তুলা আমদানিতে অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের দাবি

আলোচনা ছাড়াই ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে তুলা আমদানিতে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) আরোপ করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত টেক্সটাইল শিল্পের ওয়ার্কিং ক্যাপিটালকে সংকুচিত করবে, যা শিল্পের জন্য বর্তমান প্রেক্ষাপটে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। এর পরিপ্রেক্ষিতে শিল্পের স্বার্থে তুলা আমদানিতে এআইটি প্রত্যাহার ও সুতার ওপর কেজিপ্রতি ৫ টাকা সুনির্দিষ্ট কর (ভ্যাট) প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বৃহস্পতিবার এনবিআর চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে বিটিএমএ। চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে অর্থ উপদেষ্টা, বাণিজ্য উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকেও। টেক্সটাইল শিল্পের বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে চিঠিতে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ পরবর্তী পরিস্থিতির নেতিবাচক প্রভাব এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বিশ্ব মন্দার কারণে অন্য দেশের পাশাপাশি আমাদের শিল্প, অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময়ের মধ্যে গ্যাসের মূল্য দ্বিগুণের বেশি বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি, ডলারের সংকট, টাকার অবমূল্যায়নের কারণে ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের ঘাটতি, ব্যাংক সুদের হার ৯ শতাংশ থেকে ১৫-১৬ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি এবং রপ্তানির বিপরীতে নগদ প্রণোদনার অস্বাভাবিক হ্রাস, টাকার অবমূল্যায়নের কারণে টেক্সটাইল শিল্প সমস্যায় আছে। পক্ষান্তরে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে শুল্ক পরিশোধ ব্যতীত বন্ড সুবিধায় অবাধে সুতা আমদানি করা হচ্ছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, তৈরি পোশাকসহ টেক্সটাইল এবং অ্যাপারেল খাতে বিনিয়োগের পরিমান ৭৫ বিলিয়ন ডলার। সরকারের যথাযথ সহযোগিতা পেলে ২০৩০ সালের মধ্যে এ খাতে রপ্তানি আয় ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব। বিটিএমএর চিঠিতে বলা হয়, সরকার তুলা আমদানির ওপর সংশ্লিষ্ট সমিতির সঙ্গে আলাপ আলোচনা ব্যতিরেকে ২ শতাংশ এআইটি আরোপ করেছে। এই সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী। এর ফলে উৎপাদন খরচ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে, শিল্পের সক্ষমতাকে প্রতিযোগী দেশের তুলনায় পিছিয়ে দেবে। কোনো অবস্থাতেই দেশীয় টেক্সটাইল মিলগুলো এআইটি দিয়ে ব্যবসায় টিকে থাকতে পারবে না। অগ্রিম আয়কর কীভাবে শিল্পের ওয়ার্কিং ক্যাপিটালকে সংকুচিত করবে তার হিসাব তুলে ধরা হয়েছে চিঠিতে। এতে বলা হয়েছে, প্রত্যেকবার তুলা খালাসের ক্ষেত্রে ২ শতাংশ এআইটি দিতে হলে বছর শেষে তা ২৯ শতাংশ হয়ে যাবে, যা টেক্সটাইল খাতের মতো আমদানি পরিপূরক শিল্পের জন্য অসহনীয়। এভাবে চক্রবৃদ্ধি হারে অগ্রিম আয়কর পরিশোধ করতে হলে তিন বছরের মধ্যে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল শূন্য হয়ে যাবে। সুতা উৎপাদনে ভ্যাট বাড়ানোর ফলে শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, বাজেটে সুতা উৎপাদনে সুনির্দিষ্ট করের পরিমাণ ৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা স্পিনিং খাতে মারাত্মকভাবে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এতে স্থানীয় বাজারে সুতা বিক্রয়মূল্য বৃদ্ধি পাবে। তখন ক্রেতারা দেশীয় স্পিনিং মিল থেকে সুতা কিনবে না। যার পরিপ্রেক্ষিতে অনেক টেক্সটাইল মিল বন্ধ হয়ে যাবে। এতে বিপুলসংখ্যক শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা পরিশোধে ঝুঁকির সৃষ্টি হবে।