বায়ার্স ক্রেডিটের উল্লম্ফন, আমদানিনির্ভরতা কাটাতে হবে

১৯ মার্চ, ২০২৩ | ১০:০৫ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

সম্প্রতি বায়ার্স ক্রেডিটের মাধ্যমে দেশে পণ্য আমদানি জ্যামিতিক হারে বেড়েছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। একসময় বায়ার্স ক্রেডিটের মাধ্যমে শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি করা হতো। এখন এসব পণ্যের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ ভোগ্যপণ্যও আমদানি করা হচ্ছে। ফলে এ ঋণের ওপর চাপ বাড়ছে। জানা যায়, ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বায়ার্স ক্রেডিটের মোট স্থিতি স্থানীয় মুদ্রায় ২ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। মহামারির আঘাত এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। চড়া দামে পণ্য আমদানি করতে গিয়ে ডলার সংকটে পড়েছে প্রায় সব দেশ। চাহিদা অনুযায়ী ডলারের জোগান না থাকায় আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকরা বাকিতে পণ্য বেচাকেনা বাড়িয়ে দেন। বস্তুত এর প্রভাবেই দেশে বায়ার্স ক্রেডিটের মাত্রা বেড়েছে। মহামারির আগে আমাদের দেশে সাধারণত এ ধরনের ঋণে পণ্য আমদানি হতো খুবই কম। কারণ, এতে সুদের হার বেশি। আমদানির ক্ষেত্রে বেশি অর্থ খরচ হলে স্বাভাবিকভাবেই সেসব পণ্যের বিক্রয়মূল্যও অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। কাজেই বায়ার্স ক্রেডিটের মাধ্যমে পণ্য আমদানিকে নিরুৎসাহিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। ডলার সংকট কাটাতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন কারণে একটি দেশের দ্রুত আমদানিনির্ভরতা কাটিয়ে ওঠা কঠিন। কাজেই আমাদের উচিত রপ্তানি খাতকে চাঙা করার পাশাপাশি দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। শ্রমনির্ভর জনশক্তি রপ্তানির পরিবর্তে মেধানির্ভর জনশক্তি রপ্তানি করা সম্ভব হলে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে। আমদানিনির্ভরতা পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনার পদক্ষেপ নেওয়া না হলে আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া দরকার। এতে আশা করা যায়, কিছু শিল্প অন্তত ভালো থাকবে এবং সেগুলোয় কর্মসংস্থানও বাড়বে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন শিল্পের ক্ষেত্রে সফলভাবে টিকে থাকার নীতি গ্রহণ করতে হবে। রপ্তানির ক্ষেত্রে মন্দার আঘাত কম-এমন দেশের প্রতি নজর দিতে হবে। দেশে বায়ার্স ক্রেডিট অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেলে তা রিজার্ভের ওপর কতটা চাপ তৈরি করবে, তা সহজেই অনুমেয়। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার জন্য আমাদের দেশের ভোক্তা ও আমদানিকারকদের নানাভাবে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করবে, এটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে ভোক্তা ও আমদানিকারকদের দেশপ্রেমের পরিচয় দিতে হবে। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমগ্র বিশ্বে খাদ্য উৎপাদন মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে আগামী দিনে সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতিতে নানা ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। জানা যায়, আগামী বছর বৈদেশিক ঋণ শোধের ক্ষেত্রে চাপ বাড়বে। কাজেই আমদানিনির্ভরতা কাটানোর জন্য ডলার আয়ের খাতকে চাঙা করার পদক্ষেপ নিতে হবে। বায়ার্স ক্রেডিটের নামে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কারসাজি করে অর্থ পাচারের চেষ্টা করে কি না, সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। কারসাজি করে কোনো মহল যাতে দেশে ডলার সংকট উসকে দিতে না পারে, কর্তৃপক্ষকে সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। ডলার খরচের বিষয়ে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতকেই সতর্ক হতে হবে।