মিথ্যা-ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় জর্জরিত সাংবাদিক নাজমুশ সাহাদাতের পরিবার

একের পর এক মিথ্যা মামলায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে সাংবাদিক নাজমুশ সাহাদাতের পরিবার। ষড়যন্ত্র ও হয়রানিমূলকভাবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে সাংবাদিক শাহাদাতের বোন, তার স্বামী এবং তার পরিবারের চার সদস্যকে। তাও একটি দুটি নয়, একে একে বেশ কয়েকটি মামলায় আসামি করা হয়েছে তাদেরকে। এমনই অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারটির সদস্যরা। বর্তমানে কর্মরত সাংবাদিক নাজমুশ সাহাদাত বলেন, আমি গত ৯-১০ বছর ধরে সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত। গত বছর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানের সময়ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে গেছি, আন্দোলনের পাশে থেকেছি। কিন্তু আমার পরিবারই এখন মিথ্যা, ষড়যন্ত্র ও হয়রানিমূলক মামলার শিকার। একটা দুটো নয়, ৬/৭টা মামলায় আসামি করা হয়েছে আমার বোন, ভগ্নিপতি ও পরিবারের অন্য সদস্যদেরকে। এ বিষয়ে আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অভিযোগ করে সাংবাদিক সাহাদাতের বোন ভুক্তভোগী ফেরদৌস আরা বলেন, আমি একজন প্রাইমারি স্কুলের সহকারী শিক্ষক। ২০২৩ সাল থেকে আমি শিক্ষকতা করে আসছি। আমার স্বামী পল্লি উন্নয়ন ব্যাংকের উপজেলা পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা। আমরা উভয়েই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলাম। এছাড়াও আমার স্বামী পারিবারিকভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তা সত্ত্বেও আমাকে ও আমার স্বামীসহ তার পরিবারের চার সদস্যকে ৭/৮টা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে এবং এসব মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়ে আমাদেরকে হয়রানি করা হচ্ছে। কারা হয়রানি করছে- এমন প্রশ্নের জবাবে ফেরদৌস আরার স্বামী আসাদুজ্জামান বলেন, মামলার বাদীপক্ষকে আমরা চিনি না। তারাও আমাদেরকে চেনেন না। আমরা থাকি তাফালবাড়িতে, এখানেই আমাদের বাড়ি, আমাদের চাকরি, আমাদের ঠিকানা। আর মামলা হয়েছে ঢাকার কয়েকটি থানায় এবং সেগুলোর স্পটও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়। অথচ আমরা সেই জায়গাগুলো চিনিও না, কখনো যাওয়াও হয়নি। আমরা তো এখানেই থাকি। তবুও আমাদেরকে আসামি করা হয়েছে এবং আমরা শুধু শুধুই হয়রানির শিকার হচ্ছি। জানা গেছে, ভুক্তভোগী আসাদুজ্জামান বাগেরহাট জেলার শরণখোলা থানার ৪নং সাউথখালী ইউনিয়নের গাবতলা গ্রামের বাসিন্দা। আর তার স্ত্রী তথা সাংবাদিক সাহাদাতের বোন স্কুল শিক্ষিকা ফেরদৌস আরাও একই ইউনিয়নের রায়েন্দা গ্রামের বাসিন্দা। তার মা নাজমুন নাহারও পেশায় একজন কলেজ শিক্ষকা। তিনি তাফালবাড়ি স্কুল অ্যান্ড কলেজে লাইব্রেরিয়ান হিসেবে দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে কর্মরত। জীবনের শেষ বেলায় এসে একমাত্র মেয়ে, জমাই ও তার পরিবারের সদস্যদের ওপর এই মামলা-হয়রানিতে রীতিমতো পেরেশান হয়ে পড়েছেন ৫৮ বছর বয়সি এই শিক্ষিকা। আক্ষেপ ও অভিযোগের সুরে তিনি বলেন, এই জীবনে অনেকের ছেলে-মেয়েকেই তিনি পড়িয়েছি। সুশিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করে গেছি। কাউকে কোনোদিন ক্ষতি করার চিন্তাও করিনি। অথচ এই শেষ বয়সে এসে কিনা নিজের মেয়ে-জামাইকে মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলার শিকার দেখতে হচ্ছে। এটা নিছকই ষড়যন্ত্রমূলক ও হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার