যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে, ট্রাম্পের টুইট

২৩ জুন, ২০২৫ | ৮:৪২ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালিয়েছে বলে ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শনিবার রাতে তিনি তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে জানান, ফোর্ডো, নাটানজ এবং ইসফাহানে অবস্থিত ইরানের প্রধান পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রগুলো “সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস” করা হয়েছে। ট্রাম্প তার পোস্টে লিখেছেন, “আমরা ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় অত্যন্ত সফল হামলা সম্পন্ন করেছি। ফোর্ডোতে একটি পূর্ণাঙ্গ বোমার চালান ফেলা হয়েছে। সব বিমান নিরাপদে ইরানের আকাশসীমা ছেড়ে ফিরে আসছে। আমাদের মহান আমেরিকান যোদ্ধাদের অভিনন্দন!” তিনি আরও বলেন, “এখন শান্তির সময়। ইরানের উচিত এই যুদ্ধ বন্ধ করতে সম্মত হওয়া।” হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া এক ভাষণে ট্রাম্প বলেন, “আমাদের লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ ক্ষমতা ধ্বংস করা এবং বিশ্বের প্রধান সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্রের পারমাণবিক হুমকি বন্ধ করা। আজ রাতে আমি বিশ্বকে জানাতে পারছি, এই হামলা একটি অসাধারণ সামরিক সাফল্য ছিল।” তিনি ইরানকে প্রতিশোধ না নেওয়ার জন্য সতর্ক করে বলেন, যদি ইরান প্রতিশোধ নেয়, তবে আরও “মারাত্মক” হামলা চালানো হবে। ইরানের পক্ষ থেকে এই হামলার নিন্দা জানানো হয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাগচি এক্স-এ এক পোস্টে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে জাতিসংঘের সনদ এবং আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন করেছে।” তিনি বলেন, ইরান তার “সার্বভৌমত্ব, স্বার্থ এবং জনগণকে রক্ষার জন্য সব বিকল্প খোলা রাখছে।” ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থা এই হামলাকে “আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন” বলে অভিহিত করে জানিয়েছে, এটি তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করতে পারবে না। ইরানের রাষ্ট্রীয় মিডিয়া দাবি করেছে, হামলার আগেই এই স্থাপনাগুলো খালি করা হয়েছিল, ফলে কোনো বড় ক্ষতি হয়নি। তবে, হামলার ফলে কোনো বিকিরণ ঝুঁকি সৃষ্টি হয়নি বলে সৌদি আরব এবং আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) নিশ্চিত করেছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই হামলার প্রশংসা করে বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাহসী সিদ্ধান্ত ইতিহাস বদলে দেবে।” তিনি জানান, হামলাটি মার্কিন এবং ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর “পূর্ণ সমন্বয়ে” পরিচালিত হয়েছে। এই হামলা ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের একটি বড় ধাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা ১৩ জুন ইসরায়েলের হামলার মাধ্যমে শুরু হয়েছিল। ইরান এরপর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যে বৃহত্তর সংঘাতের আশঙ্কা বাড়িয়েছে। বিশ্ব নেতারা এই হামলার পর মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এটিকে “বিপজ্জনক উত্তেজনা” বলে অভিহিত করে সংযমের আহ্বান জানিয়েছেন। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা পরিস্থিতি শান্ত করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন, তবে ইরানের পারমাণবিক উন্নয়ন বন্ধ করার পক্ষে মত দিয়েছেন। অন্যদিকে, ভেনেজুয়েলা এবং কিউবা এই হামলার তীব্র নিন্দা করেছে। মার্কিন কংগ্রেসে এই হামলা নিয়ে মতভেদ দেখা দিয়েছে। রিপাবলিকান নেতারা যেমন হাউস স্পিকার মাইক জনসন এবং সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন, তেমনি ডেমোক্র্যাট নেতা হাকিম জেফ্রিস এবং জিম হাইমস এটিকে “সংবিধান লঙ্ঘন” বলে সমালোচনা করেছেন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। ইরানের পরবর্তী পদক্ষেপ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া এখন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।