জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনের শর্তে জাতীয় নিরাপত্তা হুমকিতে, সমালোচনার ঝড়

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশন বাংলাদেশে আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপনের জন্য যে নিরাপত্তা শর্তাবলী প্রস্তাব করেছে, তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে দেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও কূটনৈতিক মহলে। বিশেষত সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই-এর কার্যক্রম সীমিত করা এবং শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণে আপাত স্থগিতাদেশের আহ্বানকে জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। জাতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষণ ও কৌশল গবেষণা কেন্দ্র (এনএসএএসসি) এক বিবৃতিতে জানায়, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের ৬৪ ও ৬৫ নম্বর শর্তাবলী বাংলাদেশকে একটি নিরপেক্ষ ও স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে দাঁড় করানোর পরিবর্তে বরং বিদেশি চাপ ও নির্ভরশীলতায় ঠেলে দিচ্ছে। ডিজিএফআই-এর ক্ষমতা হ্রাসের প্রস্তাব অগ্রহণযোগ্য জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের ৬৪ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ডিজিএফআই-এর কার্যক্রম শুধুমাত্র সামরিক গোয়েন্দা তথ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে এবং এর সম্পদ ও আইনগত ক্ষমতা সীমিত করতে হবে। এ বিষয়ে এনএসএএসসি-এর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, “এই প্রস্তাব সরাসরি দেশের নিরাপত্তা কাঠামো দুর্বল করার প্রচেষ্টা। ডিজিএফআই দেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এর কার্যক্রম সংকুচিত করা মানে দেশকে নিরাপত্তাহীন করে তোলা।” শান্তিরক্ষা মিশনে নিষেধাজ্ঞা অপমানজনক ৬৫ নম্বর ধারায় বাংলাদেশি সেনাদের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যতক্ষণ না একটি স্বাধীন মানবাধিকার যাচাই ব্যবস্থা গঠন করা হয়। এ বিষয়ে প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, “বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা দীর্ঘদিন ধরে জাতিসংঘ মিশনে সাহস, পেশাদারিত্ব ও মানবিকতার জন্য প্রশংসিত হয়ে আসছে। এই ধরনের প্রস্তাব আমাদের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।” কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও সুপারিশ বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতিসংঘের যেকোনো সহযোগিতামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তার নীতিমালার ভিত্তিতে হওয়া উচিত। তারা সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে জাতীয় স্বার্থে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা শর্তগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করছি। জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তা সর্বাগ্রে বিবেচনায় থাকবে।”