যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ শুধু অর্থনৈতিক নয়, রয়েছে ভূ-রাজনৈতিক কৌশলও

১০ জুলাই, ২০২৫ | ১১:২৬ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

বাংলাদেশের রপ্তানিপণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে শুল্ক ও শর্ত আরোপ করছে, তা শুধুমাত্র অর্থনৈতিক নয়, এর পেছনে স্পষ্ট ভূ-রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশও রয়েছে। বিশেষ করে ‘রুলস অব অরিজিন’ শর্তের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র এখন এমন এক বাধ্যবাধকতা চাপাচ্ছে, যা বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রুলস অব অনিজিন অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় রপ্তানি হওয়া পণ্যে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ স্থানীয় মূল্য সংযোজন থাকতে হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে- যা বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত- এই শর্ত পূরণ করা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে ওভেন গার্মেন্টস (বোনা পোশাক) খাত সবচেয়ে বেশি চাপে পড়েছে, কারণ এ খাতে ব্যবহৃত কাপড়ের প্রায় ৭০ শতাংশই চীন থেকে আমদানি করা হয়। অন্যদিকে, নিটওয়্যার খাতে স্থানীয় স্পিনাররা প্রায় ৯০ শতাংশ কাপড় সরবরাহ করতে পারছেন, ফলে সে খাতে চীনা নির্ভরতা তুলনামূলকভাবে কম। কিন্তু ওভেন খাতে বাংলাদেশের নিজস্ব উৎপাদন ব্যবস্থা এখনো দুর্বল, ফলে চীনা কাঁচামালের বিকল্প খোঁজা সহজ নয়। বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই কঠোর অবস্থান কেবল দেশীয় শিল্প সংরক্ষণের জন্য নয়, বরং চীনের অর্থনৈতিক প্রভাব হ্রাস করাও এর একটি বড় উদ্দেশ্য। মার্কিন প্রশাসন মনে করছে, চীনা কাঁচামাল ব্যবহার করে তৃতীয় দেশ থেকে পণ্য রপ্তানি কার্যত চীনেরই পরোক্ষ বাজার সম্প্রসারণ। তাই এই ধরনের রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করে তারা গ্লোবাল সাপ্লাই চেইনে চীনের প্রভাব কমানোর চেষ্টা করছে। এছাড়াও, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ, অবকাঠামো ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে চীনা বিনিয়োগ বাড়ায় যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। তারা বাংলাদেশ সরকারের কাছে মার্কিন বিনিয়োগের নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিয়েও বারবার আশ্বাস চাইছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের উচিত দ্রুত বিকল্প উৎস খোঁজা, ওভেন খাতে স্থানীয় উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো, এবং বৈদেশিক নীতিতে সুষম কৌশল গ্রহণ করা যাতে উভয় পরাশক্তির সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করা যায়। বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) খোলা চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭% শুল্ক আরোপ হঠাৎ ও চ্যালেঞ্জিং—“expectedly challenging situation” হিসেবে তারা অভিহিত করেছে  বিজিএমইএ’র প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন: ‘We fully recognise the pressure this has created at your end’। এ বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি গ্লোবাল ক্রেতাদের কাছে এটি বোঝাতে চেয়েছেন যাতে তাঁরা দাম বাড়িয়ে চাপ আরও না বাড়ান । এদিকে শিল্প নেতারা ডায়লগ সভা আয়োজন করে রপ্তানি খাতের পরিস্থিতি নিয়ে গভীর আলোচনা করেছেন। এতে রপ্তানিকারকরা জোর দিয়ে বলেছেন তৈরি পোশাকের দাম না বাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে উত্তরাধিকার বজায় রাখতে সহযোগিতা করতে হবে । ৯ জুলাই বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট মাহমুদ হাসান খান পরামর্শ দিয়েছেন, সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে লবি গোষ্ঠী নিয়োগ করে এ সংকট নিরসনে অবিলম্বে উদ্যোগ গ্রহণ করানো হোক ।