অর্থ ও জনবল সংকট

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩ | ৭:৫২ অপরাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

রেশম বোর্ড ও আওতাধীন সংস্থায় অনুমোদিত ৫৮১ পদের মধ্যে ৪২৯টি শূন্য থাকার সংবাদ অনভিপ্রেত। বিপুলসংখ্যক পদ খালি থাকায় রেশম বোর্ড, রেশম নার্সারি ও রেশম কারখানাসহ সহায়ক প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, যা মোটেই কাম্য নয়। উদ্বেগজনক হলো, কেবল জনবল সংকটই নয়; একইসঙ্গে রেশম উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন বিভিন্ন রেশম কারখানা ও নার্সারি শ্রমিকদের সাত মাসের বেতনও বকেয়া পড়েছে। এ অবস্থায় শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধসহ বিদ্যমান সংকট, বিশেষ করে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি বলে মনে করি আমরা। রেশম মূলত এক ধরনের প্রাকৃতিক প্রোটিন তন্তু, যার কয়েকটি ধরন বস্ত্র শিল্প বয়নের কাজে ব্যবহার করা হয়। এক সময় বাংলায় এত বেশি রেশম উৎপাদিত হতো-তা স্থানীয় চাহিদা পূরণের পর প্রচুর পরিমাণে বাইরে রফতানিও হতো। উল্লেখ্য, এ সিল্কের বাজারই প্রথম ইউরোপীয় বণিকদের বাংলায় আসতে আকৃষ্ট করেছিল। ছোট আকারে বাণিজ্যকুঠি স্থাপনের মধ্য দিয়ে যাত্রা করে একটা সময়ে ইউরোপীয় বণিক কোম্পানিগুলো বাংলার বস্ত্র শিল্পের ওপর আধিপত্য বিস্তার করলেও ১৮৭০-এর দশকে মহামারি আকারে রেশম কীটের রোগবিস্তার ও কারিগরি দিক থেকে অচলাবস্থা সৃষ্টি হলে বাংলার রেশম শিল্প বিদেশের বাজার হারায়। বিশ শতকের প্রথম দিকে দক্ষিণ এশিয়ার বাজারে বাংলার রেশম বস্ত্রের কদর কমে গিয়ে সেখানে কাশ্মীর ও মহীশূর সিল্কের চাহিদা তৈরি হয়। এ ধারাবাহিকতায় ১৯৩০ সালের দিকে চীন ও জাপানের সিল্ক বাংলার রেশমের স্থান দখল করে; এমনকি এসব সিল্ক বাংলায়ও আসতে শুরু করে। রেশম উৎপাদনে পাকিস্তান সরকারের তেমন কোনো আগ্রহ ছিল না। আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রেও কোনো সংরক্ষণমূলক শুল্কনীতি ছিল না। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর রেশম শিল্পের উন্নয়নের জন্য অধিকতর সুসংবদ্ধ নীতি গৃহীত হয়। ১৯৭৪ সালে নাটোরের উত্তরা গণভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজশাহীর রেশম গুটি ও বস্ত্র দেখে চমৎকৃত হন এবং রেশম শিল্প বিকাশে স্বতন্ত্র একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। তারই ফসল হিসাবে পরবর্তী সময়ে ঐতিহ্যবাহী রেশম শিল্পের ব্যাপক সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ রেশম বোর্ড গঠিত হয়। আশা জাগানিয়া সংবাদ হলো, সাম্প্রতিক রেশম গবেষণায় গবেষকরা রেশমের ৯টি উচ্চফলনশীল তুত গাছের জাত উদ্ভাবন করেছেন, যা থেকে অতিরিক্ত ৭০ কেজি পর্যন্ত রেশম গুটি আহরণের সম্ভাবনা আছে। এ প্রেক্ষাপটে সংশ্লিষ্টরা রেশম শিল্পে সুদিনের আশা করলেও অর্থাভাবে জাতগুলো উন্মুক্ত করা ও তুতচাষিদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটি সম্পন্ন করা যাচ্ছে না। এ প্রেক্ষিতে অর্থ ও জনবল সংকটের সমাধানসহ দেশের রেশম শিল্প বিকাশে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করা জরুরি।