তারাগঞ্জে শ্বশুর-জামাতাকে পিটিয়ে হত্যা

চোর সন্দেহে রংপুরের তারাগঞ্জে রূপলাল দাস ও তার ভাগনি জামাতা প্রদীপ দাসকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটে উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের বুড়িরহাট বটতলা এলাকায় শনিবার রাতে। নিহত রূপলালের বাড়ি তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুরে ও প্রদীপের বাড়ি মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়াভাটা গ্রামে। এ ঘটনার পর থেকে ঘনিরামপুরে রূপলালের বাড়িতে শোকের মাতম থামছে না। ছোট ভাঙাচোরা দুটি টিনের ঘর। বাস্তুভিটায় বাঁশের বেড়াঘেরা বাড়িই তার সম্বল। তার উপার্জনেই চলে বৃদ্ধা মা, স্ত্রী আর তিন সন্তান মিলে ছয় দস্যের পরিবার। এই অতিদরিদ্র পরিবারের বড় মেয়ে নূপুরের বিয়ের প্রস্তুতি চলছিল কয়েক দিন ধরে। ছোট ছেলে-মেয়ে দুটি স্কুল পড়ুয়া। সরেজমিন রোববার তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, উঠোনে দাঁড়িয়ে অঝোরে কাঁদছিল নূপুর রানী। তারই বিয়ের আয়োজন প্রস্তুতিতেই তছনছ হয়ে গেলে এ পরিবারের সবকিছু। হত্যা ঘটনার প্রতিবাদ ও জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে রোববার বিকাল ৬টায় রূপলালের লাশ নিয়ে এলাকাবাসী ঢাকা-দিনাজপুর মহাসড়ক অবরোধ করেন। রাত ৮টা পর্যন্ত এ সড়ক অবরোধের ফলে শত শত যানবাহন অটকা পড়ে। প্রথমে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে পরে সেনাসদস্যরা এসে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচারের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। লোকজনকে সরিয়ে সেনাবাহিনী সড়কে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করে। তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমএ ফারুক বলেন, এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক, যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ জানায়, রূপলালের মেয়ের বিয়ের আলাপ চলছিল মিঠাপুকুরের শ্যামপুরের লালচাঁদ দাসের ছেলে ডিপজল দাসের সঙ্গে। রোববার বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করার কথা ছিল। এ জন্য মিঠাপুকুর থেকে নিজের ভ্যান চালিয়ে প্রদীপ মামাশ্বশুর রূপলালের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। গ্রামের পথ ভুলে যাওয়ায় প্রদীপ সয়ার ইউনিয়নের কাজীরহাটে এসে রূপলালকে ফোন করেন। এরপর রূপলাল সেখানে গিয়ে দুজনে ভ্যান চালিয়ে ঘনিরামপুরের দিকে ফিরছিলেন। রাত ৯টায় তারাগঞ্জ-কাজীরহাট সড়কের বটতলা এলাকায় পৌঁছালে কয়েকজন যুবক ভ্যান পথরোধ করে। এ সময় তারা চিৎকার দিলে ওই যুবকরা তাদের দুজনকে পালটা চোর সন্দেহে মারধর ও চিৎকার করে লোক জড়ো কারে। তাদের ওপর হামলা চালিয়ে অহত করে। প্রত্যক্ষদর্শী পাশারিপাড়ার ভ্যানচালক আলমগীর হোসেন ও বুড়িরহাটের মেহেদী হাসান এ কথা জানান। উত্তেজিত লোকজন একপর্যায়ে প্রদীপের ভ্যানে থাকা বস্তা থেকে চারটি প্লাস্টিকের বোতল বের করেন। এতে লোকজনের সন্দেহ হয় ওই তরল জাতীয় পদার্থ চেতনানাশক দ্রব্য-তাই তাদের চোর সন্দেহে বেধড়ক মারধর করা হয়। বটতলা থেকে তাদের টেনে হিঁচড়ে বুড়িরহাট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে নিয়ে আসা হয়। এ সময় তারা দুজনেই অচেতন হয়ে পড়লে সেখানে তাদের ফেলে রাখা হয়। খবর পেয়ে পরে রাত ১১টায় তাদের উদ্ধার করে তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় পুলিশ। চিকিৎসক রূপলালকে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর অবস্থায় রাত ১২টায় প্রদীপকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। রোববার ভোররাতে তিনিও মারা যান বলে জানান রূপলালের ভাই খোকন দাস। নূপুর বলেন, রোববার তার বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করার কথা। এজন্য আত্মীয়তার সম্পর্কে দাদা তাদের বাড়িতে আসার পথে ওই ঘটনার শিকার হন বাবাসহ। খবর পেয়ে রাতে বুড়িরহাট গিয়ে বাবা-দাদাকে রক্তাক্ত অবস্থায় শনাক্ত করি। রূপলালের বৃদ্ধা মা লালিচা দাস সারাক্ষণ বিলাপ করছিলেন বাড়িতে বসে। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম রূপলালকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে পুরো পরিবার। এ ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। রোববার সকালে এ বিষয়ে মামলা করেছেন রূপলালের স্ত্রী মালতি রানী।