মাস্ক-হেলমেটে মুখ ঢেকে আওয়ামী লীগের মিছিলে কী করছিলেন জামায়াতকর্মী ও বৈছা নেতা?

সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলায় রাতের আঁধারে হেলমেট ও মাস্কে চেহারা ঢেকে একটি মিছিলের ভিডিও দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। মিছিল থেকে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে স্লোগানও দেওয়া হয়। স্লোগানের ভাষাও ছিল উস্কানিমূলক। দেখে মনে হওয়া স্বাভাবিক এটা আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল। ইউনূস সরকার এবং তার দোসর বিএনপি ও যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ডাক দেওয়া মিছিলের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। গত ১৬ই জুলাই গভীর রাতে দেবহাটা উপজেলার সখিপুর ইউনিয়নের চিনেডাঙ্গা এলাকায় এই মিছিলটি হয়। সে রাতেই ভিডিওটি ফেসবুকে পোস্ট করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র (বৈছা) আন্দোলনের দেবহাটা উপজেলা আহ্বায়ক মুজাহিদ বিন ফিরোজ। সঙ্গে তিনি আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে হুমকিও দেন এভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের জন্য। তাদেরকে দমনের জন্য তিনি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের পাশাপাশি এই মিছিলে কারা কারা জড়িত থাকতে পারে, তাদের নামও উল্লেখ করেন। কিন্তু প্রবাদে আছে, চোর যতই চালাক হোক না কেন, ঘটনাস্থলে সূত্র রেখে যায়। স্থানীয়রা এবং বৈছা কর্মীদের চোখে ধরা পড়ে যান হেলমেট ও মাস্ক পরে খোদ যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপির নেতা মুজাহিদ বিন ফিরোজই মিছিলে উপস্থিত। তার সঙ্গে একই মিছিলে রয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর রোকন সোলায়মান হোসেন। মুজাহিদ বিন ফিরোজ রাতে যে ভিডিও পোস্ট করেন, সেটি ছিল কিছুটা অস্পষ্ট। এডিট করে অন্ধকার কিছুটা গাঢ় করে এবং ব্লার করা হয়েছিল। তবে মিছিলের স্লোগান স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। পরে একই মিছিলের আরেকটি স্পষ্ট ভিডিও সামনে চলে আসে। সেখানে মুজাহিদ ও সোলায়মানের উপস্থিতি স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে যায়। এ নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে। সাধারণ মানুষও মুখ খোলেন। তারা বলেন, ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের ভেতরে এভাবে জামায়াতের লোকজন ঘাপটি মেরে থেকে সকল অপকর্ম করত, দোষ চাপত আওয়ামী লীগের নেতাদের ওপর। ৫ই আগস্টের পর যখন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগসহ অঙ্গ-সংগঠনের লোকজন এলাকাছাড়া, তখন তাদের নির্মূলের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে জামায়াত-শিবির ও এনসিপি একই কাজ করে যাচ্ছে। নিজেরা মিছিল বের করে আওয়ামী লীগের ওপর দোষ চাপাতে চাইছে। এদিকে, ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় দলের পিঠ বাঁচাতে সোলায়মানের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতে ইসলামী। সাতক্ষীরা জেলা শাখার বৈছা আহ্বায়ক মো. আরাফাত হোসাইন বলেন, দায়িত্বশীল পদে থেকেও তিনি (মুজাহিদ) একাধিকবার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন। আগেও তাকে সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো পরিবর্তন না আসায় সংগঠনের স্বার্থে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা কীভাবে একইসাথে এনসিপিতে যুক্ত? এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান আরাফাত। দেবহাটা উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির অলিউল ইসলাম স্বীকার করতে বাধ্য হলেন, ওই মিছিলে থাকা অন্যরা জামায়াতকর্মী বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। সোলায়মান জামায়াতের রোকন। দলীয় নিয়ম-নীতি অনুযায়ী বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি এবং যথাযথ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা জামায়াতের এক নেতা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে এ ব্যাপারে জেলা কমিটির কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। জামায়াতকর্মী মুজাহিদের বিরুদ্ধে এর আগেও নানা অভিযোগ ছিল। এ ব্যাপারে জানতে মুজাহিদ বিন ফিরোজ ও সোলায়মান হোসেনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে উভয়েরই বন্ধ পাওয়া যায়।