ঐক্যের ডাক জাপার ‘বিভক্ত’ নেতাদের

১৫ জুলাই, ২০২৫ | ৫:৩৮ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রতিষ্ঠাতার স্মরণসভায় এক মঞ্চে বসে ঐক্যের ডাক দিলেন বিভিন্ন সময়ে জাপা থেকে বের হয়ে যাওয়া নেতারা। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সোমবার গুলশানে হয় এ স্মরণসভা, যেখানে উপস্থিত ছিলেন সপ্তাহ খানেক আগে অব্যাহতি পাওয়া একাধিক নেতা। এর আগে, জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের গত সোমবার দুই কো-চেয়ারম্যান এবং মহাসচিবকে অব্যাহতি দেন। নতুন মহাসচিব করা হয় শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে। এ ঘটনার ঠিক এক সপ্তাহ পর এ ঐক্যের ডাক এল। স্মরণসভায় জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, ‘একটা স্থিতিশীল ব্যবস্থা বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত গড়ে ওঠে নাই। সবাই চায় দেশের মানুষের ভালো থাকুক। কিন্তু যেকোনো কারণেই হোক, সব সরকারই ভালো কাজ করতে পারেন না; সংস্কারমূলক কাজ করতে পারেন না।’ তিনি আরো বলেন, ‘এরশাদ সাহেব সংস্কারমূলক কাজ করেছেন। এ স্মরণসভায় আমি এসেছি তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।’ জাতীয় পার্টির (জি এম কাদের) সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘আমরা একজোটেই ছিলাম। এখনো আছি। রাজনৈতিক কারণে এবং আমাদের সরকার ছিল না এই ৩৫ বছর। ফলে যে যখন আসছে, তখন আমাদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করছে; নানা কৌশল অবলম্বন করছে। আমরা এক জোটে নির্বাচনও করতে পারিনি। হৃদয়ে অনেক ব্যথা।’ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজ পল্লীবন্ধু আমাদের কাছে নাই, কিন্তু তার কাজ আমাদের মাঝে আছে। গ্রামে মানুষ এখনো বলে, আপনারা ঐক্যবদ্ধ হোন; আমরা জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় দেখতে চাই। আমি সবাইকে বলব, আসেন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে জাতীয় পার্টিকে এগিয়ে নেব।’ জাতীয় পার্টির (রওশন) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘আজ জাতীয় পার্টির জন্য ঐতিহাসিক দিন। যে মুহূর্তে জাতীয় পার্ট খণ্ড হতে-হতে খাদের কিনারে দাঁড়িয়েছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে পল্লীবন্ধু এরশাদের সঙ্গে যারা জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেই সব নেতা আজ এক মঞ্চে উপস্থিত হয়েছেন।’ জি এম কাদেরকে ‘সুযোগসন্ধানী লোক’ হিসেবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আপনার ভাইয়ের মৃত্যুর পরে আবার আপনি সেই সুযোগ নিয়েছেন। জাতীয় পার্টি থেকে চটচট করে বড় বড় নেতাদের আপনি বের করে দেন। আরে ভাই, এটা কি তেল কোম্পানি? আপনি তার ম্যানেজার? আপনি সব পিয়ন বের করে দিবেন। এটা রাজনৈতিক দল; করতে হলে সব মানুষকে নিয়ে করতে হয়। আপনি কী লো! শুধু বউ নিয়ে রাজনীতি করা যায় না; ঘর করা যায়।’ নিজেদের জানা-অজানা ভুলের জন্য দেশবাসীর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে তিনি বলেন, ‘আজ এখানে যারা আছেন, সবাইকে নিয়ে আগামী দিনে আমরা নতুন করে জাতীয় পার্টিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাব, এটা হোক আমাদের আজকের প্রত্যাশা।’ জাতীয় পার্টির (জি এম কাদের) সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘এরশাদের মতো নেতা আগামী ৫০ বছরে বাংলাদেশে আসবে কিনা সন্দেহ আছে। আজ বাংলাদেশের রাজনীতির অবস্থাটা দেখেন, একটি বড় রাজনৈতিক দলের আট মাসের কর্মকাণ্ডে মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে।’ বিভক্ত হয়ে পড়া নেতাদের ‘এক করে’ শিগগিরই একটা কাউন্সিলের আহ্বান জানান মুজিবুল হক চুন্নু। জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেপির (মঞ্জু) মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য (রওশন) আবু হোসেন বাবলা, জাতীয় পার্টির (ডা. মতিন) মহাসচিব জাফর আহমেদ জয়, প্রেসিডিয়াম সদস্য (কাজী জাফর) দিদারুল আলম চৌধুরী ও জাতীয় মহিলা পার্টির সভাপতি নাজমা আক্তার।