মধ্যপ্রাচ্যের আশপাশে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমানবাহী রণতরী মোতায়েন করছে যুক্তরাষ্ট্র

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে টানা হামলা-পাল্টা হামলা চলছে। পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। ইতোমধ্যে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ এই সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়ে এসেছে। তবে সংঘাতের অব্যাহত বিস্তার এবং উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের আশপাশে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমানবাহী রণতরী মোতায়েন করতে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার (২০ জুন) এ তথ্য জানিয়েছে জর্ডানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়া নিউজ। একজন মার্কিন নৌবাহিনীর কর্মকর্তা বরাত দিয়ে রয়া নিউজ জানিয়েছে, ইউএসএস জেরাল্ড আর. ফোর্ড বিমানবাহী রণতরী আগামী সপ্তাহে ইউরোপীয় জলসীমার উদ্দেশে রওনা দেবে। ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলের মধ্যে সংঘর্ষ শুরুর পর অঞ্চলজুড়ে উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে এটি হবে মধ্যপ্রাচ্যের আশপাশে মোতায়েন তৃতীয় মার্কিন ক্যারিয়ার। নৌবাহিনীর ওই কর্মকর্তার মতে, ইউএসএস জেরাল্ড আর. ফোর্ড আগামী ২৪ জুন সকালে তার হোম পোর্ট ভার্জিনিয়ার নরফোক থেকে ইউরোপের উদ্দেশে রওনা হবে, এটি তার পূর্বনির্ধারিত মোতায়েনের অংশ। ২০১৭ সালে কমিশনপ্রাপ্ত এই জাহাজটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে আধুনিক ও পরমাণু-চালিত প্রধান বিমানবাহী রণতরী। ১ লাখ টন ওজনের এই জাহাজটি বর্তমানে মার্কিন নৌবাহিনীর প্রযুক্তিগত দিক থেকে সবচেয়ে উন্নত এবং শক্তিশালী ক্যারিয়ার হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রতিবেদনে রয়া নিউজ জানায়, বর্তমানে ইউএসএস কার্ল ভিনসন কয়েক মাস ধরে মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন রয়েছে এবং এটি ইয়েমেনে হুথিদের লক্ষ্য করে চালানো মার্কিন বিমান হামলায় অংশ নিয়েছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপজুড়ে অবস্থিত বিভিন্ন ঘাঁটিতে বড় সামরিক পরিবহন বিমান পাঠিয়েছে এবং কাতারে অবস্থিত আল উদেইদ বিমানঘাঁটি থেকে বহু বিমান সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সম্ভাব্য ইরানি হামলার আশঙ্কায় এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এদিকে শুক্রবার (২০ জুন) নিউজার্সিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে ইসরায়েল জয়লাভ করছে। ইসরায়েল যেহেতু বর্তমানে জয়ের পথে রয়েছে, তাই তাদের এখন হামলা বন্ধ করতে বলা আমার জন্য সহজ নয়। ট্রাম্প বলেন, যদি কেউ জয়ী হয়, তাহলে তাকে হামলা বন্ধ করতে বলা কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু কেউ যদি পরাজিত হয়, তখন তাকে থামতে বলা সহজ হয়। তবে আমরা আলোচনার জন্য প্রস্তুত আছি এবং ইরানের সঙ্গেও কথা বলছি। কী হয়, তা দেখা যাক। এ সময় ট্রাম্প দাবি করেন, চলমান যুদ্ধে ইসরায়েল ইরানের চেয়ে ভালো করছে। তিনি বলেন, ইসরায়েল যখন জয়ের পথে থাকে, তখন তাদের থামানো কঠিন হয়ে পড়ে। ইসরায়েল খুব ভালো করছে যুদ্ধে, আর ইরান তুলনামূলকভাবে কম সফল। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই মন্তব্যে স্পষ্ট হয়, তেল আবিবের সামরিক অভিযানের প্রতি ওয়াশিংটনের সমর্থন অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে দখলদার ইসরায়েলের হামলা চলাকালীন ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো আলোচনায় বসবে না বলে জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। খবর বিবিসির। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় শুক্রবার (২০ জুন) আলোচনায় মিলিত হয়েছিলেন ইরান ও ইউরোপের একাধিক দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। বৈঠক শেষে ইরান জানায়, দখলদারদের হামলা চলমান থাকা অবস্থায় তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা করবে না। পাশাপাশি, যেকোনো আলোচনায় বসার আগে ‘জঘন্য’ হামলার দায়ে ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক বিচারের আওতায় আনতে হবে বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দেয় তেহরান। আব্বাস আরাগচি বলেন, ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ হলে এবং ইরানে যে জঘন্য হামলা চালানো হয়েছে, তার জন্য আগ্রাসনকারীদের বিচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হলে ইরান আবারও কূটনৈতিক সমাধানের পথ বিবেচনা করতে প্রস্তুত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে শান্তিপূর্ণ উদ্দেশে পরিচালিত হচ্ছে। এসব কর্মসূচির ওপর হামলা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ইরান তার আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ অব্যাহত রাখবে বলেও জানান তিনি।