আরো একবার চীনের কূটনৈতিক বার্তা: আসল হুমকি কে?

সম্প্রতি মস্কোতে অবস্থিত চীনা দূতাবাস এক তালিকা প্রকাশ করেছে—যা একদিকে তথ্য, অন্যদিকে এক বিস্ফোরক রাজনৈতিক বার্তা। এতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বোমাবর্ষণের শিকার হওয়া ৩০টিরও বেশি দেশের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই তালিকা কেবল ইতিহাসের দলিল নয়; এটি একটি স্পষ্ট রাজনৈতিক ও নৈতিক চ্যালেঞ্জ—পশ্চিমা বিশ্ব এবং বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে। *এই তালিকাটি পড়ে চোখ কপালে উঠার মতো নয়; বরং বিবেক জাগ্রত করার মতো।* এখানে রয়েছে: * * জাপান (১৯৪৫)*—পরমাণু বোমা * * কোরিয়া ও চীন (১৯৫০–১৯৫৩)*—কোরিয়ান যুদ্ধ সার্টিফিকেট তুলতে চরম ভোগান্তির স্বীকার বুটেক্স শিক্ষার্থীরা * * ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া (১৯৬০–৭০)*—রক্তাক্ত ইন্দোচীন * * ইরাক (১৯৯১–২০১৫),**আফগানিস্তান (২০০১–২০১৫) **সিরিয়া (২০১৪–২০১৫)*—আধুনিক আগ্রাসনের প্রতীক* এমনকি *পাকিস্তান, ইয়েমেন, সোমালিয়া* ও *লিবিয়া*—যাদের বিরুদ্ধে তথাকথিত "সন্ত্রাসবিরোধী" যুদ্ধের নামে চালানো হয়েছে বিমান হামলা ও ড্রোন স্ট্রাইক। চীনের কূটনৈতিক ভাষ্য ছিল পরিষ্কার: > *“আমরা যেন কখনো ভুলে না যাই, আসল হুমকি আসলে কে।”* *তাহলে প্রশ্ন হলো:* * কেন আজও জাতিসংঘ এই অপরাধগুলো নিয়ে কোনো কার্যকর তদন্ত চালায়নি? * কখনও কি "আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়" যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে? * কবে আমরা পশ্চিমা মিডিয়াতে দেখেছি এই অপরাধগুলোর তীব্র নিন্দা? *উত্তর: কখনোই না। কারণ এই বিশ্বব্যবস্থাই গঠিত হয়েছে নির্লজ্জ একপেশেমূলক নীতির ভিত্তিতে।* পশ্চিমা বিশ্ব মানবাধিকার আর ন্যায়বিচারের কথা বলে, কিন্তু বাস্তবে তারা নীরব দর্শক—যখন যুক্তরাষ্ট্র একের পর এক দেশ বোমায় গুঁড়িয়ে দেয়, সংস্কৃতি ধ্বংস করে, এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের স্বপ্নকে ছাই করে দেয়। *এখানে প্রশ্ন ক্ষমতার নয়, প্রশ্ন নৈতিকতার।* যখন ইরান তার উপর হওয়া একতরফা আগ্রাসনের জবাবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেয়, তখন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ঝাঁপিয়ে পড়ে: “ইরান হলো বৈশ্বিক হুমকি!” তাদের এই তৎপরতাকে চ্যালেঞ্জ জানাতেই চীন এই তালিকাটি প্রকাশ করে, যেন বিশ্ব দেখুক—কাদের হাত আসলেই রক্তে রঞ্জিত। *এই বার্তাটি ছিল তিনটি স্তরে গুরুত্বপূর্ণ:* ১. *তথ্যগতভাবে:* যুক্তরাষ্ট্রের নিরন্তর আগ্রাসনের একটি কালানুক্রমিক বিবরণ ২. *নৈতিকভাবে:* পশ্চিমা বিশ্ব এবং তথাকথিত "আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়" যে দ্বিমুখী মানদণ্ডে চলে, তা উন্মোচন ৩. *রাজনৈতিকভাবে:* ইরান-বিরোধী প্রচারণার বিপরীতে একটি জোরালো প্রতিকথন এটি ছিল একটি “soft counter-attack”—যেখানে চীন প্রমাণ করতে চেয়েছে যে শুধু রকেট বা বোমা দিয়ে নয়, সত্যের ভাষা দিয়েও লড়াই যায়। *আমাদের কী করণীয়?* এই তালিকাটি আজকের দুনিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এটি শুধু রাষ্ট্রনীতির সমালোচনার জন্য নয়, গণমানুষের চোখ খুলে দেওয়ার জন্য। আমরা যারা মিডিয়াতে, সামাজিক প্ল্যাটফর্মে, বা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় সক্রিয়, আমাদের দায়িত্ব এখন এই বার্তাটি ছড়িয়ে দেওয়া। * ভিডিও বানানো দরকার * ইনফোগ্রাফিক প্রকাশ করা উচিত * বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে আলোচনা হওয়া উচিত এটি এখন আর এক দেশের বিরুদ্ধে আরেক দেশের অভিযোগ নয়, *এটি এখন বিবেকের প্রশ্ন। ইতিহাসের প্রশ্ন। মানবতার প্রশ্ন।* **সর্বশেষে, এই কথাটিই ফিরে আসে: "আমরা যেন কখনো ভুলে না যাই, আসল হুমকি আসলে কে।" পশ্চিমা মুখোশপরা সভ্যতা যখন "মানবাধিকার" বলে গলা ফাটায়, তখন আমাদের উচিত তার মুখের সামনে এই তালিকাটি ধরে বলা: *"তোমাদের অতীতের লজ্জা দেখে আসো, তারপর নীতি শেখাতে এসো।"* ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম লেখক : প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী গবেষণা কেন্দ্র।