বিপুল ব্যয়ের চাপ মেরামত সংরক্ষণে

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ৭:০৪ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হাতে থাকা দেড় লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) সংরক্ষণ ও মেরামত করতে গিয়ে গলদঘর্ম হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ কর্মযজ্ঞে প্রয়োজন হচ্ছে বিপুল অঙ্কের টাকার। ওই টাকার জোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছে ইসি। গত দুই অর্থবছরেই ৩৯ হাজার ৯৯৯টি ইভিএম মেরামতে ব্যয় হয়েছে ৪০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে আরও ৪৮ হাজার ৩৭৫টি মেরামতের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এসব মেশিন ব্যবহার করার লক্ষ্যে সেগুলো উপযোগী করতে ইতোমধ্যে প্রায় ২৫ হাজার মেশিন মেরামতের জন্য বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিতে (বিএমটিএফ) নেওয়া হয়েছে। আরও মেশিন নেওয়া হচ্ছে। এ মেশিনে নির্বাচন আয়োজন করতে গিয়েও কাগজের ব্যালটের চেয়ে বেশি ব্যয় হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এসব তথ্য জানিয়েছে। সূত্র আরও জানায়, ইভিএম সংরক্ষণ নিয়েও অস্বস্তিতে রয়েছেন ইসির মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা। সরকার নির্ধারিত হারে ভাড়ায় গুদাম খুঁজে পাচ্ছেন না ৩৪ জেলার নির্বাচন কর্মকর্তারা। যে ৩০ জেলায় গুদাম পাওয়া গেছে, সেগুলোর ভাড়ার প্রায় ৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা গত ৭ মাসেও পরিশোধ করতে পারেনি। ওই টাকা চেয়ে চিঠি দিলেও এখনও ছাড় করেনি অর্থ মন্ত্রণালয়। এমন পরিস্থিতিতে জুনে এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ‘নির্বাচন ব্যবস্থায় তথ্যপ্রযুক্তি প্রয়োগের লক্ষ্যে ইভিএম ব্যবহার’ শীর্ষক প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, ইভিএম সংরক্ষণে জেলা পর্যায়ে পর্যাপ্ত ওয়্যারহাউজ নেই। যতদিন গুদাম পাওয়া না যাবে ততদিন বিএমটিএফে রাখা হবে। এজন্য তাদের ভাড়া দেওয়া হবে। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, এটি এখনো আলোচনা পর্যায়ে রয়েছে। অনেক সময়ে প্রকল্পে পরিশোধ ও অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষ করতে সময় লাগে। সেজন্য প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে হয়। ব্যয় না বাড়িয়ে সময় বাড়ানোর হবে কিনা-সেটা আলোচনা চলছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিন হাজার ৮২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দেড় লাখ ইভিএম কেনার প্রকল্প নিয়েছিল তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা কমিশন। চুক্তি অনুযায়ী ইভিএম মেশিনের ওয়ারেন্টি ছিল মাত্র এক বছর। আর সার্ভিস সাপোর্ট ছিল পাঁচ বছর। ওই এক বছর সময় চলে যাওয়ায় এখন টাকা দিয়ে ইভিএম মেরামত করতে হচ্ছে। মাঠপর্যায়ে থাকা ইভিএমের প্রায় অর্ধেকেই নানা ধরনের ত্রুটি ধরা পড়ছে। অনেক মেশিন পুরোপুরি অকেজো হয়ে পড়েছে। সংরক্ষণের ব্যবস্থা ও এ খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় এগুলো এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও ইভিএম প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, এ মেশিন ব্যবহারের ফলে নির্বাচনে রাতে ব্যালটে সিল মেরে রাখা ও কেন্দ্র দখলের মতো সহিংসতা কমে এসেছে। কম সময়ে ফলাফল ঘোষণা করা যাচ্ছে। এতে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। ইসি সূত্র জানায়, ২৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সর্বশেষ মাসিক সমন্বয় সভায় ইভিএম সংরক্ষণের সমস্যা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। ওই সভায় জানানো হয়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩০টি জেলায় গুদাম ভাড়া পাওয়া গেছে। সেগুলোর ভাড়া হিসাবে চার কোটি ৫৩ লাখ ৯৩ হাজার টাকা অর্থসংস্থানের জন্য অর্থ বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ওই টাকার ছাড়ের অনুমতি এখনো পাওয়া যায়নি। সভায় ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম দ্রুতগতিতে গুদাম ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন। সূত্র আরও জানায়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে ১৬ জানুয়ারি মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা পাঠানো হয়। ওই নির্দেশনায় বলা হয়, ইভিএম গুদাম পাহারা দেওয়ার জন্য দুজন আনসার নিয়োগ দিতে হবে। এছাড়া গুদামের প্রতিটি রুমে দুটি ও প্রতিটি ফ্লোরে একটি করে সিসি ক্যামেরা রাখতে হবে। ইভিএম চার্জ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক সামগ্রী ইনস্টল করতে হবে। এসব কাজে জেলাপ্রতি এককালীন ৫০ হাজার টাকা হারে বরাদ্দ দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে ওই চিঠিতে। এর বাইরে আনসার সদস্যের বেতন, গুদাম ভাড়া ও ইলেকট্রিক বিলসহ অন্যান্য খরচ মেটাতে হবে ইসি সচিবালয়কে। ওই টাকা খরচ করার পরও মেশিন ভালো রাখা যাবে-এমনটি মনে করছেন না মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা। একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ইসির ১৯টি সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে ১৪ জন ও বাকি জেলাগুলোতে ১১-১২ জন জনবল রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নিয়মিত কাজ করার জন্য এ সংখ্যক জনবল পর্যাপ্ত নয়। নিয়মিত কাজের বাইরে এ জনবল দিয়ে ইভিএম চার্জ দেওয়া ও দেখভাল করা কঠিন কাজ। ইভিএম প্রকল্প সূত্র জানায়, যেসব ইভিএমে ত্রুটি রয়েছে তা প্রকল্পের আওতায় মেরামত করা হচ্ছে। বর্তমানে প্রকল্পের মেশিনারি ও যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ৬০ কোটি টাকা রয়েছে। ওই টাকায় ৪৮ হাজার ৩৭৫টি ইভিএম মেরামত করা যাবে। যদিও এ প্রকল্পটি সরকারের বি ক্যাটাগরিতে থাকায় ওই ৬০ কোটি টাকার ৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ের অনুমোদন রয়েছে। ওই টাকায় আনুমানিক ৪০ হাজার ইভিএম মেরামতের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা। একইসঙ্গে বাকি ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ের ওপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর আগে ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে দুটি পৃথক প্যাকেজের আওতায় ৪০ কোটি টাকায় ৩৯ হাজার ৯৯৯টি ইভিএম মেরামত করা হয়। সূত্র আরও জানায়, সারা দেশে থাকা ইভিএমে ত্রুটি আছে কিনা-তা পরীক্ষা করছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা। ইসির দশটি অঞ্চলের একাধিক কর্মকর্তা জানান, তার অঞ্চলে প্রায় ৫০ শতাংশ ইভিএম ত্রুটিপূর্ণ। ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান বলেন, চারটি অঞ্চল থেকে প্রায় ২৫ হাজার ইভিএম মেরামতের জন্য বিএমটিএফে পাঠানো হয়েছে। আরও মেশিন পাঠানো হবে। প্রকল্পের টাকায় এসব মেশিন মেরামত করা হচ্ছে।