শেখ হাসিনার ১৬ বছরের তিলে তিলে গড়ে উঠা শেয়ার বাজারের ২৫% এক বছরে ধ্বংস করেছে ইউনূস

১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | ৯:২৭ পূর্বাহ্ণ
ড. মামুনুর রশীদ , ডোনেট বাংলাদেশ

গত ১৬ বছর শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আর্থিক খাতের দুর্নীতির বিষয়ে অনেকগুলো মিথ্যা প্রচারণা চলেছে। আমি এর আগে প্রমাণ করে দেখিয়েছি প্রতিবছর ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগ শুধু মিথ্যা প্রচারণাই নয়, এরকম আরও সুপরিকল্পিত মিথ্যা প্রচারণা চালানো হয়েছে মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করার জন্য। যেমন, সাধারণ প্রবাহকে বাধাগ্রস্থ করে রেমিট্যান্সকে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এতে ২০২৪ নির্বাচন পরবর্তী সময়ে পাহাড়সম ডলার সংকটে পড়ে সরকার, যার প্রভাব পড়ে ব্যাঙ্কিং খাত, শেয়ার বাজার এবং নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দামের উপর। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতা নেয়ার পর দেশের শেয়ার বাজারে মোট মূলধন ছিলো ২,২৭,৬৪০.৮০ কোটি টাকা। মোট নিবন্ধিত কোম্পানির সংখ্যা ছিলো ২৭০। জুন ২০২৪ সালে বিদায়ের আগের মাসে মোট মূলধন দাঁড়ায় ৩,৬৬,৮১৯.৭৭ কোটি টাকা এবং নিবন্ধিত কোম্পানির সংখ্যা হয় ৪২৯। এই ১৬ বছরে বাজার মূলধন বেড়েছে ৬০%। সেপ্টেম্বর ২০২২ এ বাজার মূলধন ছিলো সর্বোচ্চ ৪,৬০,১০১.৭৪ কোটি টাকা (জুলাই ২০০৯ – সেপ্টেম্বর ২০২২ পর্যন্ত ১০২% মূলধনের প্রবৃদ্ধি এবং একই সময়ে ৫.৮% ক্রমবদ্ধমান রিটার্ন)। ১৬ বছরে জারিকৃত মূলধন বেড়েছে প্রায় ৫ গুণ। এই চমৎকার প্রবৃদ্ধির পরেও শেয়ার বাজারের ব্যক্তিকেন্দ্রিক দুর্নীতির জন্য বারবার প্রচারণা চালানো হয়েছে শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। অনেকে অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগ শেয়ার বাজার ধ্বংস করে গেছে। আসলে কেমন ছিলো শেয়ার বাজার শেখ হাসিনার সময়? এখন কেমন আছে? কত টাকা ইউনুস এবং তার লুটেরা গোষ্ঠী চুরি করেছে শেয়ার বাজার থেকে? আসুন ডাটা দিয়ে দেখি। সব ডাটা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার সময়কে নীল এবং ইউনূসের সময়কে লাল রং দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিও একাউন্টের ডাটা সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ২৯ জুলাই, ২০২৫ এর প্রেস ব্রিফিং থেকে নেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার ১৬ বছর শেয়ার বাজারের স্বর্ণযুগ: চিত্র ১ এ শেয়ার বাজারের মোট মূলধনের প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছে। ২০২২-২৩ সালে কোভিড এবং রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের পরেও শেয়ার বাজারের মোট বাজার মূলধন স্থিতিশীল ছিলো (৪.৫৬ ট্রিলিয়ন বাংলাদেশ টাকা)। ২০২৪ এর নির্বাচনের পর এই বাজারে পতন হয়, যা ২০২৪ এ জুন গিয়ে দাঁড়ায় ৩.৬৬ ট্রিলিয়ন টাকায়। ইউনূসের এক বছর পর জুন ২০২৫ এ বাজার মূলধন আরও কমে গিয়ে দাঁড়ায় ৩.৩২ ট্রিলিয়ন টাকা। চিত্র ২ এ দেখুন শেয়ার বাজারে মোট নিবন্ধিত কোম্পানির সংখ্যা। যেকোনো শেয়ার বাজারের সম্বৃদ্ধি নির্ভর করে সেখানে নিবন্ধিত কোম্পানির গুণমান এবং পরিমাণ এর উপর। শেখ হাসিনার সরকার মাত্র ২৭৩ টা কোম্পানি থেকে ৫৭% বৃদ্ধি করে ৪২৯ এ নিয়ে আসেন (৪২৭ তা জুন ২০২৪ পর্যন্ত)। ইউনুস ক্ষমতার আসার পর গত ১২ মাসে কোনও নতুন আইপিও আসেনি। বরং শেয়ার বাজার থেকে উঠে গেছে ১৬ টা কোম্পানি। চিত্র ৪ এ দেখুন শেয়ার বাজারের সূচক (ডিএসই ব্রড ইনডেক্স) এবং বাৎসরিক লেনদেন। ডিসেম্বর ২০২২ এ মোট লেনদেন ৭,২৩১ কোটি টাকা থেকে বেড়ে এক বছরে ডিসেম্বর ২০২৩ এ হয়েছে ১০,২০৬ কোটি টাকা – প্রায় ৪১% প্রবৃদ্ধি। ইউনূসের প্রথম ছয় মাস শেষে তা আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায়।

