ফুটওভার ব্রিজ পাশেই, তবু গাড়ির সামনে দিয়েই রাস্তা পারাপার

ব্যস্ত নগরে নিরাপদে সড়ক পারাপারের জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ফুটওভার ব্রিজ আছে। কিন্তু এসব ব্রিজ যেন নজরেই পড়ে না কিছু উদাসীন নাগরিকের। তারা অনেক সময় জেনেশুনে ঝুঁকি নিয়ে নিচ দিয়েই রাস্তা পার হচ্ছেন। এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি সড়কে ফুটওভার ব্রিজ থাকলেও অনেকেই তা ব্যবহার না করে নিচ দিয়ে সড়ক পার হচ্ছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে ফুটওভার ব্রিজ এড়িয়ে গাড়ির সামনে দিয়েই রাস্তা পার হতে দেখা যায়। মালিবাগ থেকে কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত অন্তত আটটি ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে। কিন্তু এসব ব্রিজের ব্যবহার কমে যাচ্ছে দিন দিন। বিশেষ করে আবুল হোটেল ও শাহজাদপুর সংলগ্ন নতুন বাজারের বাঁশতলার ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারকারীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে খুবই কম। সেখানে পথচারীরা ব্রিজের নিচ দিয়েই রাস্তা পারাপার হচ্ছেন। পাশেই ভাটারা থানার সামনে নতুন বাজারে সড়কের মাঝখানের ভাঙা ডিভাইডার রেলিং দিয়েই অনেককে রাস্তা পার হতে দেখা যায়। নতুন বাজার এলাকার খন্দকার বাড়ি মোড়ে বসবাসকারী আরাফাত গুলশান-২ নম্বরে একটি দোকানে কাজ করেন। তিনি বলেন, খন্দকার বাড়ি মোড় থেকে অফিসে যেতে একটু তাড়াহুড়ো থাকে, তাই ব্রিজ ব্যবহার করি না। যদিও ঝুঁকি আছে, তবুও সময় বাঁচানোর জন্য নিচ দিয়েই যাই। আরেক পথচারী বেরাইদ থেকে কাকলিতে যাতায়াতকারী সাব্বির আহমেদ বলেন, আমার হাঁটুতে ব্যথা, তাই ব্রিজে উঠতে কষ্ট হয়। নিচ দিয়েই চলাফেরা করি। আমার মতো অনেকেই প্রতিদিন এমন ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হন। অনেক সময় দুর্ঘটনাও ঘটে। তিনি আরও বলেন, যারা সুস্থ, তাদের অবশ্যই ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করা উচিত। তবে যদি সব ব্রিজে লিফট থাকতো, তাহলে সবাই সহজে ব্যবহার করতে পারতো এবং দুর্ঘটনার হার অনেক কমে যেত। রাজধানীর মৎস্য ভবন এলাকার ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) মো. আশিবুর রহমান বলেন, একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষকে তো বোঝানোর কিছু নেই। এটা তো নৈতিক শিক্ষা। কোথায় দিয়ে যেতে হবে, কোথায় দিয়ে যেতে হবে না এটা তো ছোট বেলায় শিখে আসছে। এখন যদি সেই শিক্ষা কাজে না লাগায় তো কী করার। আর ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে রাস্তা পারাপার না হলে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা আইনে নেই। তিনি আরও বলেন, পথচারীদের যত্রতত্র রাস্তা পারাপারের কারণে ট্রাফিক পুলিশদেরও কাজে ব্যাঘাত ঘটে। মৎস্য ভবনের মোড়ে মৎস্য অধিদপ্তর আছে, রমনা পার্ক আছে। প্রতিদিন এখানে লাখ লাখ মানুষের আগমন ঘটে। পথচারীদের ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারের জন্য বারবার বলা হয়, কিন্তু তারা পার হতে চায় না। ৯৫ শতাংশ মানুষ ফুটওভার ব্রিজের নিচ দিয়ে রাস্তা পারাপার হয়। এমনকি ট্রাফিক সিগনাল দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করার সময়-সুযোগ তারা দেয় না। চলন্ত গাড়ির সামনে দিয়েই তারা রাস্তা পার হয়ে যায়। এতে ট্রাফিক সিগনাল নিয়ন্ত্রণে বাধা সৃষ্টি হয়। আশিবুর রহমান বলেন, প্রতিটি মানুষ যদি সচেতনভাবে নিজের দায়িত্বটুকু পালন করতো তাহলে আমাদের অনেক কষ্ট কমে যেত। ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করলে পথচারীদের যেমন জীবনের নিরাপত্তা বাড়তো, তেমনি যান চলাচলও আরও দ্রুত হতো।