সংশোধনের উদ্যোগ

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩ | ১১:১০ অপরাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ বিভাগের সচিবকে প্রধান করে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আইনের সঙ্গে সমন্বয় করে এই কমিটি সরকারকে সুপারিশ করবে। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, প্রয়োজনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন করা হবে। এ বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সুপারিশের পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, কমিটি দেখবে আইনের কি সংশোধন করা প্রয়োজন, আদৌ সংশোধন করার প্রয়োজন আছে কি না তাও দেখবে। যে সমস্যাগুলোর কথা বলা হচ্ছে, তা বিধিমালার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব কি না তাও খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজন হলে সংশোধন হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ বিভাগের সচিবকে সভাপতি করে ছয় সদস্যের এই কমিটিতে আরও রয়েছেন, লেজিসলেটিভ বিভাগের এক কর্মকর্তা, আইন মন্ত্রণালয়ের বিচার বিভাগের এক কর্মকর্তা এবং স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের একজন করে কর্মকর্তা। কমিটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ সম্পর্কিত আইন পর্যালোচনা করবে। তারা কি ভাবে এই আইন প্রয়োগ করে। তাদের আইনের সঙ্গে আমাদের আইনের কী পার্থক্য আছে? মূলত আইনে কোথাও কোনো প্রকার অসঙ্গতি আছে কি না তা ভালোভাবে খতিয়ে দেখবে। এগুলো যাচাই-বাছাই করে ঢাকার জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে বসে আলোচনা সাপেক্ষে একটি রূপরেখা তৈরি করে তা সুপারিশ আকারে সরকারের কাছে প্রদান করবে। এটি দেখে সরকার পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। বর্তমানে দেশে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’ বলবত রয়েছে। এই তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারাসহ কয়েকটি ধারা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এমনকি এর অপপ্রয়োগ হচ্ছে বলে মিডিয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন দাবি করে আসছে। বিতর্কিত এই ধারা বাতিলের জোর দাবিও উঠেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। তবে বিধি দ্বারা সৃষ্ট সমস্যার সমাধান করা গেলে এটি আর সংশোধনের প্রয়োজন পড়বে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। আইনটির সবচেয়ে বিতর্কিত হলো ৫৭ ধারা। এই ধারাতে বলা আছে, ‘এই আইনের অধীন দায়িত্ব পালনকালে সরল বিশ্বাসে কৃত কোনো কার্যের ফলে কোনো ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হইলে বা ক্ষতিগ্রস্ত হইবার সম্ভাবনা থাকিলে, তজ্জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মচারী বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলা বা অন্য কোনো আইনগত কার্যক্রম গ্রহণ করা যাইবে না।’ অর্থাৎ আইনের এই ধারার ক্ষমতাবলে কোনো ব্যক্তি অপরাধ না করলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিলে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী ব্যক্তি বা সংস্থার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। মানবাধিকার কমিশনের তথ্যমতে, গত (২০২২) বছরে এই আইনে ৭৯টি মামলা হয়েছে যাতে আসামি ১৭১ জন। এদের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে ৪৬ জন। এর আগে ২০১৮ সালে ৩৪টি, ২০১৯ সালে ৬৩টি, ২০২০ সালে ১৯৭টি ও ২০২১ সালে ২৩৮টি মামলা হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। সব মিলে এই আইনে বিগত চার বছরে মামলা হয়েছে ৬১১টি। বিভিন্ন মামলায় গত মোট ৫৩ সাংবাদিককে জেলে যেতে হয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন আইনটি সংশোধনের দাবিতে সোচ্চার রয়েছে। সব মিলে সরকার আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। ১৭ ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোয় বেআইনি প্রবেশ করে ক্ষতিসাধন, বিনষ্ট বা অকার্যকরের চেষ্টা করে, তা হলে অনধিক সাত বছরের জেল; জরিমানা ২৫ লাখ টাকা। ক্ষতিসাধন করলে সর্ব্বোচ ১৪ বছরের কারাদন্ড। জরিমানা এক কোটি টাকা। ১৮ ধারা অনুযায়ী, ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, কম্পিউটার সিস্টেমে বেআইনি প্রবেশ বা সহায়তা করলে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড। জরিমানা ১০ লাখ টাকা। ১৯ ধারা মতে, বেআইনিভাবে যদি কোনো ব্যক্তি কোনো কম্পিউটার বা কম্পিউটার সিস্টেম থেকে কোনো উপাত্ত, উপাত্ত ভাণ্ডার, তথ্য বা উদ্বৃতাংশ সংগ্রহ করেন বা কোনো উপাত্তের অনুলিপি সংগ্রহ করেন, তা হলে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড; জরিমানা ১০ লাখ টাকা। ২০ ধারা অনুযায়ী, কম্পিউটার সোর্স কোড পরিবর্তন, ধ্বংস করলে সর্বোচ্চ তিন বছরের সাজা। জরিমানা তিন লাখ টাকা। ২১ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা, প্রচারণা ও মদদ দিলে সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছরের কারাদণ্ড; জরিমানা ৫০ লাখ টাকা। ২৭ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করে এবং জনগণের মাঝে ভয়ভীতি সঞ্চারের জন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে বৈধ প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে বা করায়, তা হলে সর্বোচ্চ সাজা ১৪ বছর কারাদণ্ড। জরিমানা এক কোটি টাকা। ২৮ ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করে এমন কিছু ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচার করে, তা হলে সর্বোচ্চ ১০ বছরের সাজা। জরিমানা ২০ লাখ টাকা। ২৯ ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে পেনাল কোডের ৪৯৯ ভঙ্গ করে কোনো অপরাধ করেন তা হলে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড ভোগ করবেন। জরিমানা পাঁচ লাখ টাকা। ৩০ ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক, বীমা বা অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ইলেক্ট্রনিক বা ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে আইনবহির্ভূতভাবে ট্রানজেকশন করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড। পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা। ৩২ ধারা মতে, যদি কোনো ব্যক্তি বেআইনি প্রবেশের মাধ্যমে কোনো সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অতি গোপনীয় বা গোপনীয় তথ্য ডিজিটাল বা ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে ধারণ, প্রেরণ ও সংরক্ষণ করেন বা সহায়তা করেন, তা হলে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সাজা। ২৫ লাখ টাকা জরিমানা। ৩৪ ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যাকিং করেন তা হলে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সাজা। জরিমানা এক কোটি টাকা।