ফেনীতে দুই নদীর বাঁধে ভাঙন, ৯ গ্রাম প্লাবিত

২২ জুন, ২০২৫ | ৫:১৫ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ফেনীতে মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর বাঁধের দুটি স্থান ভেঙে অন্তত ৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া পরশুরাম উপজেলার সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধ উপচে পানি ঢুকতে শুরু করে। রাতে মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীতে ভাঙন দেখা দেয় বলে জানিয়েছেন ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাশেম। তিনি বলেন, টানা কয়েক দিনের মুষলধারে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে মুহুরী, সিলোনিয়া ও কহুয়া নদীতে পানি বাড়তে শুরু করে। পানির প্রবল তোড়ে বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পর ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়নের বণিকপাড়া গ্রামের সহদেব বৈদ্যের বাড়িসংলগ্ন মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের প্রায় ৫০ মিটার অংশ ভেঙে গেছে। পরে সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের গোসাইপুর এলাকায় একটি অংশেও কয়েক মিটার ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এতে ওই এলাকার বেশ কিছু গ্রামে পানি ঢুকেছে। ফুলগাজীর স্থানীয় বাসিন্দা শাহাবুদ্দিন বলেন, বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে পানি ঢুকে উপজেলার উত্তর বড়ইয়া, দক্ষিণ বড়ইয়া, বনিপাড়া, বিজয়পুর, বসন্তপুর, জগৎপুর, গোসাইপুর, নীলক্ষী ও করইয়া গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উত্তর বড়ইয়া গ্রামের বাসিন্দা সঞ্জীব বণিক জানান, ‘বৃহস্পতিবার রাত থেকে নদীর পানি ঘরে ঢুকে পড়ায় শিশুসহ পরিবারের সকলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছি। ঘরের আসবাবপত্র সব ডুবে রয়েছে। পুকুরের সব মাছ ভেসে গেছে। চুলা জ্বালাতে না পারায় রান্না হচ্ছে না।’ এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মুহুরী নদী সংলগ্ন ফুলগাজী বাজারের গার্ডওয়াল উপচে বাজারে পানি ঢুকে পড়ে। রাতভর ফুলগাজী বাজার হাঁটুপানিতে নিমজ্জিত থাকলেও শুক্রবার ভোর থেকে পানি নেমে যায়। অপরদিকে সিলোনিয়া নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের সুবার বাজারের দক্ষিণ ও উত্তর পাশে মনিপুর গ্রামের আগে থেকেই ভাঙা চারটি অংশ দিয়ে প্রবলবেগে পানি ঢুকছে। হু হু করে লোকালয়ে পানি ঢুকতে থাকায় স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ হাসান বলেন, গত বছরের ভয়াবহ বন্যার পর সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের ভাঙ্গনগুলো মেরামত না করায় গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। গত বছরের বন্যার ধকল এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি পরশুরাম উপজেলার মানুষ। এখন পানি দেখলেই বুক ধড়ফড় করে।’ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, গত বছরের বন্যায় তিনটি নদীর বেড়িবাঁধের ৫২টি স্থানে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছিল। তারমধ্যে অধিকাংশ বাঁধই মেরামত করা হয়েছে, তবে বেড়িবাঁধের ১০-১২টি অংশ এখনো মেরামত না হওয়ায় এসব স্থান দিয়ে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। এছাড়া মেরামত করা বেড়িবাঁধের আটটি স্থানে নতুন করে ফাটল ও ভাঙন দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ পরশুরাম উপজেলার বিভিন্ন এলাকার স্থানীয়দের। ফুলগাজী উপজেলার ইউএনও ফাহরিয়া ইসলাম বলেন, মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধের ভাঙ্গনের খবর পেয়ে তিনি ও ফেনীর জেলা প্রশাসক বৃহস্পতিবার রাতেই ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পানিবন্দী মানুষদের জন্য ফুলগাজী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়কে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করেন তিনি। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ভাঙ্গনকবলিত অংশ পরিদর্শন করেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পুর) ওয়াসিম আকরাম জানান, বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে ভারী বর্ষণ বন্ধ থাকায় মুহুরী নদীতে পানি কমতে শুরু করেছে। শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত মুহুরী নদীর পানি ১১ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই নদীতে পানির বিপদসীমা ১২ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার। ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নতুন করে বাঁধের আর কোনো অংশ যেন না ভাঙে সে বিষয়ে নজর রাখা হচ্ছে। বাঁধটি মাটির হওয়ায়, নদীতে পানি বাড়লেই ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার জানান, মুহুরী বাঁধের যে অংশটি ভেঙেছে সেটি আরসিসি ঢালাই করা। মাটির বাঁধ ভেঙে যাওয়ার শঙ্কা থাকায় সেখানে মাটির বাঁধের উপরে আরসিসি ঢালাই করা হয়েছিল। সে অংশটিও ধসে পড়েছে। বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশগুলো মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা তৎপর আছে বলেও জানান তিনি।