বৈছা নেতা রিয়াদের আঙুল ফুলে বটগাছ: বাবা-দাদা রিকশাচালক, উঠছে আলিশান বাড়ি

২৮ জুলাই, ২০২৫ | ৫:৪১ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

গুলশানে আওয়ামী লীগের এক নারী সংসদ সদস্যের বাসায় গ্যাংসহ কোটি টাকা চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গ্রেপ্তার আবদুর রাজ্জাক বিন সোলায়মান ওরফে রিয়াদের আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। রিয়াদের স্থায়ী নিবাস নোয়াখালীর সেনবাগে উঠছে আলিশান বাড়ি। আড়াই মাস আগে যার নির্মাণকাজ শুরু হয়। গত সপ্তাহে হয়েছে ছাদ ঢালাইয়ের কাজও। এসব নিয়ে হতবাক গ্রামের লোকজন। যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরাতো, তাদের এই অবস্থা কী করে? কোন আলাদিনের চেরাগ পেয়েছে রিয়াদ? এমন প্রশ্ন সবার মুখে মুখে। সেনবাগের নবীপুরে গিয়ে দেখা যায়, পাকা দালান তৈরির কাজ চলছে পুরোদমে। চারদিকে হাঁকডাকে সরগরম। মিস্ত্রিরা ছুটছে ইট-বালি-পাথর নিয়ে। রড কাটা হচ্ছে, কংক্রিট মিক্সার মেশিনে ঢুকছে একের পর এক সিমেন্টের বস্তা। রিয়াদের গ্রামের স্থানীয়রা বলেন, আর্থিক অনটনে বেড়ে ওঠা এক ছাত্রের বাড়িতে হঠাৎ পাকা দালান নির্মাণ নিয়ে এলাকায় চলছে নানা আলোচনা। চাঁদাবাজির ঘটনায় রিয়াদের গ্রেপ্তারের পরেই আলোচনা আরও তুঙ্গে ওঠ। যদিও পরিবারের দাবি, তাদের জমানো টাকা, অনুদান ও ঋণ নিয়ে বাড়িটি নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু এত টাকা কীভাবে জমলো এমন দরিদ্র পরিবারের, সে বিষয়ে কেউ কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। রিয়াদদের নির্মাণাধীন বাড়ির পাশেই চাচা জসিম উদ্দিনের জরাজীর্ণ টিনের ঘর। পশ্চিমে আরেক চাচার একইরকম ঝুপড়ি ঘর। অর্থাৎ পুরো পরিবার এবং আত্মীয়স্বজনদের অবস্থা দুর্দশাগ্রস্ত। চাচা জসিম উদ্দিন জানান, দুই মাস আগে রিয়াদ বাড়ি নির্মাণের কাজে হাত দিয়েছে। আগে ভাঙাচোরা টিনের ঘর ছিল। সেখানে নতুন বাড়ি উঠছে। রিয়াদের মা-বাবা এখন অস্থায়ীভাবে অদূরেই একটি ঘর ভাড়া নিয়ে রয়েছেন বাড়ির কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত। চাচী জানালেন, রিয়াদের বাবা এবং দাদা রিকশা চালাতেন। তবে ইদানিং তার বাবা আর রিকশা চালান না। ছেলে নেতা হয়েছে তাই বাবা রিকশা চালালে ইজ্জত থাকে না। রিয়াদ ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে বলে শুনেছেন স্বজনরা। কেউ কেউ বলেন বিদেশিরা রিয়াদকে টাকা দিয়েছে তাই এখন সে প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে। গ্রামের লোকজন জানান ৫ই আগস্টের পরই তার কপাল খুলেছে সমন্বয়ক হয়ে। কিছুদিন পরপর বাড়িতে আসে, তখন অনেকেই দেখা-সাক্ষাৎ করতে আসে। দুই মাস আগে জরাজীর্ণ ঘর ভেঙে পাকা বাড়ির কাজে হাত দিয়েছে রিয়াদ। বাবা রিকশাচালক আবু রায়হান গণমাধ্যমকর্মীদের দেখে ঘাবড়ে যান। ঠেলে সামনে পাঠিয়ে দেন রিয়াদের মা রেজিয়া বেগমকে। তিনি বললেন তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। ছোট ছেলে রিয়াদ ঢাকায় একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। বড় ছেলের ব্যাপারে প্রথমে বললেন ঢাকায় একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে। পরক্ষণে বললেন ফুটপাতে ব্যবসা করে। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন বলে জানান। রেজিয়া বেগম আমতা আমতা করে বললেন, মানুষের কাছ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা আর স্বামীর আয়ের টাকায় ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন। ছেলে টিউশনি করে, পড়ার খরচ নিজে চালায়। বাড়ি কীভাবে করছেন প্রশ্নের জবাবে তার দাবি, বাড়ির জন্য বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নিয়েছেন, স্বামীর জমানো টাকাও ব্যবহার হচ্ছে। কিছু ধারদেনাও করেছেন। গত বছর বন্যায় ঘর নষ্ট হয়ে যায় উল্লেখ করে রেজিয়া বেগম বলেন, বন্যার পর ইউনূস সরকার চার বান্ডিল ঢেউটিন দেয়, যা তিনি বিক্রি করে দিয়েছেন। আল-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন থেকে ৫০ হাজার টাকা পেয়েছেন। সেই টাকাও বাড়ি নির্মাণের কাজে খরচ করছেন। যদিও ঋণ নেওয়ার কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি রেজিয়া বেগম। এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, রিয়াদের টাকাতেই পাকা দালান নির্মাণ হচ্ছে। তবে প্রতিবাদ করে রেজিয়া বেগম বলেন, রিয়াদ কীভাবে টাকা দেবে? তাকেই উল্টো প্রতি মাসে টাকা পাঠাতে হয়। সে টিউশনি করে। আত্মীয়স্বজন তাকে সহযোগিতা করে। রিয়াদের টাকায় বাড়ি নির্মাণ হচ্ছে না। আত্মীয়স্বজনের বাড়িঘরই তো ভাঙাচোরা, দিনে আনে দিনে খায় অবস্থা; তারা কীভাবে সাহায্য করছেন আপনাকে? কিসের প্রত্যাশায়? এমন প্রশ্নের উত্তর দেননি রেজিয়া বেগম। স্থানীয় বাসিন্দা জোবায়ের হোসেন জানান, তিনি তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলের মারফতে জেনেছেন রিয়াদ ঢাকার প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির ছাত্র। তবে কোন বিভাগ-কোন সেমিস্টারে, তা জানেন না। শুনেছেন ৫ই আগস্টের পর সে সমন্বয়ক হয়েছে। ঢাকায় নাকি সে অনেক বড় নেতা। বছর না ঘুরতেই পাকা বাড়ি করছে। এসব নিয়ে এলাকার মানুষজনের আলোচনা শুনছেন তিনি। রিয়াদদের হঠাৎ অবস্থার এমন পরিবর্তনে সবাই হতবাক বলে জানান মো. সোহেল। বলেন, শুনেছি রিয়াদ কোটি কোটি টাকার মালিক। আন্দোলন করে তার অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। গ্রামে পাকা বাড়ি উঠছে। তার বাবা রিকশা চালাত, অথচ সে নিজেই এখন দামি বাইক নিয়ে ঘোরে। আরেক গ্রামবাসী রবিউল ইসলাম বলেন, একটা ছাত্র কী করে এত টাকার মালিক হতে পারে ভেবে কূল পাই না! এখন চাঁদাবাজির ঘটনায় গ্রেপ্তার হলো। টাকার উৎস তাহলে এসব ধান্দাবাজি! সরেজমিনে দেখা যায়, রিয়াদদের ভিটায় যে বাড়ির কাজ চলছে, তার আয়তন ন্যূনতম ১ হাজার বর্গফুট হতে পারে। এই আকারের একটি বাড়ির আনুমানিক খরচ সম্পর্কে প্রকৌশলীরা বলেন যতটা কাজ হয়েছে, শুধু তাতেই ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা খরচ হওয়ার কথা। আর যদি পুরো বাড়ি টাইলসসহ সাধারণ ফিটিংসসহ করা হয়, তবে আরও কমপক্ষে ৬ থেকে ৮ লাখ টাকা খরচ হবে। রিয়াদের সহপাঠী হৃদয় জানান, তারা একইসাথে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। রিয়াদ এইচএসসির পর ঢাকায় ভর্তি হয়েছে। শুনেছেন সেখানে রাজনীতি করে। ৫ই আগস্টের পর সমন্বয়ক হয়েছে। চাঁদাবাজিতে গ্রেপ্তার গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রিয়াদ বৈছা আন্দোলনের ঢাকা মহানগরের সিনিয়র সংগঠক। এবং এর আগে ছিলেন বৈছার সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের আহ্বাক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়কও। এছাড়া, রিয়াদ পুলিশ সংস্কার কমিশনেরও সদস্য বলে জানান এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব মাহিন সরকার। শনিবার রাতে গুলশানে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসা থেকে রিয়াদসহ বৈছার ৫ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় গুলশান থানায় করা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।