সমঝোতায় রাজি নয় ফিলিপাইন রিজার্ভ চুরির ৬ বছর

৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ৯:১১ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির অর্থ সমঝোতার প্রক্রিয়ায় ফেরত দিতে রাজি নয় ফিলিপাইন। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে সমঝোতার পরামর্শের পর যোগাযোগ করে এমন বার্তা পেয়েছে বাংলাদেশ। ফলে এখন মামলা চালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমেই অর্থ ফেরতের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কবে অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে বা আদৌ ফেরত পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। ফিলিপাইনে চলমান একটি মামলার সাক্ষী এবং বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বৈঠকের জন্য বাংলাদেশের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এখন ফিলিপাইনে অবস্থান করছে। বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে আগামীকাল তাদের দেশে ফেরার কথা রয়েছে। ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। চুরি করে শ্রীলঙ্কায় নেওয়া ২ কোটি ডলার ওই সময় ফেরত পায় বাংলাদেশ। আর ফিলিপাইনে নেওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে দেশটির আদালতের নির্দেশে ক্যাসিনো মালিক কিম অং ২০১৬ সালের নভেম্বরে প্রায় দেড় কোটি ডলার ফেরত দেয়। বাকি ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার উদ্ধারে চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। অর্থ উদ্ধারে সহায়তার জন্য ফিলিপাইনের বিভিন্ন সরকারি সংস্থা তখন বাংলাদেশের পক্ষে ১২টি মামলা করে। শুরুর দিকে এ নিয়ে দেশটির আদালতে জোর তৎপরতা থাকলেও দেশটির সরকার পরিবর্তনের পর আর মামলা এগোয়নি। জানা গেছে, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাসের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এখন ফিলিপাইনে আছে। বাংলাদেশের ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলে অন্যদের মধ্যে আছেন- আইনজীবী ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি, বিএফআইইউর দু'জন এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের দু'জন কর্মকর্তা। সে দেশের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল, ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস এবং বার্নাস ল' অফিসের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক হয়েছে। আজ শুক্রবার তিন পক্ষের সঙ্গে একটি সমন্বয় সভা হবে। এ ছাড়া দেশটির মাকাতি, মান্ডলুয়ং ও প্যারানাক শহরের তিনটি আঞ্চলিক বিচারিক আদালতের শুনানিতে অংশ নিয়ে তাঁদের সাক্ষী দেওয়ার কথা রয়েছে। রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনে চলমান মামলার অংশ হিসেবে এসব কার্যক্রম চলছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা চলার প্রথম ধাপ হিসেবে সমঝোতার চেষ্টাটি হয়েছে বাংলাদেশের আইনি সহায়তা প্রতিষ্ঠান কোজেন ও'কনরের পক্ষ থেকে। বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনের আরসিবিসিসহ ছয় বিবাদীর 'মোশন টু ডিসমিস' বা মামলা না চালানোর আবেদন খারিজ করে গত ১৩ জানুয়ারি রায় দেন নিউইয়র্ক স্টেট কোর্ট। এতে বলা হয়, রিজার্ভ চুরির দায়ে আরসিবিসিসহ অন্যান্য ১৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা চলায় কোনো বাধা নেই। মামলা চলার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বিধি অনুযায়ী ওই রায়ে বলা হয়, ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আরসিবিসিসহ অন্য বিবাদীদের সঙ্গে আদালতের বাইরে সমঝোতার চেষ্টা করতে হবে। সে আলোকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করেও সমঝোতার কোনো আশ্বাস মেলেনি। সংশ্নিষ্টরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করার তিন বছর পর এসে জানা গেল মামলা চলবে কিনা। ফলে সব পক্ষের যুক্তিতর্ক এবং সাক্ষী উপস্থাপন শেষে মামলা শেষ হতে যে অনেক সময় লাগবে তা নিশ্চিত করে বলা যায়। আবার যুক্তরাষ্ট্রের আদালত কোনো আন্তর্জাতিক আদালত নয়। ফলে সেখানে যদি বাংলাদেশের পক্ষে রায় আসে তা অন্যরা মানবে কিনা তা নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। ফলে আইনি প্রক্রিয়ায় আদৌ অর্থ ফেরত মিলবে কিনা সে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে। জানতে চাইলে বাংলাদেশের আইনজীবী ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি বলেন, মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের রিজার্ভের অর্থ ফিলিপাইনে গেছে। আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুযায়ী ফিলিপাইনের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের কাছে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্সের আওতায় আবেদন করা হয়েছিল। যাদের হাত হয়ে বাংলাদেশের অর্থ ফিলিপাইনের মুদ্রা পেসোতে রূপান্তর হয়েছে, তাদের সম্পদ ক্রোকের জন্য ওই আবেদন করা হয়। এ পর্যায়ে মুদ্রা বিনিময় প্রতিষ্ঠান ফিলরেমের বিরুদ্ধে শুনানি চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ২০১৬ সালে অর্থ চুরি হলেও মামলার পথে যাওয়া হয় ২০১৯ সালে। এর আগ পর্যন্ত সমঝোতার মাধ্যমে অর্থ ফেরতের চেষ্টা হয়। তবে শুরু থেকেই দেশটির পক্ষ থেকে সমঝোতায় তেমন আগ্রহ দেখানো হচ্ছে না। এর পর অর্থ যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র থেকে চুরি হয়, সে কারণে চুরির অর্থ ফেরত ও দোষীদের চিহ্নিত করতে ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটন সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে মামলা করে বাংলাদেশ। ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংক, ক্যাসিনো মালিক কিম অংসহ ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এ মামলা হয়। তবে মামলা করার এক বছর দুই মাস পর ২০২০ সালের মার্চে ম্যানহাটন সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট জানিয়ে দেন, মামলাটি তাঁদের এখতিয়ারাধীন নয়। এর পর ২০২০ সালের ২৭ মে নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট কোর্টে মামলার আবেদন করা হয়। মামলার বিষয়ে বাংলাদেশের আইনি সহায়তা প্রতিষ্ঠান কোজেন ও'কনর ওই সময় বিবাদীদের নোটিশ দেয়। এর পর আরসিবিসি, অভিযুক্ত ব্যক্তি লরেঞ্জ ভি. টান, রাউল টান, সোলায়ের ক্যাসিনো, ইস্টার্ন হাওয়ায়ে এবং কিম অং আদালতে 'মোশন টু ডিসমিস' বা মামলা না চালানোর অনুরোধ জানিয়ে আবেদন করে। তাদের আবেদনের বিষয়ে ২০২১ সালের ১৪ জুলাই এবং ১৪ অক্টোবর শুনানি হয়। এর ভিত্তিতে গত বছরের ৮ এপ্রিল আংশিক রায়ে সোলায়ের ক্যাসিনো ও ইস্টার্ন হাওয়ায়েকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বাকি ১৮ বিবাদীর বিষয়ে ১৩ জানুয়ারি রায় হয়েছে। ওই রায়ের ফলে এখন আর মামলা চলতে বাধা নেই। ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আদালত অনেক যাচাই-বাছাই করে মামলা নেয়। মামলা চলার রায়ের ফলে অর্থ ফেরত পাওয়ার আশা তৈরি হয়েছে। মামলা চলবে কিনা তা জানতেই এতদিন লাগল। তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে মামলা নিষ্পত্তি হতে কতদিন লাগতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাবে না। তবে চূড়ান্ত রায় পেতে আরও তিন বছরের মতো লাগতে পারে।