সারাদেশে বৈছার সব কমিটি বিলুপ্ত: গুলশানে চাঁদাবাজির ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত

২৮ জুলাই, ২০২৫ | ৫:৩৮ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ব্যতীত সারাদেশের সকল কমিটি বিলুপ্ত করার ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। গতকাল (২৬ জুলাই ২০২৫) রাজধানীর গুলশানে সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগে সংগঠনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক বিন সোলায়মান রিয়াদসহ পাঁচজন হাতেনাতে গ্রেফতার হওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই ঘটনা সংগঠনের ভাবমূর্তিতে গুরুতর আঘাত হানার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ও মতবিরোধের ইঙ্গিত দিচ্ছে। গুলশানে চাঁদাবাজির ঘটনা পুলিশ ও গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৬ জুলাই সন্ধ্যায় গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডে শাম্মী আহমেদের বাসায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ে পাঁচজন ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এর আগে তারা একই বাসা থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়েছিল বলে অভিযোগ। ঘটনার দিন তারা স্বর্ণালঙ্কার আনতে গেলে বাড়ির লোকজন গুলশান থানা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে রিয়াদসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন: আব্দুর রাজ্জাক বিন সোলায়মান রিয়াদ (যুগ্ম আহ্বায়ক, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা) এবং তার সহযোগী চারজন, যারা সকলেই প্রাইভেট বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র। রাজ্জাক বিন সোলায়মান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রানালয়ের ছাত্র প্রতিনিধি হিসাবেও নিযুক্ত ছিলেন। এই ঘটনার পরপরই আজ (২৭ জুলাই ২০২৫) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এক বিবৃতিতে সারাদেশের সকল কমিটি (কেন্দ্রীয় কমিটি ব্যতীত) স্থগিত করার ঘোষণা দেয়। সংগঠনের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সংগঠনের নামে অপকর্ম ও শৃঙ্খলাভঙ্গের ঘটনা রোধে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” এই ঘোষণাকে অনেকে সংগঠনের অভ্যন্তরীণ সংকট নিয়ন্ত্রণের তড়িঘড়ি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন। গুলশানের ঘটনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বিরুদ্ধে উঠা প্রথম অভিযোগ নয়। এর আগে ২০২৫ সালের মার্চে পিরোজপুরে একটি মডেল মসজিদে হামলা ও ৫ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় সংগঠনের একজন সমন্বয়ক গ্রেফতার হন। এপ্রিলে কুড়িগ্রামে একজন নেতার বিরুদ্ধে অপহরণ ও ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতারের ঘটনাও সংবাদ শিরোনামে এসেছিল। এছাড়া, মে মাসে রংপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বাসভবনে হামলা ও মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়ার ঘটনায়ও সংগঠনের নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছিল। বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সংগঠনের নামে চাঁদাবাজি, স্বেচ্ছাচারিতা ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের হেনস্তার অভিযোগে ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ জন সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়ক পদত্যাগ করেছেন। এই অভিযোগগুলো সংগঠনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান মতবিরোধ ও নৈতিক স্খলনের ইঙ্গিত দেয়। গুলশানের ঘটনার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ পৃথক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অভিযুক্ত পাঁচজনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুঈনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “অভিযুক্তদের কর্মকাণ্ড সংগঠনের নীতিমালা ও শৃঙ্খলার পরিপন্থী। তাদের সঙ্গে কোনো সাংগঠনিক সম্পর্ক রাখা হবে না।” বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ২০২৪ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও, সাম্প্রতিক এসব ঘটনা সংগঠনের বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর প্রশ্ন তুলেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সংগঠনের নামে অপকর্ম ও মবের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগগুলো দ্রুত তদন্ত ও স্বচ্ছ বিচারের মাধ্যমে সমাধান না করা হলে এটি সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমর্থন হারাতে পারে। গ্রেফতারকৃত রিয়াদের রাজনৈতিক গুরু হিসেবে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নাম সামনে এসেছে । এই ধরনের অভিযোগগুলো সংগঠনের অভ্যন্তরীণ গঠন ও নেতৃত্বের ওপর আরও প্রশ্ন তুলছে। গুলশানে চাঁদাবাজির ঘটনা ও তার পরিপ্রেক্ষিতে সকল কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জন্য একটি গুরুতর সংকটের ইঙ্গিত দেয়। সংগঠনটির নেতৃত্ব এখন এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারবে কিনা, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এই ঘটনা সংগঠনের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ও নৈতিক অবস্থানের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।