বেনাপোল-হিলিতে কমেছে রাজস্ব আদায়

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩ | ১১:০৪ অপরাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

যশোরের বেনাপোল ও দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি কমায় সরকারের রাজস্ব আদায় সঠিকভাবে হচ্ছে না। ডলার সংকটে ভারত থেকে আমদানি কমায় কমেছে রাজস্ব আয়। বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব ঘাটতি ৩০৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা বলে কাস্টমস সূত্র জানায়। ৬ মাসে কাস্টমসের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। সেখানে আদায় হয়েছে ২ হাজার ৬৩১ কোটি ৭২ লাখ টাকা। কাস্টমস ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে ডলার সংকটের কারণে খাদ্যপণ্য ও শিল্প কারখানার কিছু পণ্য ছাড়া অন্য পণ্য আমদানিতে ব্যাংক এলসি খুলছে না। এতে ব্যবসায়ীরা আমদানি করতে পারছে না। বেনাপোল কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য আমদানি হয়েছিল ২১ লাখ ১৪ হাজার মেট্রিক টন। এর আগের ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি করা হয়েছিল ২৬ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন পণ্য। আমদানি কম হয়েছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন। এতে সরকারের রাজস্ব আয়ও কমে গেছে। গত বছরে বেনাপোল কাস্টমস হাউসে ৫৫৮ কোটি টাকা ৮ লাখ টাকা রাজস্ব কম আদায় হয়েছিল। অর্থবছরটিতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা, সেখানে আদায় করা হয়েছে ৪ হাজার ৫৯৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা। বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের বেনাপোল দিয়ে বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। তবে বর্তমানে ডলার সংকটের কারণে সরকার এলসিতে শতভাগ মার্জিন শর্ত দিয়েছে। আবার ব্যাংকগুলো ডলার সংকট দেখিয়ে এলসি খুলছে না। যে কারণে চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে আমদানি কমে গেছে। আর আমদানি কমলে রাজস্বও আদায় কম হয়েছে। ইন্ডিয়া বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ডাইরেক্টর মতিয়ার রহমান জানান, বর্তমানে বেনাপোলসহ যশোরের কোনো ব্যাংক এলসি খুলছে না। যে কারণে আমরা পণ্য আমদানি করতে পারছি না। ব্যবসায়ীরা পড়েছে চরম বিপাকে। পণ্য আনতে না পারার কারণে বিক্রি কমে গেছে। ব্যবসায়িকভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। যে কারণে সরকারের রাজস্ব আয়ও কমে গেছে। একটি ব্যাংকের ম্যানেজার আ. কাদের জানান, উচ্চ মার্জিনের কারণে সব ব্যাংকে এলসি কমেছে। ডলার সংকট কেটে গেলে আমদানি সহজ হয়ে আসবে। অপর একটি ব্যাংকের বেনাপোল শাখার ব্যবস্থাপক মো. আমিনুর রহমান জানান, ডলার সংকটে বেশিরভাগ ব্যাংক এলসি খুলছে না। আর এলসি করতে না পারলে পণ্য আমদানি কিভাবে করবে। যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান জানান, সরকার এলসি করতে শতভাগ মার্জিন দেওয়ার নিয়ম করেছে। গত কয়েক মাস ধর ব্যাংকগুলো এলসি খুলছে না। এতে আমদানির সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার ব্যবসায়ী বেকায়দায় পড়েছেন। বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার জানান, ডলার সংকটে ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে এলসি খুলতে পারছে না। যে কারণে গত ৬ মাসে পণ্য আমদানি কমে গেছে। আর আমদানি কমলে আমাদের রাজস্ব আয়ও কমে যায়। আমাদের এখানে কোনো হয়রানি হয় না বলে তিনি দাবি করেছেন। এদিকে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি কমায় সরকারের রাজস্ব আদায় সঠিক ভাবে হচ্ছে না। ডলার সংকটের কারণে ভারত থেকে আমদানি কমায় হিলি স্থলবন্দরে কমেছে রাজস্ব আয়। চলতি (২০২২-২৩) চলতি অর্থবছরের গত ছয় মাসে ২৯৪ কোটি ৬ লাখ টাকা রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয় এনবিআর। যার বিপরীতে হিলি কাস্টমস আদায় করে ২১৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা, ফলে রাজস্ব ঘাটতিতে পরে ৮০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। হিলি স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা বলছেন ডলার সংকটের কারণে তারা চাহিদা মতো পণ্য আমদানি করতে পারছেন না। আমদানি বৃদ্ধি পেলে সরকারের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পাবে বলে জানান কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন-উর রশিদ হারুন বলেন, হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারকরা দেশের বাজারে নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখার জন্য ভারত থেকে পণ্য আমদানি করে থাকে। তবে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে ডলার সংকট দেখাচ্ছে; যার জন্য চাহিদা মোতাবেক আমরা পণ্য আমদানি করতে পারছি না। ফলে সরকার যেমন ক্ষতির মুখে পড়ছেন, তেমনিভাবে আমরা ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির মুখে পড়েছি। যেখানে ২০০-২৫০ ট্রাক প্রতিদিন হিলি বন্দরে প্রবেশ করত। বর্তমানে সেটা ১০০-১২০ গাড়িতে এসে দাঁড়িয়েছে। হিলি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সাধারণ সম্পাদক জামিল হোসেন চলন্ত বলেন, ভারত থেকে সব ধরনের পণ্য আমরা আমদানি করতে পারছি না। কারণ ডলারের সংকট এখনো কাটেনি। বৈশ্বিক করোনা মহামারি, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং পরবর্তীতে ডলার সংকটের কারণে এলসি খোলা ব্যাহত হচ্ছে। এতে হিলি বন্দর দিয়ে পাথরসহ বেশি শুল্কযুক্ত পণ্যের আমদানি কমেছে। হিলি কাস্টমসের উপকমিশনার বায়জিদ হোসেন বলেন, ডলার সংকটের প্রভাব পড়েছে হিলি স্থলবন্দরে। কমছে আমদানি। যার ফলে রাজস্ব আদায়ে পড়েছে বড় ঘাটতি। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে হিলি বন্দরেই রাজস্ব ঘাটতি প্রায় ৮১ কোটি টাকা। রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে আমদানিতে লাগাম টানার চেষ্টা করছে সরকার। বিলাসী পণ্য-দ্রব্যসহ অনেক পণ্যের এলসি খোলায় কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে; যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে হিলি স্থলবন্দরে। আমদানি কমায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এ সময়ে ২৯৪ কোটি ৬ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে আদায় হয়েছে ২১৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা।