দানশীল রাজনীতিবিদের আড়ালে ভয়ংকর ডাকাত

৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ৭:২৩ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

মাহতাব উদ্দিনকে পটুয়াখালীর লোকজন চেনেন রাজনীতিবিদ হিসাবে। এলাকাবাসী জানেন, রাজনীতির পাশাপাশি মাহতাব ঢাকায় ঠিকাদারি ব্যবসা করেন। তার চলাফেরায় রাজকীয় ভাব। বিপদে-আপদে এলাকার লোকদের আর্থিকভাবে সহায়তাও করেন। যার অন্যতম সহযোগী কাউসার স্থানীয় যুবলীগের দাতা সদস্য। কিন্তু প্রকৃতার্থে তারা পেশাদার ডাকাত দলের সদস্য। সহযোগীদের নিয়ে অভিনব কায়দায় পুলিশের পোশাক পরে ডাকাতি করেন মাহতাব ও কাউসার। সম্প্রতি ২০২২ সালের একটি ডাকাতি মামালায় এই দুজনসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১১ লাখ টাকা এবং ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত দুটি মোটরসাইকেল ও হ্যান্ডকাফ। চারজনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন অর রশিদ বৃহস্পতিবার বলেন, গত বছরের ৬ অক্টোবর বাসে ঢাকা থেকে শরীয়তপুর যাওয়ার সময় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন চুনকুটিয়া এলাকায় একটি বাস দিন-দুপুরে ডাকাতদের কবলে পড়ে। ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ডাকাত দলের দুজন সদস্য মোটরসাইকেল ব্যারিকেড দিয়ে বাসটি থামায়। এরপর বাস থেকে জনৈক রফিকুল ইসলাম নামের একজন ব্যবসায়ীকে কিলঘুসি মারতে মারতে নামিয়ে নিয়ে আসে। এরপর সোর্সের দেওয়া তথ্যমতে তার কাছ থেকে নগদ ৪১ লাখ টাকা টাকা নেয়। তারা যাওয়ার সময় ওই ব্যবসায়ীকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে মোটরসাইকেলে সটকে পড়ে। এ ঘটনায় কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করা হলে ছায়া তদন্ত শুরু করে ডিবি লালবাগ বিভাগ। তদন্তের ভিত্তিতে মুজিবুর রহমান ওরফে নলা মুজিবর, জামাল হোসেন, কাউসার আহমেদ ও মাহতাব উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি বলেন, মাহতাব নিজের নির্বাচনি এলাকায় বড় রাজনীতিবিদ হিসাবে পরিচিত। ঢাকায় তিনি প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার বলে স্থানীয়রা জানতেন। তার নামে অন্তত ৬টি ডাকাতি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া আরও একাধিক ডাকাতির কথা সে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন অর রশিদ জানান, মাহতাব স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা। ডিবি সূত্র জানায়, ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম মোবাইল এবং কম্পিউটার অ্যাক্সেসরিজ সামগ্রী কেনাবেচার ব্যবসা করেন। তিনি বলেন, গত বছরের ৬ অক্টোবর তাঁতীবাজারের একটি ব্যাংক থেকে ৪১ লাখ টাকা তোলেন। এরপর বাবুবাজার থেকে একটি বাসে উঠে শরীয়তপুরের নড়িয়াতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু পথেই তাকে বাস থেকে নামিয়ে টাকা কেড়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনার পর গত বছরের ৪ নভেম্বর সূত্রাপুর এলাকার একটি ফাস্টফুড দোকানে ডাকাতির উদ্দেশ্যে রেকি করতে যায় গ্রেফতার চারজন। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ যাওয়ার পর তারা দ্রুত সেখান থেকে সটকে পড়ে। এই ঘটনায় সূত্রাপুর থানায় একটি মামলা করা হয়। ওই মামলারও ছায়া তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগ। ডিবি জানায়, প্রথমে গ্রেফতার করা হয় মজিবুর রহমান ও জামাল হোসেনকে। তাদের বাড়ি বরিশালের কাশিপুর এলাকায়। মুজিবর ও জামালকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা চক্রের অপর দুই সদস্য মাহতাব ও কাউসারের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করে। এরপর তাদের গ্রেফতারে মাঠে নামে গোয়েন্দা পুলিশ। খবরটি জেনে যায় মাহতাব ও কাউসার। এরপর থেকে তারা ঘনঘন অবস্থান পরিবর্তন করতে থাকেন। অবশেষে জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে কাউসারকে পটুয়াখালী ও মাহতাবকে খুলনা থেকে গ্রেফতার করা হয়। ডিবি লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলেন, গ্রেফতারকৃত প্রত্যেক আসামির নামে বেশ কয়েকটি ডাকাতি ও দস্যুতার মামলা আছে। এই চক্রের সদস্যরা সারা দিন ঢাকার বিভিন্ন ব্যাংক এলাকায় ঘোরাফেরা করে। কোনো ব্যাংক থেকে কেউ মোটা অঙ্কের টাকা তুলেছে কিনা তা সোর্সদের মাধ্যমে খবর নেয়। এ রকম তথ্য পাওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে টার্গেট করে অপারেশন শুরু করে। এভাবেই তারা ডাকাতি করে আসছিল। এ ঘটনায় গ্রেফতার চারজনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাদের জবানবন্দিতে চক্রের আরও কয়েকজন সদস্যের নাম জানা গেছে। যাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। সূত্র জানায়, এ চক্রের সদস্যরা ডাকাতির টাকায় দ্রুত জমি কেনে। এছাড়া বাড়ির কাজেও হাত দেয়। এভাবে তারা ডাকাতির টাকায় অনেক মূল্যবান জমি ছাড়াও মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে বাড়ি নির্মাণ করেছে। এছাড়া পলাতক ডাকাত সদস্যদের মধ্যে অন্যতম হলো রাসেল কবির। সে বরগুনার আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি।