মেরিনা তাবাসসুমের দ্বিতীয়বার আগা খান পুরস্কার জয়: শেখ হাসিনার আমলে নির্মিত অসাধারণ স্থাপত্যের স্বীকৃতি

৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | ৮:৫৮ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

বাংলাদেশের খ্যাতিমান স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম দ্বিতীয়বারের মতো মর্যাদাপূর্ণ আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার জিতেছেন। এবার তিনি তার উদ্ভাবনী প্রকল্প ‘খুদি বাড়ি’র জন্য এই সম্মান লাভ করেছেন, যা নদীভাঙনের কারণে বাস্তুচ্যুত সম্প্রদায়ের জন্য বাঁশ ও ইস্পাত দিয়ে নির্মিত জলবায়ু-সহনশীল, সাশ্রয়ী এবং বহনযোগ্য আবাসন সমাধান। এই পুরস্কার বাংলাদেশের স্থাপত্য জগতে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত এবং শেখ হাসিনার আমলে নির্মিত মেরিনার অসাধারণ স্থাপনাগুলোর প্রতি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি। মেরিনা তাবাসসুম প্রথমবার আগা খান পুরস্কার জিতেছিলেন ২০১৬ সালে ঢাকার বাইত উর রউফ মসজিদের নকশার জন্য। এই মসজিদটি শুধু একটি ধর্মীয় স্থানই নয়, বরং একটি কমিউনিটি সেন্টার হিসেবেও কাজ করে, যেখানে স্কুল, সভাকক্ষ এবং খেলার মাঠের সুবিধা রয়েছে। স্থানীয়ভাবে তৈরি ইট ব্যবহার করে নির্মিত এই মসজিদ সুলতানি আমলের বাঙালি স্থাপত্যের সঙ্গে সমসাময়িক নকশার একটি অপূর্ব সংমিশ্রণ। মেরিনার দাদি সুফিয়া খাতুনের দান করা জমিতে নির্মিত এই মসজিদটি ২০১২ সালে সম্পন্ন হয় এবং এর আলো-বাতাসের স্বচ্ছ নকশা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রিত্বকালে (২০০৯-২০২৪) মেরিনা তাবাসসুমের আরেকটি উল্লেখযোগ্য প্রকল্প হলো ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অবস্থিত বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র ভূগর্ভস্থ জাদুঘর, স্বাধীনতা জাদুঘর। ২০১৫ সালে উদ্বোধন করা এই জাদুঘরটি মুঘল আমল থেকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরে। জাদুঘরটিতে রয়েছে ঐতিহাসিক ছবি, নথিপত্র, টেরাকোটা শিল্পকর্ম এবং মুক্তিযুদ্ধের বিস্তারিত বিবরণ সম্বলিত মাল্টিমিডিয়া প্রদর্শনী। এর ভূগর্ভস্থ ‘ফোয়ারা অফ টিয়ার্স’ মুক্তিযুদ্ধের ত্যাগের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়েছে, এবং উপরে ‘টাওয়ার অফ লাইট’ একটি আধুনিক ল্যান্ডমার্ক হিসেবে স্বাধীনতার প্রতিনিধিত্ব করে। এই প্রকল্পটি ১৯৯৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে প্রথম পুরস্কার লাভ করে। মেরিনার আরেকটি উল্লেখযোগ্য কাজ হলো প্যাভিলিয়ন অ্যাপার্টমেন্ট, যা ২০০৪ সালে আগা খান পুরস্কারের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত হয়েছিল। এই প্রকল্পটিও শেখ হাসিনার প্রথম আমলে (১৯৯৬-২০০১) শুরু হয় এবং ঢাকার শহুরে প্রেক্ষাপটে স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে সমন্বিত একটি আধুনিক আবাসিক নকশা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস মেরিনা তাবাসসুমকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, “খুদি বাড়ির মাধ্যমে আপনি প্রমাণ করেছেন কীভাবে স্থাপত্য মানবতার সেবায় কাজ করতে পারে। এই সম্মান বাংলাদেশকে বিশ্ব মঞ্চে সৃজনশীলতা ও সামাজিক উদ্ভাবনের প্রতিনিধিত্ব করেছে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, মেরিনা বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারপারসন এবং জুলাই বিদ্রোহ স্মারক জাদুঘরের প্রধান পরামর্শক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। মেরিনা তাবাসসুম বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে ১৯৯৫ সালে স্থাপত্যে স্নাতক সম্পন্ন করেন। তিনি ২০০৫ সালে মেরিনা তাবাসসুম আর্কিটেক্টস (এমটিএ) প্রতিষ্ঠা করেন, যেটি সমসাময়িক বিশ্বের সঙ্গে স্থানীয় সংস্কৃতির সমন্বয়ে স্থাপত্যের একটি নতুন ভাষা তৈরির লক্ষ্যে কাজ করে। তিনি বেঙ্গল ইনস্টিটিউট ফর আর্কিটেকচার, ল্যান্ডস্কেপস অ্যান্ড সেটলমেন্টস-এর একাডেমিক ডিরেক্টর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন শেখ হাসিনার আমলে মেরিনার এই স্থাপনাগুলো বাংলাদেশের স্থাপত্যকে বিশ্ব মঞ্চে তুলে ধরেছে। তার কাজ শুধু স্থাপত্যের শৈল্পিক দিকই নয়, বরং সামাজিক ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় টেকসই সমাধানের উদাহরণ স্থাপন করেছে। ২০২৪ সালে টাইম ম্যাগাজিন তাকে বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে এবং ২০২০ সালে প্রসপেক্ট ম্যাগাজিন তাকে কোভিড-১৯ যুগের তৃতীয় শীর্ষ চিন্তাবিদ হিসেবে ঘোষণা করে। এই দ্বিতীয় আগা খান পুরস্কার জয়ের মধ্য দিয়ে মেরিনা তাবাসসুম বাংলাদেশের স্থাপত্য জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে নিজেকে আরও প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার কাজ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্থপতি ও সমাজসেবীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।