ভাড়াটিয়া সেজে গৃহকর্ত্রীকে খুন, পরে মামলা তুলে নিতে হুমকি

২৩ আগস্ট, ২০২৫ | ৬:১৮ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

বাসা ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে কথা বলতে এসেছিলেন দুই নারী ও এক পুরুষ। প্রথম দিন এসে তারা বাসা দেখে পছন্দ হওয়ার কথা জানান। অগ্রিম ভাড়া হিসাবে ৫০০ টাকাও দেন। পরদিন এসে তারা গৃহকর্ত্রী হাসিনা বেগমের সঙ্গে গল্প জুড়ে দেন। সঙ্গে আনা বেল দিয়ে শরবত বানিয়ে খাওয়ান। চা পান করেন। শেষে তারা মালপত্র আনার কথা বলে চলে যান। এরপর হাসিনা বেগমকে বিছানায় অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। সোয়া দুই বছর আগে রাজধানীর বাসাবোর দক্ষিণগাঁও এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ-সংক্রান্ত মামলাটি এখন বিচারিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে অভিযোগপত্রভুক্ত ছয় আসামিই রয়েছে জামিনে। তারা বিভিন্ন সময়ে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য ভুক্তভোগী পরিবারকে দফায় দফায় হুমকি দিয়েছেন। এতে আতঙ্কে রয়েছে মৃতের পরিবার। হাসিনা বেগমের মেয়ে উম্মে কুলসুম বলেন, ‘২০২৩ সালের ৯ মে ওই ঘটনা ঘটে। বাড়ির সামনেই আমার বাবা ইউসুফ আলী একটি মুদি দোকান চালান। ঘটনার সময় তিনি দোকানেই ছিলেন। যে তিনজন ভাড়াটিয়া সেজে এসেছিলেন, তাদের দুজন নিজেদের স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দেন। আমাদের পরিবার পর্দানশীন হওয়ায় শুধু দুই নারী বাসার ভেতরে ঢোকেন, আর পুরুষটি দোকানে বাবার কাছে ছিলেন। বাসায় আসা দুই নারী আমার মায়ের চুলে মেহেদি লাগিয়ে দেন, শরবত বানিয়ে খাওয়ান। শরবত অবশ্য বাবাকেও খাওয়ানো হয়। তবে তাঁর গ্লাসে সম্ভবত ঘুমের ওষুধ মেশানো হয়নি।’ উম্মে কুলসুম বলেন, ‘এর পর দুপুরে গৃহকর্মী আমেনা বেগম বাসায় ঢুকে মাকে অচেতন অবস্থায় দেখেন। এরপর তিনি দোকানে গিয়ে বাবাকে বিষয়টি জানান। বাবা আমার বোনদের ফোন করে ঘটনার ব্যাপারে বলেন। তারা এসে প্রথমে মাকে স্থানীয় হাসপাতাল এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। ১০ জুন সকাল ৯টার দিকে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। মাঝে চিকিৎসায় জ্ঞান ফিরলেও মা কথা বলতে পারেননি। তবে ইশারা-ইঙ্গিতে ঘটনার কিছুটা বর্ণনা দিতে পেরেছিলেন।’ কুলসুম জানান, গত বছরের ৩০ জুন ছয় আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এর আগেই আসামিরা জামিনে বের হয়। তখন থেকে তারা মামলা তুলে নিতে চাপ দিতে শুরু করে। তাঁকে ও তাঁর বাবা ইউসুফ আলীকে ফোনে হুমকি দেওয়া হয়। এমনকি অপরিচিত দুজন সরাসরি দেখা করেও বলেন, ‘মামলা চালিয়ে কিছুই পাবেন না। তার চেয়ে কিছু টাকা নিয়ে মামলা তুলে নিন।’ তাদের কথা না শোনায় জামিনে থাকা আসামিরা কোনো ক্ষতি করতে পারে বলে আশঙ্কা কুলসুমের। স্ত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় ইউসুফ আলী বাদী হয়ে সবুজবাগ থানায় একটি মামলা করেন। তদন্তে নেমে জড়িত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলো– মো. রফিক, লিপি, কুলসুম, সীমা, বিল্লাল হোসেন ও মুক্তা বেগম। জিজ্ঞাসাবাদে তারা নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সবুজবাগ থানার তৎকালীন পরিদর্শক (বর্তমানে পিবিআই সদরদপ্তরে কর্মরত) আজগর আলী বলেন, আমি ছিলাম মামলাটির দ্বিতীয় তদন্ত কর্মকর্তা। দায়িত্ব নেওয়ার পর দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করি। এর আগে আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিদের মধ্যে বিল্লাল ও মুক্তা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, পরিকল্পিতভাবে তারা ওই বাসায় টাকা-গহনা লুট করতে যায়। তদন্ত কর্মকর্তা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা স্বীকার করে, বেশ কয়েক বছর ধরে তারা এমন কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল। এর আগে নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, ফেনী, খুলনা, ঢাকার ডেমরাসহ বিভিন্ন স্থানে একই কায়দায় গৃহকর্ত্রীকে অচেতন করে মালপত্র চুরি করেছে। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জহিরুল ইসলাম কাইয়ুম বলেন, এখন পর্যন্ত দুজনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। আসামিরা সবাই জামিনে রয়েছে। তাদের কাছ থেকে হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার।