সম্পর্কে আরও কাছাকাছি ঢাকা ও ওয়াশিংটন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১০:০৮ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরও নতুন মাত্রা পাচ্ছে। বেশ কয়েক বছর ধরে সম্পর্কে শীতলতা থাকলেও চলতি বছর থেকে মতপার্থক্য দূর করে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার পক্ষে দুই দেশ। অস্বীকারের প্রথা থেকে বের হয়ে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার মূল্যবোধক সামনে রেখে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে প্রস্তুত ঢাকা। আর সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে দুই দেশের মধ্যে চলছে নিবিড় যোগাযোগ। শুধু চলতি মাসেই প্রথমার্ধে ঢাকা সফর করবে মার্কিন তিনটি প্রতিনিধি দল। আর এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র সফরের কথা রয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা সফরে আসছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রমবিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি কারা ম্যাকডোনাল্ড। মূলত বাংলাদেশের শ্রমমান উন্নয়ন ও অধিকারের বিষয়ে আলোচনা করবেন মার্কিন এ কর্মকর্তা। তিন দিনের সফরে ৯ ফেব্রুয়ারি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। এ দিনই পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে কারা ম্যাকডোনাল্ডের বৈঠকের কথা রয়েছে। আর ৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের শ্রম খাতের সংশ্নিষ্ট অধিকার কর্মী এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। কারা ম্যাকডোনাল্ডের পরপরই রোহিঙ্গা সংকট ও এর মানবিক সহায়তার বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ সফর করবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একটি প্রতিনিধি দল। তারা কক্সবাজার ও ভাসানচরে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। সেসঙ্গে রোহিঙ্গাদের চাহিদা ও রোহিঙ্গা শিবির ঘিরে নিরাপত্তার বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবেন। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি দুই দিনের সফরে ঢাকা আসছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেরেক এইচ শোলে। সম্প্রতি ঢাকা সফর করে যাওয়া মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার কাছে তাঁর কাজের জবাবদিহি করেন। শোলের সফরে যুক্ত হবে রোহিঙ্গা নিয়ে কাজ করতে আসা মার্কিন প্রতিনিধি দলটি। রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে এই সফরে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এ ছাড়া দ্বিপক্ষীয় সব বিষয়ে আলোচনা করবেন তিনি। ডেরেক এইচ শোলের সফরে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের সূচি চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলরের। আর আগামী এপ্রিলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে যুক্তরাষ্ট্র সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে ওয়াশিংটন। সেখানে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় বিষয়গুলোতে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। সফরগুলোর বিষয়ে নিশ্চিত করেছে ঢাকা ও ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সূত্রগুলো। নাম না প্রকাশের শর্তে এক কূটনীতিক বলেন, ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে এপ্রিলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সফরের আমন্ত্রণ নিয়ে আলোচনা চলছে। ঢাকার পক্ষ থেকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে সফরের ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়েছে। এখন সে অনুযায়ী ওয়াশিংটন থেকে আমন্ত্রণপত্র ঢাকাকে পাঠানো হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের এখনও কিছুই নির্ধারণ করা হয়নি। সফরের আগে আলোচনার বিষয়গুলো সুনির্দিষ্ট করা হবে। কারা ম্যাকডোনাল্ডের সফরে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের শ্রম আইনে ব্যবহারের বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হবে। বাংলাদেশে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিদ্যমান শ্রম আইনের অনেক ধারা কার্যকর নয়। পুরো দেশে সব শ্রমিকের জন্য যাতে একই আইন কার্যকর হয় সে বিষয়টি জোর দেওয়া হবে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে। পাশাপাশি বাংলাদেশের শ্রমমান, সংগঠন করার অধিকার, কাজের পরিবেশের মতো বিষয়গুলোতে আলোচনা করবে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র। নাম না প্রকাশের শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে যখন বিনিয়োগগুলো নিয়ে আসা হয়েছিল, তখন শ্রম আইনের বেশ কিছু ধারা তাদের জন্য কার্যকর হবে না, সেই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। সে সময়ে বিষয়টি ঠিক হয়নি। এখন এটি পরিবর্তনের জন্য বৈশ্বিক চাপ রয়েছে। শ্রম মন্ত্রণালয় এ বিষয়টিতে কাজ করছে। আইন পরিবর্তনের জন্য সংশ্নিষ্ট বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলোচনা করছেন তাঁরা। নিকট-ভবিষ্যতে এ আইনটি পরিবর্তন করা হবে। কারণ এর সঙ্গে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের জিএসপি সুবিধা চালু হওয়ার বিষয় রয়েছে। আর সেসঙ্গে ডিএফসি তহবিল পাওয়ারও বিষয় জড়িত। তিনি বলেন, আগে যে অস্বীকার করার প্রবণতা ছিল, তা থেকে বের হয়ে আসছে সরকার। শ্রম বিষয়ে বাংলাদেশের যে ত্রুটিগুলো রয়েছে, তা স্বীকার করে সংশোধনে মার্কিন সহায়তা চাওয়া হবে কারা ম্যাকডোনাল্ডের সঙ্গে বৈঠকে। যেমনটি করা হয়েছিল র‌্যাবের সংস্কারের বিষয়ে। ডেরেক এইচ শোলের সফরকে কেন্দ্র করে সব প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা। মার্কিন এ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রোহিঙ্গা সংকট ও মানবিক সহায়তার বিষয়ে জোর দিলেও দ্বিপক্ষীয় যে কোনো বিষয়ে দুই দেশের আলোচনার সুযোগ রয়েছে। যেহেতু সম্প্রতি ডোনাল্ড লুর সফরে মানবাধিকার, গণতন্ত্র, নির্বাচনের মতো বিষয়গুলোতে ইতোমধ্যে আলোচনা হয়েছে। আর ম্যাকডোনাল্ডের সফরে শ্রম বিষয়টিতে বিস্তারিত আলোচনা হবে। ফলে এত কম সময়ের মধ্যে একই বিষয়ে বৈঠক চাইছে না ঢাকা। তবে তারপরও সব বিষয়ে পূর্ণ প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে। ডেরেক এইচ শোলের সফরে রোহিঙ্গা সংকটের পাশাপাশি, ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল (আইপিএস), সামরিক চুক্তি জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন এগ্রিমেন্ট (জিএসওএমআইএ) ও অ্যাকুইজিশন ক্রস সার্ভিস এগ্রিমেন্ট (এসিএসএ), ইউক্রেন সংকট, নিরাপত্তা, শান্তিরক্ষা ও প্রতিষ্ঠা, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। নাম না প্রকাশের শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ডেরেক শোলের সঙ্গে বৈঠকে ঢাকার পক্ষ থেকে বাহিনী হিসেবে র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি জানানো হবে। বাংলাদেশ যখন এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে কাজ করবে, তখন মার্কিন পক্ষ থেকে যাতে এর প্রতিযোগিতা না করা হয় এবং বাহিনী সংস্কারের বিষয়গুলো তাঁর সামনে তুলে ধরা হবে। এর বাইরে শ্রম মানোন্নয়নে মার্কিন সহযোগিতা চাওয়া হবে। যাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে জিএসপি সুবিধা পেয়ে ডিএফসি তহবিল পেতে পারে বাংলাদেশ। আগামী জাতীয় নির্বাচন ও সাম্প্রতিক ইস্যুসহ সব মিলিয়ে চলতি বছরেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে যোগাযোগ আরও বাড়াবে ঢাকা।