স্বতন্ত্র প্রার্থী আসিফের ‘নিখোঁজ’ নিয়ে বিতর্ক

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩ | ৭:১৫ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফ আহমেদের ‘নিখোঁজ’ নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। রোববার দুপুরে আসিফের স্ত্রী মেহেরুন্নিছা মেহেরুন অভিযোগ করেন-তার স্বামীকে দুদিন ধরে পাওয়া যাচ্ছে না। কোথায় ও কী অবস্থায় আছেন তা বুঝতে পারছি না। এ অভিযোগের পরদিন সোমবার ভাইরাল হওয়া অডিওতে শোনা যায়-কাপড়চোপড় নিয়ে আসিফকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য তিনি বলছেন। পুলিশ বলছে-আবু আসিফ নিখোঁজ হননি। বরং তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। শিগগিরই তার আত্মগোপনের রহস্য উন্মোচন করা হবে। এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফের ‘নিখোঁজের’ খবর পেয়ে তাকে উদ্ধারে স্থানীয় প্রশাসনকে কড়া নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু আসিফ আসন্ন উপনির্বাচনে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় উপনির্বাচনে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সোমবার ঢাকায় নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা বলেন, আবু আসিফ আহমেদকে উদ্ধারে স্থানীয় প্রশাসনকে কড়াভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাকে প্রকাশ্যে আনার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, যেভাবেই হোক ভোটগ্রহণের আগে তাকে প্রকাশ্যে আনতে আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা করুন। নির্বাচন ভবনের নিজ কার্যালয়ে রাশেদা সুলতানা আরও বলেন, আমরা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। ডিসি, এসপি ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে ‘নিখোঁজের’ ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন এলে সব জানা যাবে। তিনি আরও বলেন, আমরা খবরে দেখতে পেয়েছি-ওনাকে নাকি আটকে রাখা হয়েছে। এ খবরের সত্যতা কতটুকু তা জানার জন্য তদন্ত করা হচ্ছে। প্রার্থী আবু আসিফ যাতে গণমাধ্যমের সামনে আসেন, কথা বলেন-সেই ব্যবস্থা যেন করা হয়। আশুগঞ্জ ও সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফের নিখোঁজের ঘটনা সোমবার নতুন মোড় নিয়েছে। ভাইরাল হওয়া অডিওতে শোনা যায়-তার স্ত্রী মেহেরুন কর্মচারী ইউসুফকে (ইসু) ফোন করে বলছেন, ‘আসিফকে কাপড়চোপড় নিয়ে বের হয়ে যাওয়ার জন্য বলতে।’ শুক্রবারের তাদের কথোপকথন রোববার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে আরও শোনা যায়-ইসুকে ফোন করে মেহেরুন জানতে চান, তার স্যার আসিফ কোথায় আছেন। ইসু জানায়-স্যার বাসায়। পরে তাকে সব জামাকাপড় দিয়ে তাড়াতাড়ি বের করে দিতে বলেন। তিনি আরও বলেন, কেউ যেন না জানে তিনি (আসিফ) কোথায় গেছেন। আর স্যার যাওয়ার ১০ মিনিট পর ক্যামেরা অন করতে বলেন মেহেরুন। অবশ্য রোববার দুপুরে সাংবাদিকদের কাছে মেহেরুন অভিযোগ করেন, তার স্বামী স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফ আহমেদকে দুদিন ধরে পাওয়া যাচ্ছে না। শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি কোথায় এবং কী অবস্থায় আছেন তা আমরা বুঝতে পারছি না। আমাদের প্রতিনিয়ত হুমকি-ধমকিও দেওয়া হচ্ছে। বাড়িতে পুলিশ অযথা তল্লাশি ও হয়রানি করছে। বাড়ির সামনেও কিছু পুলিশ আসা-যাওয়া করছে। ভয়ে আমিও পালিয়েছিলাম। তিনি বলেন, আজকের (রোববার) মধ্যে খোঁজ না পেলে রিটার্নিং কর্মকর্তা, জেলা পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে অভিযোগ করব। আবু আসিফের নিখোঁজ নিয়ে এলাকায় বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ আসিফের স্ত্রীকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে মেহেরুনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাকে বাসায় পাওয়া যায়নি এবং তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে আসিফকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ রয়েছে। কেউ বলেন, তাকে প্রশাসনের লোকজন গুম করেছে। আবার কেউ বলেন, তিনি আত্মগোপনে আছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আশুগঞ্জ থানার ওসি আজাদ রহমান বলেন, আসিফের পরিবার থেকে তার নিখোঁজের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়নি। অভিযোগ না পেলে আমরা কিছু বলতে পারব না। জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহ্গীর আলম বলেন, আবু আসিফকে আটক করেনি পুলিশ। তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। কোথায় আত্মগোপনে রয়েছেন, তা পুলিশ দ্রুত সময়ের মধ্যে বের করবে। একই সঙ্গে আমরাও কাজ শুরু করেছি। এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘নিখোঁজের বিষয়টি আমাদের জানাননি আবু আসিফের স্ত্রী। এমনকি কোথাও কোনো অভিযোগ করেননি। হঠাৎ তিনি দাবি করেন, শুক্রবার থেকে তার স্বামীর খোঁজ মিলছে না। অথচ তিন দিনে তিনি আশুগঞ্জ থানা, ইউএনও ও উপনির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে কোনো অভিযোগ করেননি। এতে বোঝা যায়-কৌশলগত কারণে আসিফ আত্মগোপন করেছেন। শিগগিরই তার আত্মগোপনের রহস্য উšে§াচন করা হবে। আসিফের বাড়ির আশপাশে পুলিশের কোনো সদস্য ঘোরাফেরা করেননি এবং বাসায় তল্লাশি করতে যাননি বলেও তিনি জানান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা অরবিন্দ বিশ্বাস বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফের নিখোঁজের বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। তিনি কোনো প্রলোভনে পড়েননি : ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির দলছুট নেতা উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়ার ছেলে মাঈনুল তুষার বলেছেন, তার বাবা কোনো প্রলোভনে পড়েননি। নির্বাচনে যেতে তার বাবার ওপর সরকারি কোনো সংস্থার চাপ সৃষ্টির অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন। রোববার রাত সাড়ে ১০টায় আশুগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তুষার আরও বলেন, তার বাবা চারবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। সব সময় তিনি এলাকার জনগণের চিন্তা করেন। তাই বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্তে সংসদ থেকে পদত্যাগ করলেও জনগণের উন্নয়নের চিন্তা করে তিনি আবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। অথচ একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই-নির্বাচনে যেতে আব্বুকে আমি চাপ দেইনি এবং কোনো প্রকার প্রলোভনেও তিনি পড়েননি।