পিপিপিতে গুরুত্ব দ্বিতীয় পদ্মা সেতুসহ ৮ প্রকল্প

২২ জুন, ২০২৫ | ৯:২৪ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

পাটুরিয়া ও গোয়ালন্দে বহুলপ্রতীক্ষিত দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণসহ ৮ মেগা প্রকল্পে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে এগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৫ হাজার ৪৩৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে অধিকাংশের বিস্তারিত সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) পিপিপির তালিকায় ৭৯টি প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে এসব প্রকল্প গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে। অন্য মেগা প্রকল্পগুলো হলো-মেট্রোরেল লাইন-২, কনস্ট্রাকশন অব ঢাকা আউটার রিং রোড প্রকল্প এবং ইমপ্রুভমেন্ট অব চিটাগং টু কক্সবাজার হাইওয়ে প্রজেক্ট। এছাড়া গাবতলী-সাভার-নবীনগর চার লেন এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, সার্কুলার রেললাইন নির্মাণ, কনস্ট্রাকশন অব বে-টার্মিনাল এবং ঢাকা ইস্ট ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প। জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন সোমবার বলেন, পিপিপির কার্যক্রম যে উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু হয়েছিল, সেটি পূরণ হয়নি। এতদিনে যে বড় প্রকল্প (মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার) বাস্তবায়ন হয়েছে, এতে উৎসাহব্যঞ্জক কিছু হয়নি। ফলে আগামী দিনে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, সেগুলো কতটা কার্যকর হবে তা প্রশ্নবিদ্ধ। কেননা পিপিপির একটি অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল বেসরকারি খাত যুক্ত থাকলে ‘কস্ট ওভার রান’ এবং দেরিতে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে না। পাশাপাশি অপারেশনাল দক্ষতা বাড়বে। কিন্তু সেরকম কোনো ফল এখনো নজরে আসেনি। বিষয়টি হলো চুক্তির সময়ই নিশ্চিত করতে হবে বেসরকারি খাতের ঝুঁকির মাত্রা কতটুকু থাকবে। সেটি না করে সব ঝুঁকি যদি সরকারই ঘাড়ে নেয়, তাহলে তো হবে না। যদি এমন হয় সব ঝুঁকি আমার, লাভটা তোমার, তাহলে সেই আমলাদের দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে যে অবস্থা হয়, এখানেও এর ব্যতিক্রম কিছু হবে না। তাই এখন কার্যকর পিপিপি নিশ্চিত করতে নতুন করে ভাবতে হবে। আগামী অর্থবছরের এডিপিতে পিপিপির তালিকায় যুক্ত হওয়া ৭৯টি প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিবহণ ও যোগাযোগ খাতের প্রকল্প রয়েছে ২৯টি। এছাড়া শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতের ২৩টি, সাধারণ সরকারি সেবা খাতের একটি, কৃষির একটি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দুটি এবং গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাবলি খাতের ১১টি প্রকল্প রয়েছে। আরও আছে স্বাস্থ্য খাতের চারটি, শিক্ষার একটি, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির ছয়টি এবং সামাজিক সুরক্ষার একটি প্রকল্প। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মিত হলে ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ- পশ্চিমাঞ্চলের মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ ও নড়াইলের একাংশ এবং যশোরের দূরত্ব কমে আসবে। এই সেতুতেও যদি রেল যুক্ত করা হয়, তাহলে রেলের নেটওয়ার্ক আরও বিস্তৃত হবে। এসব দিক বিবেচনায় ১৯৯৯ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত পদ্মা সেতুর প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা করা হয়। সেখানে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য উপযুক্ত দুটি পথ চিহ্নিত করা হয়েছিল। এর মধ্যে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা পথটিকে সেতু নির্মাণের জন্য তখন বেছে নেওয়া হয়। ওই সময়ই আরেকটি নির্বাচিত পথ ছিল মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া থেকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া। এখন এই চিহ্নিত জায়গায়ই দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজর ৭৫০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি নীতিগত অনুমোদন-পরবর্তী প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানির এমআরটি লাইন-২ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা। এটির বিস্তারিত সমীক্ষার কাজ চলছে। প্রকল্পটির আওতায় রাজধানীর গাবতলী-মোহাম্মদপুর-নিউমার্কেট-গুলিস্তান-কমলাপুর-সাইনবোর্ড হয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা সদর পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে। এক্ষেত্রে গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত ব্রাঞ্চ লাইন সমন্বয়ে উড়াল ও পাতাল মিলিয়ে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেলের লাইন তৈরি করা হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে এটি নির্মাণের লক্ষ্য রয়েছে। পিপিপির আওতায় হাতে নেওয়া হচ্ছে কনস্ট্রাকশন অব ঢাকা আউটার রিং রোড প্রকল্পটি। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা। এটি নিয়ে বিস্তারিত সমীক্ষার কাজ চলছে। এছাড়া কনস্ট্রাকশন অব চিটাগং টু কক্সবাজার হাইওয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা। এটির বিস্তারিত সমীক্ষার কাজ চলছে। আপগ্রেডিং অব গাবতলী-সাভার-নবীনগর ইনটু ফোর লেন এক্সপ্রেসওয়ে অন পিপিপি বেসিস প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা। প্রকল্পটির বিস্তারিত সমীক্ষার কাজ চলছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের আওতায় সার্কুলার রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। এটির বিস্তারিত সমীক্ষার কাজ চলছে। কনস্ট্রাকশন অব বে-টার্মিনাল প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। প্রকল্পটির বিস্তারিত সমীক্ষার কাজ চলছে। এছাড়া ঢাকা ইস্ট ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। এটি নীতিগত অনুমোদন-পরবর্তী প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।