১৬ বছরের অগ্রগতি ১ বছরে ধ্বংস করেছে ইউনূস:

টেবিল ১ এ বাজার মূলধনের পরিবর্তন দেখানো হয়েছে বিভিন্ন সময়ের জন্য। দুইটা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে – ন্যাচারাল লগ ব্যবহার করে ক্রমবর্ধমান গড় পরিবর্তন (সিএসি) এবং দুইটা সময় বিন্দুর মধ্যে স্থির পার্থক্য (পি২পি)। কিন্তু চিন্তার বিষয় হচ্ছে জানুয়ারি ২০২৪ এর নির্বাচন সম্পর্কিত বাজার অস্থিতিশীলতার কারণে ২০২৪ এর এক বছরে (জানুয়ারি – ডিসেম্বর ২০২৪) বাজার মূলধন কমেছে ২৩%। প্রশ্ন হচ্ছে, শেখ হাসিনা সরকারের অবস্থানকে নড়বড়ে করতে এই বাজারকে ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে কি না? এরকম আমার দেখেছি রেমিট্যান্স এর ক্ষেত্রে – কিছু নির্দিষ্ট দেশ থেকে রেমিট্যান্স এর ইনফ্লো এত বেশি ছিলো যে তা শেখ হাসিনা সরকারের পতনের সময়ের সাথে মিলে যায় এবং পতনের পর রেমিট্যান্স আগের অবস্থায় ফিরে যায়। সেপ্টেম্বর মাসে ইউনুস পুরোপুরি ক্ষমতা নেয়ার পর থেকে জুন ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রায় এক বছরেও বাজার মূলধন কমে গেছে ২২%। এমনকি ২০২৫ এর শেষ ছয় মাসে মূলধন কমেছে ৮%। ২০২৪ এর নির্বাচনের সময় থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত এই দেড় বছরে বাজার মূলধন কমেছে প্রায় ৩১%।   কি পরিমাণ লুটপাট হয়েছে ইউনুসের সময়: আগস্ট ২০২৪ এ শেখ হাসিনার বিদায়ের পর থেকে জুন ২০২৫ সাল পর্যন্ত মোট বাজার মূলধন করে গেছে ২৪.১৫% – তার মানে প্রায় প্রতি চার টাকায় এক টাকা শেয়ার বাজার থেকে হাওয়া হয়ে গেছে। শেখ হাসিনার সময় বাজারের অগ্রগতি থাকা সত্ত্বেও মিথ্যা প্রচারণা চালানো মিডিয়া এখন পুরোপুরি চুপ। আগস্ট ২০২৪ থেকে জুন ২০২৫ এই ইউনূসের সময়ে বাজার থেকে বের হয়েছে ৮০ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর সংখা কমে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। জুন ২০২৪ থেকে জুন ২০২৫ এ যেসব বিও একাউন্টের পোর্টফোলিও ভ্যালু ১ লক্ষ টাকার নিচে তার সংখ্যা কমে গেছে ৭৫,৪৫৭ (১৪,৪৪,০০৫ থেকে কমে হয়েছে ১৩,৬৮,৫৪৮)। এই ধরনের একটা অবস্থায় শুধু কিছু চিহ্নিত নীতিহীন ব্যক্তির শেয়ার বাজার নিয়ে বারবার কারসাজির দায় দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের উপর। অথচ ডাটা বলছে বাজারের একটা ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন হয়েছে। মার্জিন লোন নিয়ে বিপদে পড়া বিনিয়োগকারী, ব্রোকারেজ হাউজ, এবং ব্যাঙ্কিং খাতের পূর্ণাঙ্গ ক্ষতি নিরূপণে কোনও প্রচেষ্টা হাতে নেয়া হয়নি। বরং শেয়ার বাজারের বড় অংশীদার ব্যাঙ্কিং খাত নিয়ে একেরপর পর মিথ্যা প্রচারণায় এই বাজারে অস্থিরতা আরও বাড়ছে। বড় বিনিয়োগকারীরা টাকা উঠিয়ে নিচ্ছেন। কোনও নতুন আইপিও আসেনি। ইউনুসের এই অল্প সময়ে যে পরিমাণ ক্ষতি করা হয়েছে তা লাখো বিনিয়োগকারীর গত ১৬ বছরের কষ্টার্জিত টাকা লুটে নিয়েছে।