মেয়াদ শেষে ইউপিতে বসবে প্রশাসক

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩ | ৭:২০ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

পৌরসভা ও জেলা পরিষদের মতো মেয়াদোত্তীর্ণ বা নতুন ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) প্রশাসক নিয়োগ করবে সরকার। প্রশাসকের অধীনে ১২০ দিনের মধ্যে পরবর্তী নতুন নির্বাচন হবে। নতুন পরিষদের কাছে ক্ষমতা তুলে হস্তান্তরের মাধ্যমে বিদায় হবেন প্রশাসক। এজন্য ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) আইন সংশোধন হচ্ছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) (সংশোধন) আইন, ২০২২-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। খসড়া অনুসারে কোনো চেয়ারম্যান বা চেয়ারম্যানের দায়িত্বপ্রাপ্ত বা প্রশাসক নির্দিষ্ট সময়ে দায়িত্ব হস্তান্তরে ব্যর্থ হলে তার ১০ হাজার টাকার অর্থদণ্ড হবে। ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের পদবি বদলে হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ প্রশাসনিক কর্মকর্তা। পরিষদে একজন হিসাবরক্ষক নিয়োগ করা হবে। ইউনিয়ন পরিষদ আইন, ২০২২ সংশোধনের বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. মহ. শের আলীর সঙ্গে কথা হয়েছে। সোমবার নিজ কার্যালয়ে তিনি বলেন, আইন সংশোধনের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের জন্য পাঠানো হয়েছে। এখন বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পরবর্তী কার্যক্রমের অপেক্ষায় আছে। মন্ত্রিসভার আগামী যে কোনো বৈঠকে আইন সংশোধনের প্রস্তাব উঠবে। সংশোধিত আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সরকার একজন উপযুক্ত ব্যক্তিকে প্রশাসক নিয়োগ দেবে। নতুন ইউনিয়ন ঘোষণা করা হলেও একই বিষয় প্রযোজ্য হবে। নির্বাচিত পরিষদ গঠন না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসক ইউপির যাবতীয় দায়িত্ব পালন করবেন। নিযুক্ত প্রশাসক একবারের বেশি বা ১২০ দিনের বেশি দায়িত্বে থাকতে পারবেন না। তবে কোনো দৈবদুর্বিপাকের কারণে সরকার এই মেয়াদ ৬০ দিন পর্যন্ত বাড়াতে পারবে। অতিমারি, মহামারিসহ বিশেষ ক্ষেত্রে ওই মেয়াদ যৌক্তিক সময় পর্যন্ত বাড়াতে পারবে। বিদ্যমান আইনে এ ধরনের কোনো বিধান নেই। চেয়ারম্যান ও সদস্যদের শপথ নেওয়ার তারিখ থেকে পরবর্তী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হবে। বিদ্যমান আইনে চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নাম সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হওয়ার তারিখ থেকে পরবর্তী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। বর্তমান আইনে দৈবদুর্বিপাকজনিত বা অন্যবিধ কোনো কারণে নির্ধারিত পাঁচ বছর মেয়াদের মধ্যে নির্বাচন না হলে সরকার লিখিত আদেশ দিয়ে নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত কিংবা সর্বোচ্চ ৯০ দিন পর্যন্ত (যা আগে ঘটবে) সংশ্লিষ্ট পরিষদকে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ক্ষমতা দিতে পারবে। এ সংক্রান্ত বিধান এবার বাতিল হচ্ছে। আইনটি সংশোধনের বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ২০০৯ সালের পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেছে। তাই সময়ের সঙ্গে কিছু কিছু সংশোধন আনা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, বিদ্যমান আইনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) ছিল। এখন ওই বাহিনীর নাম পরিবর্তন করে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি) রাখা হয়েছে। সুতরাং ইউপি আইনের সংশোধনীতে বিডিআর-এর স্থলে বিজিবি করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে পৌরসভা আইন ও জেলা পরিষদ আইন সংশোধন হয়েছে। সংশোধনীর খসড়ায় দায়িত্ব হস্তান্তরের ব্যাখ্যায় বলা হয়, নতুন পরিষদ গঠনের আগের চেয়ারম্যান তার দখলে থাকা পরিষদের অর্থ, সম্পদ, রেজিস্টার ও সিলমোহর দ্রুততম সময়ের মধ্যে হস্তান্তর করবেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের প্রতিনিধি হিসাবে একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার উপস্থিতিতে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়াকে হস্তান্তর বোঝানো হয়েছে। চেয়ারম্যান পদত্যাগ করতে চাইলে লিখিতভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর আবেদন করবেন। আবেদন গৃহীত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার পদ শূন্য হবে। বিদ্যমান আইনে ইউএনওর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার কথা বলা আছে। তবে কার দ্বারা পদত্যাগপত্র গৃহীত হলে চেয়ারম্যানের পদ শূন্য হবে, তা উল্লেখ নেই। সুতরাং আইনে এ সংশোধনী আনা হয়েছে। এছাড়া পরিষদে কর্মরত কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্য, বিভ্রান্তিকর, অসত্য ও ভুল তথ্য দিলে তাকে এক হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। সিটিজেন চার্টার অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তথ্য প্রদান না করলে ইউপির প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ৫০ টাকা অর্থদণ্ড হবে। আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, দায়িত্ব পালনকালে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা নির্ধারিত সম্মানি পাবেন। বিদ্যমান আইনে বলা হয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা সরকার নির্ধারিত সম্মানি পাবেন। এই সংশোধনীর ফলে কোনো চেয়ারম্যান ও সদস্য কোনো অপরাধের কারণে বরখাস্ত হলে বরখাস্তকালীন তিনি কোনো সম্মানি পাবেন না। অর্থাৎ দায়িত্ব পালন না করলে সম্মানি পাবেন না। সম্মানি পাওয়া দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ গ্রাম আদালত পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের দেওয়া দায়িত্ব পালন ও প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করবে। গ্রাম আদালত পরিচালনার বিষয়টি বিদ্যমান আইনে নেই। তাই গ্রাম আদালত পরিচালনা সংশোধিত আইনে যুক্ত করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের বর্জা সংগ্রহ, অপসারণ ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার বিষয়টিও সংশোধিত আইনে উল্লেখ করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে বর্জ্য গ্রহণ, অপসারণ ও ব্যবস্থাপনার বিষয়ে কোনো ধারা নেই।