ইউনূস সরকার ব্যস্ত দমন-পীড়নে: বাজারে আগুন, ভোগান্তি চরমে

ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার কাগজে-কলমে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের নিচে দেখালেও জনজীবনে কোনো ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। বাজারে গেলে এখনও নাভিশ্বাস উঠছে নিত্যপণ্যের দামে। বিশেষ করে মৌলিক নিত্যপণ্য খাদ্য চাল ও মাছ এর লাগামছাড়া দামে বিপর্যস্ত নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি। তারা এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ ও হতাশ। সাধারণের প্রতিক্রিয়ায় উঠে এসেছে ক্ষোভের কথা। সরকারের দাবি, চলতি বছরের জুন মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ৮.৪৮ শতাংশে নেমেছে, খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখনো ৭.৩৯ শতাংশে। কিন্তু এসব ‘উন্নয়নমূলক’ পরিসংখ্যানগত সংখ্যা সাধারণ মানুষের জন্য তেমন অর্থ বহন করছেনা। কারণ, ভোক্তার প্রতিদিনের বাজার খরচে সবচেয়ে বেশি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে চাল, মাছ, তরি-তরকারিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক দাম। আয়ের বেশিরভাগই চলে যাচ্ছে তাতে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) বলছে, চাল ও মাছ মিলেই খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে ৮৩ শতাংশ অবদান রাখছে। এর মধ্যে চাল একাই দিয়েছে ৫০.৭৬ শতাংশ অবদান। মাঝারি ও মোটা চালের মূল্যবৃদ্ধি গত ১২ মাসে গড়ে ১৫ শতাংশ ছুঁয়েছে। অথচ বোরো মৌসুমে ভালো ফলন হলেও তার কোনো সুফল ভোক্তা পায়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা, সরবরাহ শৃঙ্খলার ঘাটতি এবং মজুদদারদের লাগামহীন দৌরাত্ম্যই এই সংকটের মূল কারণ। সারের দাম, সেচ খরচ ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি চাল উৎপাদনের সময় প্রায় ২৬ শতাংশ ক্ষয় এবং মজুদদারদের অতি মুনাফার আশাই চালের বাজারকে অস্থির করে রেখেছে। সরকরাও তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি। তারা কথিত ফ্যাসিস্ট দল আওয়ামী লীগকে দমন পীড়ন নিয়েই ব্যস্ত। মাছের বাজারেও একই চিত্র। শুধু রাজকীয় ইলিশ কিংবা ব্রাত্য পাঙ্গাশ নয়, সব মাছের দামই আকাশছোঁয়া। জিইডির তথ্য অনুযায়ী, মাছের মূল্যস্ফীতিতে অবদান ৩২.৩৭ শতাংশ যার মধ্যে শুধু ইলিশই দায়ী ১৫.৮৮ শতাংশের জন্য। অন্যদিকে, সবজির দাম স্থির থাকলেও (গড়ে ৬.৫ শতাংশ), টমেটো, বেগুন, দুধ ও সয়াবিন তেলের দাম বাড়তি থাকায় বাজারে কোনো স্বস্তি নেই। অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে বলছেন কাগজে-কলমে মূল্যস্ফীতি কমলেও জনগণের ভাতের পাতে সেই স্বস্তিটা নেই। মূল সমস্যা এখন বাজারের ভিতরে যেখানে সরকারের নিয়ন্ত্রণ নীতির ঘাটতি স্পষ্ট। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক ১০ শতাংশ রেপো রেট ধরে রেখেছে, টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল এবং চাহিদা নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তবে সাধারণ মানুষের জন্য এসবই শুধুই পরিসংখ্যানের খেলা। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, তাদের দৈনন্দিন খরচ আরও বেড়েছে। খাদ্যবহির্ভূত খাতেও ব্যয় বাড়ছে; অ্যালকোহল ও তামাক (১৭.৫৫ শতাংশ), পোশাক ও পাদুকা (১৫.৪০ শতাংশ), রেস্তোরাঁ ও হোটেল খাত (১১.০৯ শতাংশ) এবং বিবিধ পণ্যে (১৫.২৫ শতাংশ) দুই অঙ্কের মূল্যবৃদ্ধি দেখা গেছে। সব মিলিয়ে, বর্তমান সরকারের সময়ে সাধারণ মানুষ এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি যেখানে পরিসংখ্যানে উন্নয়ন দেখানো হলেও তাদের প্রতিদিনের খাবার টেবিলে সেই উন্নয়নের ছোঁয়া নেই। মূল্যস্ফীতি কমানোর যত কৌশলই নেওয়া হোক না কেন, বাজারে সুশাসন ও মজুদদারির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে, জনগণের কষ্ট কেবল বাড়বেই বলে মনে করছেন সুধীজন।