এ কেমন বর্বরতা! দরগা শরিফে হামলা-লুটপাটের পর নুরাল পাগলার মরদেহ পোড়ালো উগ্রবাদী তৌহিদি জনতা

৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | ৮:৫৭ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ধর্মান্ধ উগ্রবাদীদের হামলা-লুটপাট, ভাঙচুরে এক নারকীয় ঘটনা ঘটেছে। আল্লাহভক্ত নুরুল হক ওরফে ‘নুরাল পাগলার’ কবর উচ্ছেদ করে মরদেহ তুলে আগুনে পুড়িয়েছে উগ্র তৌহিদি জনতা। এর আগে তারা দরবার শরিফ ও বাড়িতে বর্বরোচিত হামলা, ভাঙচুর, লুটপাটের পর অগ্নিসংযোগ করে। এতে দরবারের নিরীহ ভক্ত-অনুসারীসহ শতাধিক মানুষ আহত হন। আজ ৫ই সেপ্টেম্বর, শুক্রবার জুমার নামাজের পর গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জুড়ান মোল্লাপাড়ায় এ ভয়াবহ নৃশংসতার ঘটনা ঘটে। জুমার নামাজের পর পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, বিভিন্ন স্থান থেকে তৌহিদি জনতা এসে শহীদ মহিউদ্দিন আনসার ক্লাবে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। তারা নুরুল হকের বাড়ি ও দরবারের ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। পরে তারা দরবার শরিফ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদুর রহমান। হামলাকারীরা ইউএনওর গাড়ি ও পুলিশের দুটি গাড়িও ভাঙচুর করে। গত ২৩শে আগস্ট ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন নুরুল হক। পরে তার প্রতিষ্ঠিত দরবার শরিফের ভেতরে ভক্তরা সম্মান দেখিয়ে তাকে দাফন করেন। কিন্তু ধর্মান্ধ উগ্রবাদী জনতা কবরের উচ্চতা ও আচ্ছাদন ব্যবহারের অজুহাতে কয়েকদিন ধরে উত্তেজনা সৃষ্টি করে আসছিল। তৌহিদি জনতার একজন আলামিন বলেন, নুরাল পাগলের কর্মকাণ্ড শরিয়তবিরোধী। তাই জনতা আজ তার দরবার ভেঙে দিয়েছে। বাড়িঘর ভেঙে আগুন দিয়েছে। তার লাশ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে ফেলেছে। কামরুল ইসলাম নামের আরেক তৌহিদি ধর্মান্ধ বলেন, লাশ না পোড়ালে তার ভক্ত ও পরিবারের লোকজন আবারও ভণ্ডামি শুরু করতে। যে কারণে কবর থেকে লাশ তুলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। লাশ পোড়ানোর অধিকার আপনাদের কে দিয়েছে? আপনারা কি নিজেরা নিজেদের ধর্মের রক্ষক মনে করেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ভ্যাবাচেকা খেয়ে কামরুল আমতা আমতা করে বলেন, একজন মুসলমানের লাশ পোড়ানো আসলে সমর্থন করি না, কিন্তু তার কর্মকাণ্ডে মুসলমান মনে হয়নি। দরবার শরিফের দানবাক্স লুটকারী কেফায়েত উল্লাহ বলেন, তার কবর দেওয়া হয়েছে ১২ ফুট উঁচুতে, এটা শরিয়তবিরোধী। আজ আমরা জনতা তার আস্তানা গুঁড়িয়ে দিয়েছি। আমাদের কাজ শেষ। মালামাল লুটপাট করা কি ঠিক হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানালেন এটা গণিমতের মাল। লুটপাট করার হক আছে আমাদের। প্রশাসন এ বিষয়টি নিয়ে ইতিপূর্বে পরিবার ও ভক্তদের সঙ্গে সমাধানের চেষ্টা করলেও পরিকল্পিতভাবে শুক্রবার নামাজের পর উগ্রবাদী তৌহিদি জনতা দরবার শরিফে জঙ্গি হামলা চালায়। প্রথম দফায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর দ্বিতীয় দফায় আবারও হামলা চালিয়ে কবর থেকে মরদেহ তুলে নেয় তারা। পরে পদ্মার মোড়ে নিয়ে সেই মরদেহ আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় দরবারের অসংখ্য নিরীহ ভক্ত-অনুসারী আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ধর্মান্ধ তৌহিদি জনতার হামলা যখন চলছিল, সে সময় পুলিশ ঘটনা নিয়ন্ত্রণে নিতে ব্যর্থ হয়। পরে সেনা ও র্যাব এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। স্থানীয়রা জানান, আশির দশক থেকে নুরুল হক আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত। পরে তিনি দরবার প্রতিষ্ঠা করেন। তার বহু ভক্ত-অনুসারী রয়েছে। কিন্তু তার মৃত্যু ও কবর দেওয়াকে কেন্দ্র করে ধর্মান্ধ তৌহিদি গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে হিংসা ও সহিংসতার পথ বেছে নেয়। দরবার শরিফে হামলার আগের দিন প্রশাসন বৈঠক ডেকে দুই পক্ষকে আলোচনায় বসায়। কিন্তু ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর হুমকি-ধমকির কাছে কার্যত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে নিরপরাধ মানুষ, দরবারের ভক্তরা এবং এমনকি একজন মৃত মানুষও ধর্মান্ধতার হিংস্র থাবা থেকে রক্ষা পেলেন না। রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার কামরুল ইসলাম বলেন, জুমার পর তৌহিদি জনতা জড়ো হন। তাদের একটা অংশ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। সে সময় পুলিশের গাড়ি ও ইউএনওর গাড়ি ভাঙ্চুর করে। পরে নুরুল হকের বাড়িতে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে। নুরুল হকের ছেলে মেহেদী নূর জিলানী বলেন, আমার বাবা ইমাম মাহাদির দ্বীন প্রচারক ছিলেন। মৃত্যুর পর তার ওছিয়ত অনুসারে কিছুটা উঁচু করে ইসলামের বিধান মেনে দাফন করা হয়েছে। ১২ ফুট উঁচু করার অভিযোগ সত্য নয়। ৩-৪ ফুট উঁচু হতে পারে। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে। আজকের এই হামলার পর এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ভক্ত ও সাধারণ মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।