তাইওয়ানে চীনপন্থী রাজনীতিবিদদের সরানোর প্রচেষ্টা ব্যর্থ, সবাই আসনে বহাল

২৮ জুলাই, ২০২৫ | ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

তাইওয়ানে চীনঘেঁষা বলে অভিযুক্ত রাজনীতিবিদদের সরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠিত এক নজিরবিহীন গণভোটে সবাই তাঁদের আসন টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। শনিবার অনুষ্ঠিত এই ভোটে প্রাথমিক ফলাফল অনুযায়ী, কোন কুয়োমিনতাং (কেএমটি) সংসদ সদস্যকেই অপসারণ করা সম্ভব হয়নি। এই উদ্যোগকে তাইওয়ানে ‘ডাবামিয়ান’ বা ‘মহা প্রত্যাহার’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এটি মূলত একটি নাগরিক আন্দোলনের মাধ্যমে শুরু হয়, যার লক্ষ্য ছিল এমন রাজনীতিবিদদের অপসারণ করা যাঁরা চীনের প্রতি অতিমাত্রায় সহানুভূতিশীল বলে অভিযোগ ছিল। ২৪টি নির্বাচনী এলাকায়, যেগুলোর সবই কেএমটির দখলে, ভোটাররা হ্যাঁ বা না—এই দুই বিকল্পের মধ্যে একটি বেছে নেওয়ার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত জানান যে তাঁরা তাঁদের সাংসদকে সরাতে চান কি না। প্রতিটি এলাকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার ‘না’ ভোট দেওয়ায় কোনো সাংসদই অপসারিত হননি। এই ভোটের ফলাফল তাইওয়ানের রাজনৈতিক ভারসাম্যে বড় পরিবর্তন আনতে পারত, যেখানে ডেমোক্র্যাটিক প্রোগ্রেসিভ পার্টি (ডিপিপি) সরকার এবং কেএমটি ও তার মিত্রদের নিয়ন্ত্রিত সংসদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে অচলাবস্থা চলছিল। তবে এই ফলাফলে বিরোধী দল তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে পেরেছে। আগস্ট মাসে আরও সাতটি আসনে দ্বিতীয় ধাপের ‘প্রত্যাহার ভোট’ হওয়ার কথা রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ায় তাইওয়ানের রাজনৈতিক মেরুকরণ আরও গভীর হতে পারে এবং বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদরা জনগণের একটি বড় অংশের বিরোধিতা সত্ত্বেও নিজেদের ইচ্ছেমতো পদক্ষেপ নিতে আরও উৎসাহিত হতে পারেন। মহা প্রত্যাহার আন্দোলন তাইওয়ানে তীব্র মতবিরোধ তৈরি করেছে। ডিপিপি সমর্থিত ব্লুবার্ড আন্দোলনের কর্মীরা কেএমটি-র বিরুদ্ধে চীনের প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ এনেছে। তারা দাবি করেছে, কেএমটি সাংসদরা মূলত বেইজিংয়ের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছেন। এই প্রেক্ষাপটে, নাগরিক গোষ্ঠীগুলি ৩১ জন কেএমটি আইনপ্রণেতার বিরুদ্ধে স্বাক্ষর সংগ্রহ করে গণভোটের পর্যায়ে নিয়ে যায়। যদিও কেএমটি পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে কিছু ডিপিপি সদস্যের বিরুদ্ধেও একই ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়েছিল, কিন্তু সেই প্রচেষ্টা গণভোট পর্যন্ত পৌঁছায়নি। ভোটার উপস্থিতি এই ভোটে সফলতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ প্রত্যাহার কার্যকর হতে হলে অন্তত নিবন্ধিত ভোটারের ২৫ শতাংশের অংশগ্রহণ এবং এর মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠের অনুমোদন প্রয়োজন। সামাজিক মাধ্যমে এবং সড়কে প্রচারণা চালিয়ে ‘প্রত্যাহারপন্থী’ গোষ্ঠীগুলি জনমত গঠনের চেষ্টা করে, অন্যদিকে কেএমটি ও তার মিত্ররা ভোটারদের ‘না’ ভোট দেওয়ার আহ্বান জানায়। কেএমটির দাবি, এই পুরো আন্দোলনের পেছনে ডিপিপির ষড়যন্ত্র রয়েছে। প্রথমে ডিপিপি মহা প্রত্যাহার থেকে দূরত্ব বজায় রাখলেও পরে তারা আন্দোলনকে সমর্থন জানায়। প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম লাই বলেন, “জনগণের শক্তির সঙ্গে আমাদের একত্রিত হতে হবে,” এবং পার্টির কর্মকর্তাদের আন্দোলনকারীদের সহায়তা করার নির্দেশ দেন। এদিকে চীনও এই ঘটনাপ্রবাহে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। তাদের তাইওয়ান অ্যাফেয়ার্স অফিস প্রেসিডেন্ট লাই-এর বিরুদ্ধে ‘গণতন্ত্রের নামে স্বৈরতন্ত্র’ চালানোর অভিযোগ এনেছে এবং বিরোধীদলকে দমন করতে সব উপায় ব্যবহারের কথা বলেছে। তাইওয়ানের এই অভূতপূর্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভবিষ্যতে দ্বীপের গণতন্ত্র ও চীন-সম্পর্ককে কীভাবে প্রভাবিত করবে, তা নিয়ে জোরালো আলোচনা চলছে।