ভোটের গোপন বুথে সাত্তারের পক্ষে ‘ভূত’

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১০:০৭ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর চেষ্টা চালালেও বহুল আলোচিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে ১৬ শতাংশ। কম ভোটের নির্বাচনেও বড় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অনেক কেন্দ্রে ভোটের গোপন কক্ষে অবস্থান নেন ৪৩ বছর বিএনপির রাজনীতি করা উকিল আবদুস সাত্তারের সমর্থক আওয়ামী লীগ কর্মীরা। ভোটারের আঙুলের ছাপ নেওয়ার পর বহিরাগতরা ইভিএমে বোতাম টিপে ভোট দেন বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। বেসরকারি হিসাবে উকিল সাত্তার কলার ছড়ি প্রতীকে ৪৪ হাজার ৯১৬ ভোট পেয়ে ষষ্ঠবারের মতো এমপি হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির আবদুল হামিদ ভাসানী লাঙ্গল প্রতীকে ৯ হাজার ৬৩৫ ভোট পেয়েছেন। এ আসনে ভোটার ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩১৩ জন। গতকাল সকাল সাড়ে ৮টায় শুরু হয় ভোট গ্রহণ। তবে ভোটারদের আগ্রহ ছিল কম। আশুগঞ্জের স্টেশন রোড এলাকার শ্রমিক কল্যাণ কেন্দ্রে প্রথম সোয়া এক ঘণ্টায় কেন্দ্রটির ৩ এবং ৪ নম্বর বুথে দু'জন এবং ৫ নম্বর বুথে তিনজন ভোটার ভোট দেন। প্রথম দুই বুথে ভোটার সংখ্যা ৪০৮। ৫ নম্বর বুথের ভোটার সংখ্যা ৪০৬। পাঁচটি বুথের সব ক'টিতে ছিলেন উকিল সাত্তারের এজেন্ট। লাঙ্গলের এজেন্ট ছিলেন একজন। গত শুক্রবার থেকে লাপাত্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফের মোটরগাড়ি প্রতীকের এজেন্ট ছিলেন দু'জন। পৌনে দুই ঘণ্টায় সরকারি হাজী আব্দুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫ নম্বর বুথে ৫৪৩ জনের একজনও ভোট দেননি। রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ৪ নম্বর বুথে সকাল ১১টা পর্যন্ত ৩৮৯ জন ভোটারের একজনও ভোট দেননি। প্রথম তিন ঘণ্টায় আড়াইসিধা কে বি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৫ হাজার ৭৫৪ ভোটারের মধ্যে ২৪৩ জন ভোট দেন। এই কেন্দ্রেরও পাঁচটি বুথে উকিল সাত্তারের এজেন্ট ছিলেন। লাঙ্গল ও মোটরগাড়ির এজেন্ট ছিলেন একজন করে। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উকিল সাত্তারের এজেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। বাকি কেন্দ্রগুলোতে উকিল সাত্তারের প্রতিদ্বন্দ্বীদের এজেন্ট ছিলেন না। ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু সায়েম মিঠু, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহাম্মদ সেলিমসহ স্থানীয় নেতারা তৎপর ছিলেন। মোহাম্মদ সেলিম বলেন, আওয়ামী লীগ কর্মীরা বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে। কলার ছড়ির ব্যাজধারী এক ব্যক্তি নেতাদের কাছে অনুযোগ করেন, গোপন কক্ষে ঢুকতে না পারায় জানা যাচ্ছে না কে কোন প্রতীকে ভোট দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগ উকিল সাত্তারের জন্য ভোটার আনছে। কলার ছড়ি ফেল করলে দায় নিতে হবে স্থানীয় নেতাকর্মীকে। তাই বুথে প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়ার দাবি জানান ওই ব্যক্তি। বিকেল সাড়ে ৪টায় বাখরাবাদ গ্যাস কোয়ার্টারে স্থাপিত ভোটকেন্দ্রে জানা যায়, দুটি বুথে ৫ শতাংশেরও কম ভোট পড়েছে। ৮ নম্বর বুথে ৪০৬ ভোটারের ১৬ জন এবং ৭ নম্বর বুথে ৪০৭ ভোটারের ১৭ জন ভোট দেন। কেন্দ্রটিতে উকিল সাত্তারের এজেন্ট ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সরব উপস্থিতি ছিল। একই অবস্থা আরও অনেক কেন্দ্রে। উকিল