মৃত ব্যক্তির বটের উত্থান নিয়ে যত মুগ্ধতা ও ভয়

১১ আগস্ট, ২০২৫ | ৭:০৯ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম সিএনএন এর সাবেক হোয়াইট হাউস সংবাদদাতা জিম অ্যাকোস্টা সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারের ভিডিও প্রকাশ করেন। যেখানে তাঁর সঙ্গে অংশ নেয় জোয়াকিন অলিভার নামে এক কিশোর। যে ২০১৮ সালে একটি হাইস্কুলে বন্দুক হামলায় মারা যায়। সাক্ষাৎকারে অলিভারের অবয়ব তৈরি করা হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে। এআইয়ের মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির অবয়ব তৈরির এ ঘটনা দর্শকদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। কেউ কেউ আতঙ্কগ্রস্ত হওয়া কথা প্রকাশ করেন। তবে অলিভারের মা-বাবাই বলেছেন, বহুদিন পর সন্তানের কণ্ঠস্বর শুনতে পারাটা এক ধরনের আশীর্বাদ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে মৃত ব্যক্তিদের ভার্চুয়ালি ফিরিয়ে আনার এমন ঘটনা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দ্য গার্ডিয়ান। সেখানে বলা হয়েছে, মাত্র কয়েক বছর আগেও ‘ভার্চুয়াল অমরত্ব’এর ধারণা ছিল ভবিষ্যতবাণীর মতো। কিন্তু এখন তুলনামূলকভাবে সহজে ও কম খরচে মৃত ব্যক্তির প্রতিক্রিয়াশীল অবয়ব তৈরি করা সম্ভব। এর চাহিদাও বাড়ছে। মৃত ব্যক্তির অবয়ব এআইয়ের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার ঘটনা সবচেয়ে বেশি হইচই ফেলে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনার একটি কনসার্টে। যেখানে হঠাৎ করেই মঞ্চে আমন্ত্রণ জানানো হয় ওজি ওসবার্নকে। রকসংগীতের কিংবদন্তী শিল্পী ওসবার্ন গত জুলাইয়ে মারা গেছেন। গার্ডিয়ান বলছে, এ ধরনের ঘটনা হলো ‘ডিজিটাল পুনরুত্থান’। যেখানে ছবি, ভিডিও, ভয়েস মেসেজ ও অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার করে প্রয়াত ব্যক্তিদের ছবি ও বট তৈরি করা হয়। ‘ডেথবট’ নামের এ ধরনের বট তৈরিকারী কোম্পানির সংখ্যাও বেড়েছে। লন্ডনভিত্তিক সাইবার সাইকোলজিস্ট এলেইন ক্যাসকেট বলেন, চ্যাটজিপিটির মতো বড় ভাষা মডেল এখন সাধারণ মানুষের কাছে বেশ সহজলভ্য। এই ভাষা মডেলগুলো এমন কিছু তৈরি করতে সক্ষম যা খুবই বাস্তবসম্মত ও বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। যদি কোনো মৃত ব্যক্তির পর্যাপ্ত ডিজিটাল স্মৃতি; যেমন- লেখা, ইমেইল, ভয়েস নোট ও ছবি থাকে তাহলে এমন কিছু বানানো সম্ভব যা দেখে বাস্তবের মতো মনে হবে। খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীদের যুক্তরাজ্যভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক ২০২৩ সালে একটি জরিপ চালায়। ফলাফল অনুযায়ী, ১৪ শতাংশ উত্তরদাতা প্রয়াত প্রিয়জনের ডিজিটাল সংস্করণের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে সান্ত্বনা পাওয়ার কথা বলেছেন। ‘এআই অ্যান্ড দ্য আফটার লাইফ’ শিরোনামের একটি নিবন্ধের লেখক নাথান এমলাডিন বলছেন, এ ধরনের ঘটনা বাড়লে জীবিত ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীলতা কমার ঝুঁকি আছে। সবচেয়ে গুরুতর বিষয় হলো এটি এক ধরনের প্রতারণা। আপনি হয়তো ভাবছেন, একজন প্রয়াত মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন। আদতে আপনি একটি মেশিনের (ডেথবট) সঙ্গে আলাপ করছেন। শোকাহত মানুষরা বটের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে পারে, যা থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেওয়াটা ধীরে ধীরে কঠিন হবে। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মৃত ব্যক্তিদের ডিজিটাল ক্লোনের উত্থান শুরু হয়েছিল দূর প্রাচ্যে। চীনে মাত্র ২০ ইউয়ান খরচে প্রিয়জনের একটি ডিজিটাল অবতার তৈরি করা যায়। ২০২২ সালে এই বাজারের আকার ছিল ১২ বিলিয়ন ইউয়ান। চলতি বছর তা চারগুণে পৌঁছানোর আশা করা হচ্ছে। বিশেষ করে উন্নত মডেলের ডেথবট, যেগুলো নড়াচড়া করতে পারে এবং প্রতিক্রিয়াশীল। এগুলোর জন্য হাজার হাজার পাউন্ড পর্যন্ত খরচ হতে পারে।