আন্দোলন করে কেউ কিছুই করতে পারবে না

৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ৯:১৬ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের কল্যাণে কাজ করছে। তাই জনগণ তাদের সঙ্গে আছে। জনগণ যতক্ষণ তাদের সঙ্গে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন-সংগ্রাম করে কেউ কিছু করতে পারবে না। দেশ আরও এগিয়ে যাবে। দেশের অগ্রগতি আর কেউ রুখতে পারবে না। গতকাল বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পূর্বাচল চার নম্বর সেক্টরে দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল নির্মাণকাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাতাল রেল নির্মাণকাজের উদ্বোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আরেকটি মাইলফলক স্থাপিত হলো। পাতাল রেলে বাংলাদেশের নবযাত্রা শুরু হলো। অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। বিএনপির ছেড়ে দেওয়া ছয়টি আসনে উপনির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমরা যে এত বছর মানুষের জন্য কাজ করলাম; এর ফলে মানুষ আমাদের ভোট দিচ্ছে। কাজের মধ্য দিয়ে জনগণের আস্থা-বিশ্বাস আমরা পাচ্ছি। জনগণের মন জয় করেই আমরা ভোট পাচ্ছি। বগুড়া ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে নৌকার প্রার্থী ছিলেন। সেখানে তাঁরা জিতেছেন। ঠাকুরগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন না। বগুড়ার কাহালু-নন্দীগ্রামে জাসদকে দিয়েছিলাম, সেখানে তারাও জিতেছে। যাঁরা ভোট দিয়েছেন, তাঁদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্'ি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। এটা সম্ভব হয়েছে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে বলেই। ইনশাআল্লাহ ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ 'স্মার্ট বাংলাদেশ'। দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-১ নির্মাণকাজের এই উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দেশ পাতাল রেল যুগে প্রবেশ করল। উদ্বোধন অনুষ্ঠান ঘিরে মানুষের মধ্যে উচ্ছ্বাস ও আনন্দ-উদ্দীপনা ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরী এবং রূপগঞ্জসহ আশপাশের এলাকা থেকে রংবেরঙের পোশাকে সজ্জিত আওয়ামী লীগ ও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারদলীয় বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত করে শোডাউন করেছেন। তাঁদের সঙ্গে সাধারণ মানুষ ও এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন। লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে উদ্বোধন অনুষ্ঠান ও সুধী সমাবেশ কার্যত বিশাল জনসমাবেশে রূপ নেয়। অনেকে আশপাশের সড়ক, উঁচু ভবন ও ছাদে অবস্থান নেন। প্রধানমন্ত্রী সকাল ১১টায় অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছে প্রথমেই নির্মাণকাজের উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন। এরপর সেখানে মোনাজাত ও দোয়া করা হয়। প্রধানমন্ত্রী সমাবেশমঞ্চে আসন গ্রহণের পর উদ্বোধন অনুষ্ঠান শুরু হয়। এ সময় এমআরটি লাইন-১ এর ওপর একটি ভিডিওচিত্র দেখানো হয় এবং মেট্রোরেল প্রকল্পের ওপর এটুআই নির্মিত একটি থিম সং পরিবেশিত হয়। মেট্রোরেলকে সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর আগে মেট্রোরেল উপহার দিয়েছি। সেটি ওপর দিয়ে যাবে। এবার মাটির নিচ দিয়ে যাবে পাতাল রেল। এটি নির্মাণ করতে গিয়ে কোনো পরিষেবা স্থানান্তর করতে হবে না। সবকিছু স্বাভাবিক রেখেই পাতাল রেলের নির্মাণকাজ চলবে। জনগণের চলাচলেও কোনো সমস্যা হবে না। মাটির নিচে শব্দহীন বোরিং মেশিন দিয়ে গর্ত করে টানেল করা হবে। মাটির ১০ মিটার নিচে থেকে কাজ করা হবে। ওপর থেকে বোঝা যাবে না যে মাটির নিচে কাজ চলছে। প্রকল্পটি আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে পরিবেশবান্ধব হবে। নির্মাণকাজে জনগণের যেন কোনো অসুবিধা না হয়- সেদিকেও খেয়াল রাখা হবে। রাজধানীতে মোট ছয়টি মেট্রোরেল হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এ লাইনগুলো করার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ শহরে তিনটি মেট্রোরেল লাইন করার পরিকল্পনা রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ গুরুত্বপূর্ণ জেলা। এখানে অনেক কাজ হচ্ছে। তিনটি ফাস্ট ট্র্যাকসহ ৪৬টি ছোট-বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আড়াইহাজারে স্পেশাল ইকোনমিক জোন হচ্ছে। এতে জাপান বিনিয়োগ করছে। এর মাধ্যমে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। রূপগঞ্জে নতুন শহর পূর্বাচল স্মার্ট সিটি হবে। সেসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ শহরকে স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলায় নিহত মেট্রোরেলের কাজে যুক্ত সাত জাপানি পরামর্শকের কথা স্মরণ করেন। জঙ্গি হামলার পরও জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে (প্রয়াত) ও দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখায় তাঁদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপির উদ্দেশে বলেন, তাদের আন্দোলন বঙ্গোপসাগরে ডুবে গেছে। আন্দোলনের মরণযাত্রায় না গিয়ে নির্বাচনের যাত্রায় আসুন। নির্বাচনে যদি হারাতে পারেন, আমরা বিদায় নেব। আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হতে দলীয় নেতাকর্মীকে নির্দেশনা দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ডিসেম্বরে নির্বাচনে ফাইনাল খেলা। ষড়যন্ত্র, জঙ্গিবাদ, আগুন-সন্ত্রাস, ভোট চুরি, দুর্নীতি আর অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে খেলা হবে। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চলতি বছরই চালু করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ২০৩০ সালে মোট ছয়টি মেট্রো লাইনের কাজ শেষ হলে ঢাকা আধুনিক গণপরিবহনে সাজবে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী। এ ছাড়া বক্তব্য দেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক, বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি এবং জাইকার চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ইচিগুচি তমোহিডি। মেট্রোরেলের প্রকল্প পরিচিতি তুলে ধরেন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক। অনুষ্ঠান মঞ্চে আরও ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ বেগম রওশন আরা, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং নারায়ণগঞ্জের চারটি আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান, নজরুল ইসলাম বাবু, একেএম সেলিম ওসমান ও লিয়াকত হোসেন খোকা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ছাড়াও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং সরকারি কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।