আরও একটি বিপর্যয়কর দিন কাটল আদানির

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১০:০৫ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানি আরও একটি বিপর্যয়কর দিন কাটালেন। গতকাল বুধবার তাঁর ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের শেয়ারদর আরও ৩০ শতাংশ কমেছে। তিনি এদিন এশিয়ার এবং ভারতের শীর্ষ ধনীর মুকুট হারিয়েছেন। গতকাল তাঁর কোম্পানির শেয়ারদর আরও ১১ বিলিয়ন ডলার কমেছে। আদানির সাম্রাজ্যে বিপর্যয় দেখা দিলেও তিনি ইসরায়েলের হাইফা বন্দর কিনে নিয়েছেন। বন্দরের আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর উপলক্ষে মঙ্গলবার হাইফায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীসহ ভারতের শীর্ষ রাজনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন। খবর এএফপি, রয়টার্স, ফোর্বস ও ব্লুমবার্গের। যুক্তরাষ্ট্রের হিনডেনবার্গ রিসার্চ আদানির বিরুদ্ধে বড় ধরনের জালিয়াতির অভিযোগ তোলার পরে এ নিয়ে টানা পাঁচ দিন পতন হলো তাঁর কোম্পানির শেয়ারদরের। গতকাল আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ারের দর বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে ২৯.৯৭ শতাংশ কমেছে। ব্লুমবার্গ নিউজ বলছে, গত পাঁচ দিনে আদানি গোষ্ঠী প্রায় ৯২ বিলিয়ন মূল্যের সম্পদ হারিয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আদানির সম্পদও কমেছে ৪০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। পতনের এ ধারা আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। আদানি বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনী তালিকা থেকে বাদ পড়েন মঙ্গলবারই। গতকাল আদানিকে পেছনে ফেলে ভারতীয় মুকেশ আম্বানি ভারত ও এশিয়ার সবচেয়ে ধনীর তালিকায় উঠে আসেন। চলতি বছরের শুরুতেও আদানি ছিলেন ১০০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদের মালিক। গত সপ্তাহেও ইলন মাস্ক এবং বার্নার্ড আর্নল্ট ও তাঁর পরিবারের পরে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনী ছিলেন আদানি। গতকাল আদানি ফোর্বসের ধনী তালিকায় ১৫তম স্থানে নেমে গেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি ৬৫ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ হারিয়েছেন। আদানির জন্য আরও মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে ভারতের বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার নতুন ঘোষণা। তারা বলেছে, হিনডেনবার্গের রিপোর্টের ভিত্তিতে তারাও তদন্তে করবে। গতকাল বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে আদানি টোটাল গ্যাসের শেয়ার মূল্য আরও ১০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এ কোম্পানির ৩৭.৪ শতাংশের মালিক ফরাসি জায়ান্ট টোটালএনার্জিস। ফলে গত পাঁচ দিনে আদানি টোটাল গ্যাসের শেয়ারমূল্য ২৭ বিলিয়ন ডলার হারিয়েছে। আদানি পোর্টসের মূল্য প্রায় ১৮ শতাংশ কমেছে। এক বছর আগের তুলনায় আদানি গ্রুপের ১০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারমূল্য ১০০ বিলিয়ন ডলার (১০ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা বা ১০.৬ ট্রিলিয়ন টাকা) কমেছে। এর মধ্যে কোনো কোনো কোম্পানির মূল্য ৬০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে। শেয়ারবাজারে আদানি গ্রিন এনার্জি, আদানি ট্রান্সমিশন এবং আদানি এন্টারপ্রাইজেস বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। আদানি গ্রিন এনার্জি সবচেয়ে খারাপ করেছে। এর দাম ৬০ শতাংশ কমেছে। ৪.৮৩ লাখ কোটি রুপি থেকে এর সম্পদ ১.৯৪ লাখ কোটি রুপিতে নেমে এসেছে। এর পরই রয়েছে আদানি ট্রান্সমিশন। কোম্পানিটি এই সময়ের মধ্যে ২.৭৫ লাখ কোটি রুপি হারিয়ে ১.৯৮ লাখ কোটি রুপিতে নেমে এসেছে। আদানি টোটাল গ্যাসের দাম ৪৭ শতাংশ কমেছে। এ কোম্পানি ৮০ হাজার কোটি রুপির বেশি লোকসান গুনেছে শেয়ার মার্কেটে। স্কুল পালানো আদানির ব্যবসা বন্দর এবং বিমানবন্দর থেকে খনি এবং সিমেন্ট পর্যন্ত বিস্তৃত। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছ থেকে অনৈতিক ব্যবসায়িক সুবিধা পেয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে আদানি তা অস্বীকার করেছেন। গত সপ্তাহে হিনডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্টে আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি এবং শেয়ারবাজারে জালিয়াতির অভিযোগ করা হয়। আদানি গোষ্ঠী ব্যাংক থেকে ২৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছে। তা পরিশোধ করার সামর্থ্য তাদের আছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। আদানি গ্রুপ অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ইসরায়েলের হাইফা বন্দরের আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর উপলক্ষে মঙ্গলবার অনুষ্ঠানে আদানি বলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে ভারতের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারি আছে। ভারত ও ইসরায়েল একসঙ্গে পথ চলছে। গত বছর আদানি গ্রুপ ১১৫ কোটি মার্কিন ডলারের বিনিময়ে এ বন্দর অধিগ্রহণের ঘোষণা দেয়।