ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক হলেও ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের সম্ভাবনা কম

ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরু হয় ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে। কিন্তু এটি এখনো থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতির মধ্যেই ক্রেমলিন নিশ্চিত করেছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে একটি বৈঠক হতে যাচ্ছে। কিন্তু এই দুই নেতার বৈঠক ইউক্রেনে দ্রুত যুদ্ধ বন্ধে কতটা কাজে দেবে? বিবিসি বলছে, মে থেকে জুলাইয়ের মধ্যে ট্রাম্পের উদ্যোগে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে তিন দফা আলোচনা হয়েছে। কিন্তু তা শান্তি স্থাপনের মতো সমাধান আনতে পারেনি। এখন ট্রাম্প হয়তো আশা করছেন, তিনি নিজে বিষয়টি হাতে নিলে শেষ পর্যন্ত একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানো সম্ভব হতে পারে। কিন্তু কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যকার বিভেদ এতটাই গভীর যে, ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় আলোচনাও সেই ফারাক মেটানো কঠিন করে তুলতে পারে। গত জুন মাসে রাশিয়া ইউক্রেনের উদ্দেশে একটি স্মারকলিপি প্রকাশ করে। এতে কি আছে সেটি দেখা যাক। স্মারকলিপিতে রাশিয়া বলেছে, সংঘাতের চূড়ান্ত সমাধান চাইলে ইউক্রেনের অঞ্চল ক্রিমিয়া, দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝিয়া ও খেরসনে রাশিয়ার সার্বভৌমত্ব মেনে নিতে হবে। এ ছাড়া, ইউক্রেনকে সামরিক নিরস্ত্রীকরণ, কোনো সামরিক জোটে না জড়ানো এবং নতুন করে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। রাশিয়ার রাজনৈতিক বিশ্লেষক তাতিয়ানা স্তানোভায়া বলছেন, এসব দাবি নানাভাবেই উপস্থাপন হতে পারে। কিন্তু ক্রেমলিনের মূল চাওয়াটা হলো, কিয়েভের আত্মসমর্পণ। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দূত স্টিভ উইটকফ ও পুতিনের মধ্যে বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, রাশিয়া কোন শর্তে যুদ্ধ শেষ করতে রাজি তা এখন ওয়াশিংটনের কাছেও স্পষ্ট হয়েছে। তাই, ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকে সম্মত হলেও, এটা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই যে মস্কো তাদের কঠিন পূর্বশর্তগুলো থেকে পিছু হটতে প্রস্তুত। তাহলে এই মুহূর্তে পুতিন আলোচনায় বসতে রাজি হচ্ছেন কেন? এর একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে—বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা। যুদ্ধ বন্ধে রাজি না হলে ট্রাম্প রাশিয়ার ওপর যেসব বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন তা আজ শুক্রবার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। মূলত, এটি কার্যকর হওয়া ঠেকাতেই একদিন আগে রাশিয়া আলোচনায় বসতে সম্মত হয়েছে। এছাড়া, ক্রেমলিন হয়তো মনে করছে, যুদ্ধ শেষ করার শর্তগুলোর যৌক্তিকতা ট্রাম্পকে বোঝাতে পারলে তাঁকে নিজেদের পক্ষে টানা যেতে পারে। সম্ভবত এ কারণেই কিয়েভ চায় যে যেকোনো যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত আলোচনায় ইউক্রেন সরাসরি অংশগ্রহণ করুক। যাতে ট্রাম্প পুতিনের প্রভাবের শিকার না হন। তবে ট্রাম্প একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের প্রস্তাব দিলেও পুতিন তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন। বলেছেন, এখনো এমন বৈঠকের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়নি। তাই ট্রাম্প-পুতিনের বৈঠক হলেও দ্রুত যুদ্ধবিরতি নিয়ে শঙ্কায় আছেন ইউক্রেনীয়রা। দেশটির সংসদ সদস্য ইরিনা হেরাশচেঙ্কো বলেন, বিষয়টি এখন স্পষ্ট। রাশিয়া মূলত ইউক্রেনের ভূখণ্ড নিয়ে নেওয়ার দাবি তুলবে। তাই আলোচনার টেবিলে কিয়েভের উপস্থিতিকে ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’ মনে করছে রাশিয়া। আর প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেন কোনো বৈঠককে ভয় পায় না। এমন সাহসিকতা তিনি রাশিয়ার কাছে থেকেও আশা করেন। এখন প্রশ্ন উঠছে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় রাশিয়া-ইউক্রেন ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হলে কি কোনো ফল আসবে? যুদ্ধবিরতির জন্য মস্কো যেসব শর্ত দিয়েছে, সেগুলো পূরণ করা ইউক্রেনের জন্য বেশ কঠিন। তাই জেলেনস্কি ও পুতিন বৈঠকে বসলেও ইতিবাচক ফল আসার সম্ভাবনা অনেক কম।