ধরাছোঁয়ার বাইরে তাসকিন

কুশল মেন্ডিসের সঙ্গে চারিথ আশালঙ্কার জুটিটা তখন বাংলাদেশের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাসকিন আহমেদ এলেন বোলিংয়ে। তখনো নামের পাশে উইকেটশূন্য। থিতু ব্যাটার আশালঙ্কাকে ইয়র্কার দিতে গিয়ে লো-ফুলটস দিয়ে ফেলেছিলেন ডানহাতি এ পেসার। ছক্কার লোভ সামলাতে না পেরে উড়িয়ে মেরেছিলেন লঙ্কান অধিনায়কও। কিন্তু বল মিড উইকেটে থাকা মেহেদী হাসান মিরাজের তালুবন্দি হলে ভাঙে ১২৪ রানের সেই জুটি। ৫৮ রান করে ফিরে যান লঙ্কান অধিনায়ক। দলের যখন উইকেটের প্রয়োজন হয়, তখন বড় জুটি ভেঙে ব্রেক থ্রু এনে দেওয়ার কারিগর হন তাসকিন—গত কয়েক বছরে তার ছাপ রেখে গেছেন ৩০ বছর বয়সী এ পেসার। শেষ আড়াই বছরে পারফরম্যান্সের বিচারে বিশ্বক্রিকেটে রাজত্বও করছেন ডানহাতি এ পেসার। ২০১৪ সালে ওয়ানডে সংস্করণে অভিষেক হয়েছিল তাসকিনের। তবে তার ১১ বছরের ক্যারিয়ার দুটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। প্রথম ৭ বছরে অম্লমধুরতার মধ্য দিয়ে সময় পার করতে হয়েছিল তার। চোটে পড়ে খেলা হয়নি ২০১৯ সালে হওয়া ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে। এরপর নিজের মধ্যেই পরিবর্তন নিয়ে আসেন তাসকিন; দুই বছরের মধ্যেই বদলে ফেলেন নিজেকে। ২০২১ সালে শুরু হয় তাসকিন ‘০২’-এর পথচলা। তিনি দলের এখন সেরা বোলারও বটে। তার দলে থাকা যে কতটা স্বস্তি দেয়—সেটাও বারবার প্রমাণ করেছেন। বোলিংয়ে নিজের উন্নতির ছাপও রেখে যাচ্ছেন নিয়মিতই। বিশ্বক্রিকেটে সেরাদের সেরা হওয়ার দৌড়ে তাইতো বারবার দেখা মিলছে তার নাম। ওয়ানডে ক্রিকেটে তাসকিন বাংলাদেশের সেরা পেসার—পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা বলছে সে কথা; কিন্তু বিশ্বক্রিকেটেও যে তিনি সেরা, সেটা হয়তো অনেকেরই অজানা। পরিসংখ্যানমতে, ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে হওয়া ওয়ানডে ম্যাচগুলোতে ইকোনমির দিক থেকে সবচেয়ে মিতব্যয়ী পেসার বাংলাদেশের তাসকিন। এ সময়ের মধ্যে অন্তত দেড়শ ওভার করেছেন যারা, তাদের নিয়েই এমন পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে বিশ্বক্রিকেটে রাজত্ব করা অনেক পেসারকে ছাপিয়ে গেছেন তাসকিন। গত আড়াই বছরের হিসাব বলছে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ ওয়ানডে পর্যন্ত তাসকিন মোট ২৯ ম্যাচে ২৮ ইনিংসে ২৩৬.৩ ওভার বোলিং করেছেন। এর মধ্যে তার ইকোনমি ছিল মাত্র ৪.৮৮; উইকেট নেন ৪৮টি। একই সময়ে বিশ্বক্রিকেটে খেলা পেসারদের মধ্যে মিতব্যয়ীর দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে আছেন নিউজিল্যান্ডের পেসার ম্যাট হেনরি, তিনে দক্ষিণ আফ্রিকার কাগিসো রাবাদা, চারে অস্ট্রেলিয়ার জস হ্যাজেলউড ও পাঁচে ভারতের মোহাম্মদ সিরাজ। আর উইকেট শিকারের দিক থেকে তাসকিনের চেয়ে এগিয়ে একজনই সেটা ম্যাট হেনরি। তবে তাদের দূরত্ব খুব বেশি নয়, তাসকিনের চেয়ে এক উইকেট বেশি অর্থাৎ ৪৯ উইকেট নিয়েছেন হেনরি। তাসকিন নিজেকে বদলে যেভাবে ছুটছেন, সেটা যেন এখন ধরাছোঁয়ারও বাইরে চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশ দলে নিজেকে অপরিহার্য হিসেবে বারবার প্রমাণ রেখে যাচ্ছেন ডানহাতি এ পেসার।