দুই কর্মকর্তা বরখাস্ত, তদন্ত কমিটি গঠন

২১ আগস্ট, ২০২৫ | ৬:৩২ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজের ১০টি চাকা ‘চুরি’ করে একটি বেসরকারি এয়ারলাইন্সকে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বুধবার এই সিদ্ধান্তের পাশাপাশি গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। এর আগে সোমবার বিমানের সহকারী ব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) মোশারেফ হোসেন বিমানবন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এতে উল্লেখ করা হয়, ১৬ আগস্ট সন্ধ্যায় হ্যাঙ্গার কমপ্লেক্সের পাশের অকশন শেড থেকে বিমানের ১০টি ‘আনসার্ভিসেবল টায়ার’ খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে অনুসন্ধানে জানা যায়, এগুলো ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের এক কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়েছে, অথচ কর্তৃপক্ষকে তা জানানো হয়নি। বিমানের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রতিটি উড়োজাহাজের চাকার দাম ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার মার্কিন ডলার। সে হিসাবে ১০টির দাম প্রায় কোটি টাকা। ব্যবহৃত হলেও এগুলো সংস্থার সম্পদ, যা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার বাইরে অন্য কোথাও দেওয়া আইনত অপরাধ। চাকা চুরির ঘটনা সামনে এসেছে এমন এক সময়ে, যখন এক মাসের মধ্যে অন্তত আটবার বিমানের বোয়িং উড়োজাহাজে যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে চাকা ফেটে যাওয়া, টয়লেটের ফ্লাশ বিকল হওয়া এবং কারিগরি ত্রুটির কারণে ফ্লাইট বাতিল বা বিলম্ব। এসব ঘটনায় যাত্রী ভোগান্তি বাড়ছে এবং রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এদিকে চাকা চুরির ঘটনায় বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে কারিগরি ত্রুটির কারণ অনুসন্ধানে চার সদস্যের আরেকটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি কাজ করছে। জুলাই থেকে আগস্টের মধ্যে ঘটে যাওয়া সব কারিগরি সমস্যার রেকর্ড যাচাই করে দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করা হবে। বিমান জানিয়েছে, দায়বদ্ধতা নিশ্চিতের অংশ হিসাবে ইতোমধ্যে জনবল ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। দুজন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে, একজন প্রকৌশলীকে শাস্তিমূলক বদলি এবং আরেকজনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কারিগরি সক্ষমতা বাড়াতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক স্টেশনে (জেদ্দা, দুবাই, মদিনা, দাম্মাম, আবুধাবি ও শারজাহ) অতিরিক্ত চাকা মজুত রাখার উদ্যোগ নিয়েছে বিমান। এছাড়া প্রকৌশলীদের ‘রি-কারেন্ট’ প্রশিক্ষণ চালু হয়েছে এবং নতুন শিক্ষানবিশ মেকানিক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিমানের এক সাবেক কর্মকর্তা বলেন, চাকা চুরি ছোটখাটো ঘটনা নয়, বরং বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি। এ ধরনের অনিয়মের দ্রুত বিচার না হলে জাতীয় পতাকাবাহী সংস্থার ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বর্তমানে যাত্রীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা ও আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার চ্যালেঞ্জে রয়েছে। চাকা চুরির ঘটনায় বরখাস্ত ও তদন্ত প্রাথমিক পদক্ষেপ হলেও, ভবিষ্যতে বড় ধরনের সংস্কার ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার কঠিন হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিমানবন্দর থানার ওসি তাসলিমা আক্তার জানান, বিমানের পক্ষ থেকে উড়োজাহাজের চাকা সংক্রান্ত একটি জিডি করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।