অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ শীতের শেষ দিনে বসন্ত বরণের আমেজ

১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ৮:৪৬ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

শীতের হালকা আমেজ থাকলেও সোমবার হলুদ পাঞ্জাবি, হলুদ শাড়ি পরে তরুণ-তরুণীরা আসেন বইমেলায়। অনেক শিশু ও মধ্যবয়সির পরনে ছিল হলুদ পোশাক। অর্থাৎ শীতের শেষ দিনে বসন্তকে বরণ করে নেওয়ার আমেজ ছিল বইমেলায়। আর আজ পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসার দিন, ভ্যালেন্টাইস ডে। এ কারণেই দিনটিতে বাসন্তী সাজে বইমেলায় অনেক মানুষের সমাগম হবে। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের। কিন্তু প্রকাশকদের অভিজ্ঞতা হলো, এদিন বই বিক্রি তেমন হয় না। মেলার মাঠে আলাপ করছিলেন নালন্দা প্রকাশনীর প্রকাশক রেদওয়ানুর রহমান জুয়েল, ইত্যাদির প্রকাশক আদিত্য অন্তর এবং জহিরুল আবেদীন জুয়েল। তারা বলছিলেন, পহেলা ফাল্গুন মেলায় অসংখ্য মানুষ আসবেন ঠিক। কিন্তু এদিন বেচাবিক্রি তেমন হবে না। কারণ বেশির ভাগই আসবেন ঘুরতে। সোমবার আজব প্রকাশে কবি ও কথাসাহিত্যিক শানারেই দেবী শানুর কবিতার নতুন বই ‘ভালোবাসার এপার ওপার’ এর প্রকাশনা উৎসব হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন ভারতের কবি রুদ্র গোস্বামী। এদিন বইমেলায় কপিরাইট অফিসের লোকজন অভিযান চালান। তারা মেলায় লিটলম্যাগ চত্বর ও কিছু প্যাভিলিয়ন পরিদর্শন করেন। এ সময় রেজিস্ট্রার অফ কপিরাইট দাউদ মিয়া বলেন, আজকে বইমেলায় কিছু প্যাভিলিয়ন, বড় প্রকাশনী ও লিটলম্যাগ চত্বর পরিদর্শন করেছি। বড় প্রকাশনীগুলোতে কপিরাইটবিষয়ক সমস্যা আছে। তবে এমন বইয়ের সংখ্যা কম। লিটলম্যাগের ছোট ছোট স্টলে অন্য প্রকাশনীর বই ও কিছু ফটোকপি পাওয়া গেছে। এ সময় আমরা ১০ থেকে ১৫টি স্টলকে সতর্ক করেছি। তারা যদি সতর্ক না হয় তবে শনিবার এসে তাদের স্টল বন্ধ করার জন্য সুপারিশ করব। নতুন বই : এদিন নতুন বই প্রকাশ হয়েছে ১০৫টি। স্টুডেন্ট ওয়েজ প্রকাশ করেছে কাজী হাবিবুল আউয়ালের ‘জীবন খাতার কয়েক পাতা’; কথাপ্রকাশ থেকে আহসান হাবীবের ‘টিউশন মাস্টার’; আফসান চৌধুরীর ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ধারাবাহিকতার ইতিহাস (১৯০৫-১৯৭১)’; প্রতিকথা প্রকাশন থেকে আসিফ মাহতাব পাভেলের কবিতার বই ‘স্বহস্তে পুনর্মুদ্রণ’। বিকালে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ : আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মফিদুল হক। আলোচনায় অংশ নেন হারিসুল হক ও অপূর্ব শর্মা। সভাপতিত্ব করেন আবেদ খান। প্রাবন্ধিক বলেন, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী দীর্ঘজীবী কর্মবীর ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তার প্রধান পরিচয় সাংবাদিক ও লেখক হিসাবে। উভয় ক্ষেত্রে তার হাতে ছিল কলম যা অপূর্ব আলোর ঝলকানিতে জ্বলে উঠেছিল বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনের পর। আবেগ ও উপলব্ধির মিশেল ঘটিয়ে তিনি এমন এক কবিতা লিখেছিলেন যা ছুঁয়ে গিয়েছিল জাতির অন্তর, আলতাফ মাহমুদের সুরে একুশের প্রভাতফেরিতে গীত হয়ে যুগিয়েছিল জাগরণের বাণীমন্ত্র। সেই থেকে তার কলম নানা সন্ধিক্ষণে সমাজের চিন্তাসে াতকে প্রভাবিত করেছে, মানুষকে আলোড়িত করেছে, বাঙালিকে করেছে জাতিচেতনায় সংহত। আলোচকরা বলেন, বাঙালির ভাষা আন্দোলন নিয়ে বহু গান রচিত হলেও সাংবাদিক, কবি, কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী রচিত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি সব বাঙালির মনে স্থায়ী আসন করে নিয়েছে। পেশাগত জীবনে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী প্রাণের আনন্দ খুঁজে পেয়েছিলেন লেখালেখিতে। আজীবন তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করেছেন এবং অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন। আবেদ খান বলেন, ‘আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর জীবন ও কর্ম অনেক বিস্তৃত। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের সাংবাদিকতা জগতের মহীরুহদের একজন। যে আদর্শ ও সৃজনশীলতা নিয়ে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী সাংবাদিকতা করেছেন তা আমাদের জন্য আদর্শ হয়ে থাকবে।’ আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন শাহনাজ মুন্নী, তসিকুল ইসলাম, দন্ত্যস রওশন ও মামুন রশীদ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন শাহনাজ মুন্নী, ওবায়েদ আকাশ, সাকিরা পারভীন, হানিফ খান ও জিললুর রহমান। আবৃত্তি করেন নাসিমা খান বকুল ও জয়ন্ত রায়।