‘পাওয়ার হাউজ’ ছাড়তে নারাজ ক্ষমতার ছড়ি ঘোরানো কর্মকর্তারা

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩ | ৭:১৮ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

একশ্রেণির আমলারা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে তাদের পোস্টিং ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছেন। পদোন্নতিসহ নানা কারণে পূর্বের প্রাইজপোস্টিং হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় যাদের অনেকে এখন মহাদুশ্চিন্তাগ্রস্ত। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় অন্য দপ্তরে পোস্টিং দিতে চাইলেও তারা পূর্বের ‘পাওয়ার হাউজ’ ছাড়তে নারাজ। যেকোনো মূল্যে হারানো সাম্রাজ্য ফিরে পেতে অনড়। কেউ কেউ আগের দপ্তরে আনঅফিসিয়ালি সক্রিয় থাকার চেষ্টাও করছেন। কাঙ্ক্ষিত পোস্টিং না হলে নিদেনপক্ষে সংযুক্ত হলেও তারা থাকতে চান। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এমন তথ্য জানিয়েছে। এমন অসহায়ত্বের কারণ জানতে চাইলে প্রশাসন ক্যাডারের বিভিন্ন ব্যাচের পেশাদার কর্মকর্তাদের কয়েকজন বলেন, ‘অন্যতম কারণ- অধিকাংশ কর্মকর্তার মধ্যে পেশাদারিত্ব নষ্ট হয়ে যাওয়া। তারা আফসোস করে বলেন, তাদের বেশ কয়েকজন ব্যাচমেট ওইসব পাওয়ার হাউজে পোস্টিং পেয়ে রাতারাতি চিরচেনা চরিত্র বদলে ফেলেন। প্রবল ক্ষমতার হটসিটে বসে শুধুই ক্ষমতার ছড়ি ঘুরিয়েছেন। অনেকের সঙ্গে অপ্রত্যাশিতভাবে খারাপ ব্যবহারও করেছেন। তাদের প্রতিহিংসার কারণে ক্ষেত্রবিশেষে ব্যাচমেটরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অন্য বিষয়গুলো নাইবা বললাম।’ তারা জানান, ‘এখন হটসিট না থাকায় চরম অসহায় হয়ে পড়েছেন। কারণ ক্ষমতা অপব্যবহারকারী এই শ্রেণির কর্মকর্তারা কোথাও আর ঠাঁই পাবেন না।’ ক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা মনে করেন, অতি সুবিধাবাদী ও সুযোগ সন্ধানী এসব কর্মকর্তার দ্বারা শুধু প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারের ইমেজও ক্ষুণ্ন হয়েছে। এরা এখন সরকারের জন্য বোঝা। তারা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই যদি পাওয়ার হাউজ ছাড়তে এদের এত ভয় হয়, তাহলে সরকার পরিবর্তন হলে তো এদের খুঁজে পাওয়াই মুশকিল হবে। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করে সাধারণ কর্মকর্তারা বলেন, আশ্রয়দাতাসহ এসব কর্মকর্তার ব্যাপারে সরকারের নীতিনির্ধারক মহলকে ভবিষ্যতে আরও সজাগ ও সচেতন হতে হবে। কেননা, এর আগেও যারা ওইসব পাওয়ার হাউজ থেকে ছিটকে পড়েছিলেন, তারাও কম মায়াকান্না করেননি। ভাবখানা এমন যে, ওইসব দপ্তরে চাকরি করলে তাদের মন্ত্রণালয়/বিভাগে পোস্টিং দেওয়াটা বড্ড বেমানান! বরং তাদের শুধু চাকরির শেষদিন পর্যন্ত নয়, নিয়মিত চাকরির মেয়াদ শেষ হলেও চুক্তি দিয়ে বহাল রাখতে হবে। পদ না থাকলে পদ সৃষ্টি করে হলেও অনিবার্য এসব কর্মকর্তাকে মোটেই হাতছাড়া করা যাবে না। প্রশাসনের সাধারণ কর্মকর্তারা বলেন, এ ধরনের অন্যায় আবদার রক্ষার কারণে ইতোমধ্যে সরকারের অনেক ক্ষতি হয়েছে। সুবিধাবাদীদের কারণে প্রকৃত ছাত্রলীগ করা এবং শতভাগ আওয়ামী পরিবারের অনেক দক্ষ ও যোগ্য আমলা পাওয়ার হাউজগুলোতে পোস্টিং পাননি। যে ক’জন পেয়েছিলেন তাদের এক পর্যায়ে কৌশলে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমনো অভিযোগ ছিল যে, তারা সেখানে পোস্টিং পাওয়ার পর সরকারের গুডবুকে থাকা বাকি কর্মকর্তাদের সেখানে ভিড়তেই দেননি। ফলে বর্তমান সরকারের শুরু থেকেই প্রকারান্তরে প্রকৃত আওয়ামীপন্থি দক্ষ ও সাহসী আমলাদের সঠিক স্থানে পোস্টিং হয়নি। এ সারির কর্মকর্তাদের মধ্যে এখনো যারা কর্মকর্তা আছেন, তাদের প্রায় সবাই কম গুরুত্বপূর্ণ পদে দূরে দূরে আছেন। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সচিব আক্ষেপ করে বলেন, ‘বিলম্বে হলেও সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের কাছে সব খবরই আছে। কিন্তু এখন আর কিছুই করার নেই। পরিস্থিতি এমন জায়গায় চলে গেছে, একদিনের জন্য মন্ত্রণালয় বিভাগে কাজ করেনি, অথচ এমন কর্মকর্তাও এখন অনেক বড় পদে বসে আছেন। তাহলে জুনিয়র গ্রুপকে দায়ী করে আর কী হবে। তারাও একই পথে হাঁটবে এবং শেষ পর্যন্ত সফল হয়েও যেতে পারে। তাই আমাদের আফসোস করা ছাড়া কিছুই বলার নেই।’