চলনবিলে আকস্মিক বন্যা, ডুবে গেছে পাকা ধান

৯ জুন, ২০২৫ | ৫:৫৪ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার চলনবিলে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যার পানিতে চলনবিলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে নাবিজাতের ইরি-বোরো ধান ডুবে গেছে। ফলে কৃষকের কুরবানি ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে। ঈদকে সামনে রেখে মৌসুমি শ্রমিকেরা বাড়ি চলে যাওয়ার পরপরই আকস্মিক বন্যায় চলনবিলের তাড়াশ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, সিংড়া ও গুরুদাসপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল তলিয়ে গেছে। ফলে ডুবে যাওয়া ধান কাটা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। কৃষক ধান কাটার শ্রমিক না পেয়ে হারভেস্টার মেশিন এনে ধান কাটার চেষ্টা করছে। কিন্তু পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সে চেষ্টাও বিফলে গেছে। নিরুপায় অনেককেই ঈদের আনন্দ ফেলেই নৌকা নিয়ে কোমর পানিতে ডুবে ধান কেটে ঘরে তোলার চেষ্টা করছে। তাড়াশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এ অঞ্চলে প্রায় ৯০ ভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। সরিষার জমিতে নাবিজাতের ব্রি ধান-২৯ থাকায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, উজানের ঢলে আসা পানি ও স্থানীয়ভাবে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে চলনবিল অঞ্চলে এ বন্যা দেখা দিয়েছে। চলনবিলের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত ১৬টি নদ-নদীর মধ্যে আত্রাই ও ভদ্রাবতী নদী দিয়ে উজানের ঢলের পানি নিম্নধারা যমুনায় গিয়ে মিশে যায়। কিন্তু বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী ৫ দিন যমুনার পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হবে। সরেজমিনে নাটোরের সিংড়া উপজেলার বিয়াস, গুরুদাসপুর উপজেলার রুহাই, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মাগুড়াবিনোদ, উল্লাপাড়া উপজেলার রহিমপুর ও শাহজাদপুর এলাকার পোতাজিয়া পয়েন্টে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটতে নেওয়া হচ্ছে বিঘা প্রতি ৬ হাজার টাকা। কিন্তু পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মেশিন ডুবে যাওয়ায় তা দিয়েও আর ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে না। সিংড়ার বিয়াস গ্রামের বাসিন্দা রোজিনা আক্তার মিতু বলেন, অনেক কৃষক শ্রমিক না পেয়ে ধানের আশা ছেড়ে দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ অর্ধেক ভাগ দিয়ে ধান ঘরে তুলছেন। রাউতারা বাঁধের কারণে কিছু রক্ষা হলেও বৃষ্টি ও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় অধিকাংশ ফসলের জমি তলিয়ে গেছে। তাড়াশ উপজেলার মাগুরা মুকন্দ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গলা পানিতে নেমে কৃষকরা ধান কাটার চেষ্টা করছেন। সেই সঙ্গে অতি বৃষ্টির কারণে তাদের দুর্ভোগ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। সিংড়া-তাড়াশ সংযোগস্থলের রানী ভবানী ব্রিজের উজানে গিয়ে দেখা যায়, ভদ্রাবতী নদীর উপর নির্মিত জলকপাট উপচে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এমরান হোসেন বলেন, ঈদের আগে ২৪ ঘণ্টায় আত্রাইয়ে ৩ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেলেও ঈদ পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ৩ সেন্টিমিটার পানি কমেছে। তবে স্থানীয় ভাবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় চলনবিলের নিম্নাঞ্চলে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাড়াশ কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সূত্র বলছে, আগামী ৫ দিন এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।