙে যায়। এরপর মাস্ক আবার প্রেমে পড়েন ইংরেজ অভিনেত্রী টালুলাহ রাইলির। ২০১০ সালে তার সঙ্গে বিয়েতে বসেন। তা ২০১২ সালে বিচ্ছেদ ঘটে। তবে ২০১৩ সালে তারা আবার এক হন এবং দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। তবে ২০১৬ সাল থেকে স্থায়ীভাবে আলাদা হয়ে যান। মাস্কের বর্তমানে কোনো স্ত্রী নেই।
ল্যারি এলিসন

বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী ওরাকলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসন। তিনি তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অবদান রাখার জন্য যেমন পরিচিত, তেমনি ব্যক্তিজীবনে বিলাসী ‘প্লেবয়’। ৮০ বছর বয়সে তিনি চারবার বিয়ে করেছেন, চারবার বিবাহবিচ্ছেদ করেছেন। তার স্ত্রীরা হলেন- অ্যাডা কুইন, ন্যান্সি হুইলার জেনকিনস, বারবারা বুথ ও মেলানি ক্রাফট। বর্তমানে তিনি ৪৭ বছর ছোট চলচ্চিত্র নির্মাতা ও অভিনেত্রী নিকিতা কানের সঙ্গে সম্পর্কে আছেন। বেশ স্বচ্ছন্দ জীবনযাপন করছেন তারা।
মার্ক জাকারবার্গ

বর্তমানে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনী মার্ক জাকারবার্গ। ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী এই উদ্যোক্তার স্ত্রী একজন সমাজসেবী। তিনি আগে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। এ দম্পতি ২০১২ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের বন্ধুত্ব কলেজজীবন থেকেই। জেফ বেজোস বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ ধনী অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস। তার সম্পদের পরিমাণ ২৪৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন বা ২৪ হাজার ৩৮০ কোটি মার্কিন ডলার। তিনি ১৯৯৩ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ম্যাকেনজি স্কটের সঙ্গে সংসার করেছেন। বিচ্ছেদের পর তিনি লরেন সানচেজের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। লরেন সানচেজ মার্কিন গণমাধ্যমের অন্যতম জনপ্রিয় উপস্থাপক। জেফ ও লরেন ২০২৩ সালের মে মাসে বাগদান করেন। চলতি বছর তারা বিয়ে করেন। সেই বিয়েও ছিল ইতিহাসের অন্যতম জাঁকজমকপূর্ণ।
ল্যারি পেজ

বর্তমানে বিশ্বের পঞ্চম শীর্ষ ধনী ল্যারি পেজ গুগলের সাবেক প্রধান নির্বাহী। তিনি এবং তার স্ত্রী লুসিন্ডা সাউথওয়ার্থকে ব্যবসায়িক দুনিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় দম্পতি। আকর্ষণীয় এ দম্পতি ২০০৭ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের সংসারে দুই সন্তান রয়েছে। তার সম্পদের পরিমাণ ১৯৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন বা ১৯ হাজার ৫৮০ কোটি মার্কিন ডলার। লুসিন্ডা জিনতত্ত্ববিষয়ক খ্যাতনামা গবেষক।
সের্গেই ব্রিন

বিশ্বের ষষ্ঠ শীর্ষ ধনী সের্গেই ব্রিন। তার সম্পদের মূল্য ১৮১ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ১৮ হাজার ১৭০ কোটি ডলার। গুগলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা সের্গেই ব্রিনের ব্যক্তিজীবনে রয়েছে নানা উত্থান-পতন। তিনি ২০০৭ সালে বায়োটেক উদ্যোক্তা অ্যান ভজসিকিকে বিয়ে করেছিলেন। তাদের সংসারে জন্ম নেয় দুই সন্তান। ২০১৫ সালে তাদের সম্পর্কের ইতি ঘটে। ২০১৮ সালে ব্রিন আইন-প্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা নিকোল শানাহানকে বিয়ে করেন সের্গেই। এ দাম্পত্যও টেকেনি। ২০২২ সালের শুরুতে বিচ্ছেদের আবেদন করেন সের্গেই। ২০২৩ সালে তা কার্যকর হয়।
বার্নার্ড আর্নল্ট

বিশ্বের সপ্তম শীর্ষ ধনী বার্নার্ড আর্নল্ট দুই বিয়ে করেছেন। তার দুই ঘরে আছে পাঁচ সন্তানের সবাই যুক্ত আছে বিলাসপণ্যের সাম্রাজ্য এলভিএমএইচের সঙ্গে। প্রথম স্ত্রী অ্যান দ্যুভাভরিনের সঙ্গে আর্নল্টের সংসারে জন্ম নেয় দুই সন্তান—ডেলফিন ও অঁতোয়ান। পরে তিনি বিয়ে করেন কানাডীয় কনসার্ট পিয়ানোবাদক হেলেন মার্সিয়েকে। তাদের সংসারে তিন সন্তান—আলেকজান্দ্র, ফ্রেদেরিক ও জঁ। আর্নো পরিবার বর্তমানে প্যারিসে বসবাস করছে।
স্টিভ বালমার

বিশ্বের অষ্টম শীর্ষ ধনী স্টিভ বালমারের স্ত্রী কনি স্নাইডার। তাদের সংসারে তিন ছেলে রয়েছে। বালমার পরিবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের হান্টস পয়েন্টে বসবাস করেন। এ দম্পতি দাতব্য কার্যক্রমেও যুক্ত। সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য কমাতে তারা শত শত কোটি ডলার দান করেছেন। বিশেষ করে শিশুর প্রাক্–প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন ও কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পে। তার স্ত্রী সমাজ সেবা কাজের সঙ্গে জড়িত।
ওয়ারেন বাফেট

বিনিয়োগের জগতে ‘ওরাকল অব ওমাহা’ ও স্টক মার্কেটের রাজা নামে খ্যাত ওয়্যারেন বাফেটের ব্যক্তিজীবনও কম আলোচিত নয়। বর্তমানে বাফেট সংসার করছেন অ্যাস্ট্রিড মেনকসের সঙ্গে। আগে রেস্তোরাঁর হোস্টেস হিসেবে কাজ করা অ্যাস্ট্রিড তার জীবনে সবচেয়ে বড় সহায়ক। এর আগে বাফেট মার্কিন সমাজকর্মী স্যুসান বাফেটের সঙ্গে সংসার করেছেন ১৯৫২ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত। বর্তমানে বাফেটের সম্পদের মূল্য ১৪৯ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ১৪ হাজার ৯৪০ কোটি ডলার।
জেনসেন হুয়াং
-68c3030786819.jpg)
এনভিডিয়ার সহ-প্রতিষ্ঠাতা জেনসেন হুয়াংয়ের স্ত্রী লরি মিলস হুয়াং। তারা পরস্পর ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে সহপাঠী ছিলেন। তাদের দুটি সন্তান স্পেন্সার ও ম্যাডিসন। তারা দুজনই বর্তমানে এনভিডিয়ায় কর্মরত। এই পরিবার বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাস করছেন। দাতব্য কর্মকাণ্ডে তাদের অবদানও সমানভাবে পরিচিত।