এক নীচ মানসিকতার কাজ। এরকম মিথ্যা মামলার আসামি করে হয়রানি করে কেউ কোনোদিন শান্তি পাবে না। আল্লাহ এর বিচার করবে নিশ্চয়ই। এদিকে এসব মামলার পেছনে কে থাকতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে ফেরদৌস আরা বলেন, সম্প্রতি আমার বিয়ে হয়েছে। আর বিয়ের পর থেকেই একটা পক্ষ আমার পারিবারিক ও সামাজিক মর্যাদা ও সম্মান নষ্ট ও ভুলুণ্ঠিত করার জন্য উঠেপড়ে লাগে। এ সময়ে আমার নিজের ও আমার পরিবার ও বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের মোবাইল নম্বর ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমাকে জড়িয়ে বিভিন্ন কুৎসা ও কুরুচিপূর্ণ তথ্য ছড়িয়ে আমাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়। এমনকি আমার স্বামীর চাকরিচ্যুতি ও আমাদের বিচ্ছেদ ঘটানোর জন্য বিভিন্ন হুমকি বার্তাও দেওয়া হয়। এসব করেও কোনো উদ্দেশ্য হাসিল না হওয়ায় এখন এসব হয়রানিমূলক মামলায় মিথ্যা আসামি করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। বলেন, অথচ আমরা ছিলাম জুলাই আন্দোলনের অন্যতম কর্মী ও সমর্থক। আমার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই তার প্রমাণ রয়েছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক উল্লেখ করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন বাগেরহাট জেলা কমিটির যুগ্মসচিব সাব্বির হোসেন বলেন, যে কোনো ধরনের সাহায্যের জন্য তিনি প্রস্তুত আছেন। এদিকে ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে শরণখোলা উপজেলা জামায়াতের শুরা সদস্য ও ৪নং সাউথখালী ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা গোলাম ছরোয়ার বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবেই সাংবাদিক নাজমুশ সাহাদাত-কে ও তার পরিবারকে চিনি, জানি। তারা কেউই আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। তারপরেও এভাবে তাদেরকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মামলায় আসামি করাটা সত্যিই দুঃখজনক। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং সবরকমের সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছি। এ বিষয়ে ৪নং সাউথখালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও চেয়ারম্যান প্রার্থী শহিদুল ইসলাম লিটন বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবেই আসাদুজ্জামান ও তার পরিবারকে জানি। তারা স্থানীয় বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তার চাচা নুরু কেশিয়ার উপজেলা বিএনপির নেতা ছিলেন। তাছাড়া ফেরদৌস আরা নিজেও শিক্ষক এবং তার মা নাজমুন নাহার ম্যাডাম আমাদের গুরুজন। তাদের পরিবারের সঙ্গেও আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তারা কেউই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না, কোনো কমিটিতেও তাদের নাম নেই। তিনি আরও বলেন, আমার মনে হচ্ছে এটা নিছকই ষড়যন্ত্র ও হয়রানিমূলক মামলায় তাদেরকে জড়ানো হয়েছে এবং তাদের পরিবারকে ধ্বংসের পায়তারা করা হচ্ছে। আমি বিষয়টির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে যেকোনো সহযোগিতার জন্য আমরা তাদের পাশে আছি। তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে শরণখোলা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আব্দুল মালেক রেজা বলেন, আমি মনে করি এটা নিতান্তই একটা ষড়যন্ত্রমূলক অপতৎপরতা। সংঘবদ্ধ একটা গোষ্ঠী মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে দুটি পরিবারকে ধ্বংসের পায়তারা চালাচ্ছে। প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।