ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার নেপথ্যে যা ঘটেছিল

২৫ জুন, ২০২৫ | ৮:৪৩ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

কাতারে মার্কিন সেনাঘাঁটিতে হামলার কয়েক ঘণ্টা পরই নাটকীয়ভাবে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে মার্কিন প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের দৌড়ঝাঁপ করতে দেখা যায়। ট্রাম্প কর্মকর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকেও মিলিত হন। হঠাৎ যুদ্ধবিরতির ঘোষণা কেন এলো, নেপথ্যে কী ঘটেছিল– তা উঠে এসেছে গতকাল বুধবার প্রকাশিত সিএনএনের এক বিশ্লেষণে। হোয়াইট হাউসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি ঘোষণার আগে ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেন। আর ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ ইরানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যোগাযোগ রাখছিলেন। এতে মধ্যস্থতা করে কাতার সরকার। ট্রাম্প এক পর্যায়ে সরাসরি কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ বিন খলিফা আল থানির সঙ্গেও কথা বলেন। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর তেহরান কাতারের মার্কিন ঘাঁটি আল উদেইদে হামলা চালায়। এর মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা করেন, ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। তাদের মধ্যে একটি সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি হয়েছে, যা ১২ দিনের সংঘাতের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটাবে। যদিও যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও দুই দেশের পাল্টাপাল্টি অভিযোগে একটি অনিশ্চিত পরিস্থিতি তৈরি হয়। হোয়াইট হাউসের ওই কর্মকর্তা জানান, আক্রমণ বন্ধ করার শর্তে ইরান যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। ট্রাম্প কাতারের আমিরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি ইরানকে রাজি করাতে কাতারের আমিরকে সহযোগিতার অনুরোধ করেন। একটি সূত্র জানিয়েছে, ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুলরহমান বিন জসিম আল-থানির কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেন। আল-থানির সঙ্গে কথা বলার পর ইরান যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মত হয়। ওই কর্মকর্তা বলেন, কাতারের আমিরের সঙ্গেও ইরান একাধিকবার ফোনালাপ করে, যা যুদ্ধবিরতি ত্বরান্বিত করে। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম মঙ্গলবার ঘোষণা করে, মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক হামলা চালানোর পর শত্রুরা যুদ্ধবিরতি মেনে নিয়েছে। পরে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি নিজ দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এর আগে আরাগচি বলেছিলেন, ইসরায়েল হামলা বন্ধ করলে ইরান পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানাবে না। গত সোমবার রাতে ট্রাম্প দাবি করেন, যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরায়েল ও ইরান তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে। যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্টে বলেন, দু’পক্ষ প্রায় একই সময়ে আমার কাছে এসে বলেছে– ‘তারা শান্তি চায়’। আমি জানতাম এখনই সময়। বিশ্ব ও মধ্যপ্রাচ্যই আসল বিজয়ী। উভয় দেশই ভবিষ্যতে পরস্পরের প্রতি শান্তি-সমৃদ্ধি দেখতে পাবে। এর আগে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী দাবি করে, ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। হোয়াইট হাউসের দাবি, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার কারণেই যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্ভব হয়েছে। কূটনৈতিক সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, প্রতিশোধমূলক হামলা তেহরানকে আলোচনায় ফিরে আসার জন্য টনিক হিসেবে কাজ করবে। যুক্তরাষ্ট্র-ইরান আলোচনা অব্যাহত রাখার জন্য আরও ক্ষেত্র তৈরি করবে। ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্র তেহরানকে আলোচনায় ফেরানোর চেষ্টা চালিয়েছিল। এ নিয়ে গত সপ্তাহজুড়ে উভয় পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে অসংখ্য বার্তা বিনিময় হয়েছে। এমনকি তুরস্কে ট্রাম্পের সঙ্গে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের বৈঠকের প্রচেষ্টাও হয়। কিন্তু তা শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি।