রাজশাহীতে পুলিশের উপস্থিতিতে খানকা শরিফে উগ্রবাদীদের হামলা

৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | ১১:৩১ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

রাজশাহীর পবা উপজেলার পানিশাইল চন্দ্রপুকুর গ্রামে সুফিবাদ চর্চার ঐতিহ্যবাহী কেন্দ্র আজিজ ভাণ্ডারীর খানকা শরিফে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে তথাকথিত তৌহিদি জনতা নামের জঙ্গি-উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী। পুলিশি উপস্থিতিতেই হামলার ঘটনা ঘটে। এই হামলা ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত বলে মনে করছেন খানকার ভক্ত ও অনুসারীরা। আজ ৫ই সেপ্টেম্বর, শুক্রবার জুমার নামাজের পর বড়গাছি ইউনিয়নের এই এলাকায় হামলা চালানো হয়। পবা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুনিরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করলেও হামলা ঠেকাতে পুলিশের ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। খানকার বর্তমান পীর আজিজুল ইসলাম বলেন, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাকে আগেই সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল। তারপরও কোনো নিরাপত্তা জোরদার করা হয়নি। হামলাকারীরা তৌহিদি জনতা নামধারী উগ্র গোষ্ঠী, যারা সুফিবাদ, মাজার ও আধ্যাত্মিক চর্চার বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। তিনি জানান, ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে প্রতিবছর তিন দিনব্যাপী দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এ বছরও পূর্ব অনুমতি নিয়েই আয়োজন চলছিল। কিন্তু জুমার নামাজের পর পরিকল্পিতভাবে স্থানীয় কিছু উগ্রপন্থীকে উস্কে দিয়ে মব তৈরি করে খানকা শরিফে হামলা চালানো হয়। তারা তাণ্ডব চালিয়ে পবিত্র স্থানটি ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলো পুলিশের একটি টহল দল। তবে তাদের নিষ্ক্রিয় ছিলেন। তাদের এমন ভূমিকায় ক্ষোভ জানাচ্ছেন খানকা শরিফের অনুসারীরা। ওসি মুনিরুল ইসলাম বলেন, তিন-চারশত মানুষ একসঙ্গে হামলা করেছে, আর আমরা ছিলাম মাত্র পাঁচজন। সেখানে আমাদের করার কিছু ছিল না। বাংলাদেশের হাজার বছরের ধর্মীয় ঐতিহ্যে সুফিবাদ এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে থাকলেও বর্তমান ইউনূস সরকারের সময়ে তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন। এই মাটিতে পীর-দরবেশের মাধ্যমে শান্তি, সহমর্মিতা ও মানবতার বাণী ছড়িয়েছে যুগে যুগে অমর হয়ে আছেন। সেই ঐতিহ্যবাহী চর্চার ওপর আজকের এই আক্রমণ শুধু একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উপর নয়, বরং দেশের বহুকালের সহনশীল, উদার ও আধ্যাত্মিক সংস্কৃতির ওপরই এক নগ্ন আঘাত বলে করেন সুধীজন। ‘তৌহিদি জনতা’ নামধারী জঙ্গি মানসিকতার কিছু গোষ্ঠী সারা দেশে সুফিবাদ ও আধ্যাত্মিক ইসলামকে ‘বিদআত’ আখ্যা দিয়ে নানা উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়লেও সরকার তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে বলে মাজার ভক্তদের অভিযোগ। শুধু খানকা বা মাজার নয়, বরং দেশের ধর্মীয় বৈচিত্র, সংস্কৃতি ও সহাবস্থানের চেতনাকেই ধ্বংস করছে জঙ্গিরা এমন মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতিকর্মী ও সুধীজন।