সাত্তারের লাপাত্তা প্রতিদ্বন্দ্বী আফিস আহমেদের স্ত্রী মেহেরুন্নেসা দুপুরে আশুগঞ্জের শ্রমিক কল্যাণ কেন্দ্রে গেলে ভোটের গোপন কক্ষে যাওয়ার সময় তাঁকে অনুসরণ করা হচ্ছে, অভিযোগ করে ভোট দেননি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভোট দিয়ে দিচ্ছেন। প্রশাসনকে ধরিয়ে দেওয়ার পরও ব্যবস্থা নেয়নি। তবে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা রাফিউদ্দিন বলেছেন, গোপন বুথে বহিরাগত প্রবেশের ঘটনা ঘটেনি। সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরবিন্দ বিশ্বাসও বলেছেন, 'এমন অভিযোগ পাইনি।' যদিও সন্ধ্যার পর এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায়। একাধিক তরুণ অভিযোগ করেন, আঙুলের ছাপ নেওয়ার পর কলার ছড়ির এজেন্টরা ইভিএমে ভোট দিয়ে দেন। বিএনপির সিদ্ধান্তে পদত্যাগ করলেও উকিল সাত্তার নিজের ছেড়ে দেওয়া আসনে উপনির্বাচনে প্রার্থী হন। আওয়ামী লীগের তিন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও সরে যান। উকিল সাত্তারের পক্ষে প্রচার চালান। জাতীয় পার্টির দু'বারের এমপি জিয়াউল হক মৃধাও সরে যান উকিল সাত্তারের সমর্থনে। লাঙ্গলের প্রার্থী আবদুল হামিদ ভাসানী এবং মেহেরুন্নেসার অভিযোগ, উকিল সাত্তারের এলাকা সরাইলের অরুয়াইল, পাকশিমুল, আলীনগর ইউনিয়নের কেন্দ্রগুলোতে ভোটের নামে তামাশা হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়। মেহেরুন্নেসার অভিযোগ, কুট্টা ইউনিয়নের কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের আঙুলের ছাপ নেওয়ার পর উকিল সাত্তারের লোকজন ইভিএমে টিপ দিয়ে দেয়। অরুয়াইল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে সাত্তারের এক এজেন্টকে বুথে অবস্থান নিয়ে ইভিএম টিপে দিতে দেখা গেছে। ছবিতে দেখা যায়, তিনজন নারী একসঙ্গে বুথে অবস্থান করছেন। তবে প্রিসাইডিং অফিসার মওদুদ আহমেদ জানান, ম্যাজিস্ট্রেট তাৎক্ষণিক তদন্ত করে সত্যতা পাননি। প্রিসাইডিং কর্মকর্তার ভাষ্য, দু'জন নারী একসঙ্গে বুথে যান। তাঁদের সঙ্গে শিশুসন্তান থাকায় এজেন্টকে ডাকেন সহায়তার জন্য। তবে পোলিং অফিসার তাঁকে বসিয়ে দেন। যদিও ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একজন নারীকে কোথায় ভোট দিতে হবে- সেই নির্দেশ দিচ্ছেন উকিল সাত্তারের এজেন্ট। জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার শাহগীর আলম এবং পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন পরিদর্শনে আসছেন শুনে সরাইলের শাহবাজপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভোটার লাইনে দাঁড়িয়ে যান। কেন্দ্রে আসেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও সরে যাওয়া মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু। ভোটার কম কেন এ প্রশ্নে তিনি বলেন, এখন বোরোর মৌসুম। গ্রামের লোকজন মাঠে কাজে ব্যস্ত। রিটার্নিং অফিসার বলেন, মেঘলা আবহাওয়ার কারণে দিনে প্রথম ভাগে ভোটার কম। বেলা বাড়লে বাড়বে। ৮৪ বছর বয়সী উকিল সাত্তার দু'জনের কাঁধে ভর করে ভোটকেন্দ্রে যান। নিজ গ্রামের পরমানন্দপুরে ভোট দেন। তবে তিনি বক্তব্য দেননি নির্বাচন নিয়ে। ইভিএম নিয়ে নারী ও বয়স্করা বিপাকে পড়লেও আশুগঞ্জ উপজেলার তারুয়া ইউনিয়নের শালুকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেওয়া হাবিবুর রহমান বলেন, ভালো লেগেছে। আড়াইসিধা কে বি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এসেও ফিরে যান সাফিয়া বেগম। তিনি বলেন, 'কার্ড না আনায় ভোট দিতারি নাই।'