একুশেই মিলবে স্টার্টআপ ঋণ, সুদ হার মাত্র ৪ শতাংশ

তরুণদের নতুন ভাবনা ও প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবসার বিকাশে আরো সহায়ক হতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য প্রথম বারের মতো স্টার্টআপ খাতে ব্যাংক ঋণ ও ইক্যুইটি বিনিয়োগের জন্য একটি বিস্তৃত নীতিমালা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই নির্দেশনার ফলে উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে ঋণ পাওয়ার পাশাপাশি শেয়ারভিত্তিক অর্থও তুলতে পারবেন। এতে দেশের উদ্ভাবনী উদ্যোগগুলো আরো গতিশীল হবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল বুধবার 'স্টার্টআপ' খাতকে উৎসাহিত করতে নতুন একটি মাস্টার সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সার্কুলারে স্টার্টআপ খাতে অর্থায়নের নীতিমালা ও পদ্ধতি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে স্টার্টআপ খাতকে কর্মসংস্থান, উদ্ভাবন এবং বৈশ্বিক অংশীদারত্ব বৃদ্ধির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিবেচনা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই খাতে ঋণের পাশাপাশি ইক্যুইটি বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা হলে উদ্ভাবনী প্রকল্পগুলো আরো এগিয়ে যাবে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সার্কুলারে বলা হয়েছে, স্টার্টআপ বলতে এমন প্রযুক্তিনির্ভর বা মেধাস্বত্বভিত্তিক উদ্যোগকে বোঝানো হয়, যারা নতুন পণ্য বা সেবা তৈরি করে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখে। তবে পুরোনো ব্যবসা পুনর্গঠন করে তৈরি প্রতিষ্ঠান এ সুবিধার আওতায় আসবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক দুটি উৎস থেকে স্টার্টআপ তহবিল গঠন করেছে: প্রথমটি ৫০০ কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল এবং দ্বিতীয়টি প্রতিটি ব্যাংকের নিজস্ব স্টার্টআপ ফান্ড, যেখানে প্রতি বছর নিট মুনাফার ১ শতাংশ জমা দিতে হবে। এই তহবিল থেকে প্রাথমিক, মধ্যম এবং উচ্চ পর্যায়ের স্টার্টআপগুলোকে সর্বোচ্চ ২ কোটি থেকে ৮ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ বা ইক্যুইটি বিনিয়োগ দেওয়া যাবে। ইক্যুইটি বিনিয়োগের সুবিধা পরিচালনার জন্য একটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি গঠন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক, যেখানে অংশগ্রহণকারী ব্যাংকগুলোর অর্থ ব্যবহৃত হবে। ঋণ বা বিনিয়োগের জন্য কিছু শর্ত পূরণ আবশ্যক, যেমন উদ্যোক্তার বয়স ন্যূনতম ২১ বছর হতে হবে, কোনো ঋণখেলাপি না থাকা এবং প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে নিবন্ধিত হতে হবে। এছাড়া সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে নির্বাচিত স্টার্টআপদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ঋণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সময়সীমা আট বছর, এবং সুদের হার সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ ধার্য করা হয়েছে। ব্যাংকের সঙ্গে অংশগ্রহণ চুক্তি করলেই তারা পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা পাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এই তহবিল ব্যবহারে নজরদারি করবে এবং প্রয়োজনে সরেজমিন পরিদর্শন, দলিলাদির তলব ও নীতিগত দিকনির্দেশনা দেবে। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য স্টার্টআপ খাত একটি সম্ভাবনাময় খাত। এ খাতে উদ্ভাবনী চিন্তা, প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবসা এবং নতুন পণ্য বা সেবা তৈরির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাজারে দেশের অংশগ্রহণ বাড়ানো সম্ভব। তবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অর্থায়ন না পাওয়ার কারণে অনেক প্রতিভাবান উদ্যোক্তা এবং সম্ভাবনাময় প্রকল্প পথেই থেমে যাচ্ছে। এ অবস্থায়, স্টার্টআপদের সহজে অর্থায়নের সুযোগ করে দিতে এবং নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরির পরিবেশ তৈরি করতে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি মাস্টার সার্কুলার জারি করেছে। এতে স্টার্টআপ সংজ্ঞা, অর্থায়নের উৎস, পদ্ধতি, সীমা ও মানদণ্ড, এমনকি ইক্যুইটি বিনিয়োগ এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি গঠনের রূপরেখাও দেওয়া হয়েছে। এই সার্কুলারের মাধ্যমে উদ্যোক্তা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তিন পক্ষের মধ্যে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা তৈরি হবে এবং স্টার্টআপ খাতের অর্থায়ন প্রক্রিয়াটি অধিকতর কাঠামোবদ্ধ ও কার্যকর হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে, অন্যদিকে দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও উদ্ভাবনী অর্থনীতি গড়ে উঠবে।