দলীয় নেতার যৌন কুপ্রস্তাবের পর এবার দুর্ণীতির অভিযোগে এনসিপি ছাড়লেন নীলা ইসরাফিল

২৯ জুলাই, ২০২৫ | ৫:৪৫ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে পদত্যাগ করেছেন দলটির আলোচিত নেত্রী ও ধানমন্ডি থানার প্রতিনিধি নীলা ইসরাফিল। সোমবার দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি দলটির বিরুদ্ধে নৈতিক সঙ্কট, অনৈতিক সিদ্ধান্ত ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির অভিযোগ তুলে সংগঠন ছাড়ার ঘোষণা দেন। স্ট্যাটাসে নীলা লিখেছেন, “আমি নৈতিকতা বেছে নিয়েছি, দুর্বৃত্ত রাজনীতি নয়। এনসিপির নেতৃত্বে আস্থার ঘাটতি, অপরাধীদের পুনর্বাসন এবং আদর্শচ্যুতি আমাকে সরে যেতে বাধ্য করেছে।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, দলটির অভ্যন্তরে শৃঙ্খলার অভাব রয়েছে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে একটি বিশেষ গোষ্ঠী কর্তৃত্ব বজায় রাখছে। তাঁর ভাষায়, “নেতৃত্বে যখন অনৈতিক ও দুর্নীতিগ্রস্তরা স্থান পায়, তখন রাজনৈতিক সংগঠন আদর্শ হারায়।” নীলা বলেন, “আমি এমন কোনো রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে থাকতে চাই না, যারা অপরাধীদের আশ্রয় দেয় এবং ন্যায়ের বিপরীতে অবস্থান নেয়।” তবে তিনি রাজনীতি থেকে পুরোপুরি সরে যাচ্ছেন না জানিয়ে উল্লেখ করেন, আদর্শ, নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের প্রশ্নে আপসহীন অবস্থান বজায় রাখবেন। যৌন হয়রানির অভিযোগে দলের ভেতরে উত্তাপ পদত্যাগের আগে, ২৬ জুন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির লিখিত অভিযোগ করেন নীলা ইসরাফিল। দলের গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে জমা দেওয়া অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, তুষার বারবার রাতে ফোন করে আপত্তিকর ভাষায় কথা বলতেন, ছবি ও ভিডিও কলে কথা বলার জন্য চাপ দিতেন। অভিযোগপত্রে নীলা জানান, “২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সহিংসতার শিকার হওয়ার পর বাংলাদেশ ত্যাগ করে নেপালে যাই। তখন সারোয়ার তুষারসহ অনেকে মানবিক সহায়তা করেছিলেন। সেই আস্থার জায়গা থেকেই রাজনৈতিক যোগাযোগ রাখি। কিন্তু পরবর্তীতে তুষার সেই সম্পর্ককে বিকৃত করে ব্যক্তিগত ও অনৈতিক রূপ দিতে চায়।” তিনি জানান, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে তুষারের সঙ্গে কয়েকটি ফোনালাপ রেকর্ড করেন। এর একটি ক্লিপ ১৬ জুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর তুষার চাপ দিতে থাকেন যাতে তিনি ফেসবুকে লিখে দেন—“তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।” তখন আরও দুটি ফোনালাপ রেকর্ড করে তা মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রচারের সিদ্ধান্ত নেন নীলা। দলের নিরবতা ও ‘সহানুভূতির অভাব’ অভিযোগের পর এনসিপি নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন নীলা ইসরাফিল। তাঁর অভিযোগ, “এই সংকটকালে দলের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সহানুভূতি, নিরাপত্তা বা লিখিত বিবৃতি পাওয়া যায়নি। বরং ১৯ জুন শুধু একটি লিখিত অভিযোগ চাওয়া হয়। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে কোনো দায়িত্বশীল পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।” তিনি দাবি করেন, সারোয়ার তুষারের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও নারীবান্ধব তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। একইসঙ্গে, নারী কর্মীদের জন্য একটি কার্যকর ও নির্ভরযোগ্য অভ্যন্তরীণ অভিযোগ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া চালু করার দাবিও জানান। নীলার এই পদত্যাগ এনসিপির ভেতরে আলোচনার ঝড় তুলেছে। অনেকেই এটিকে নেতৃত্বের প্রতি প্রকাশ্য অনাস্থা হিসেবে দেখছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ও কিছু বিতর্কিত ব্যক্তিকে দলে অন্তর্ভুক্তির প্রেক্ষাপটে এই পদত্যাগ দলটির ভাবমূর্তি ও ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কৌশলে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।