যুক্তরাষ্ট্রের ‘রাজনীতি’ ভেঙে দিল ইরানি ভক্তদের স্বপ্ন

২০২৬ বিশ্বকাপের আসর বসবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে। তবে বেশিরভাগ ম্যাচ, এমনকি ফাইনালও অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্রেই। এ বিশ্বকাপে আগেভাগেই জায়গা করে নিয়েছে ইরান। বিশ্বকাপে দলের খেলা দেখতে দেখতে গ্যালারিতে বসে চিৎকার করার স্বপ্ন ছিল অনেক ইরানির। কিন্তু সেই স্বপ্ন যেন ধুলোয় মিশে গেল। কারণ, বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন করে ১২টি দেশের নাগরিকের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। এ তালিকায় আছে ইরানও। সোমবার থেকে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। সোহরাব নাদেরি নামে তেহরানের একজন রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমার বন্ধুরা আর আমি অনেক বছর ধরে স্বপ্ন দেখেছি আমেরিকার মাঠে আমাদের জাতীয় দলকে খেলতে দেখব। ওরা যখন কোয়ালিফাই করল, তখন মনে হয়েছিল এটা এক জীবনে একবারই ঘটে এমন সুযোগ।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন এই নতুন নিষেধাজ্ঞার কারণে সেই স্বপ্ন ভেঙে গেল। এই রাজনীতির কোনো কিছুই আমাদের হাতে নেই, আর আমরা তা নিয়ে মাথাও ঘামাই না।’ সোহরাব ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে গিয়েছিলেন দলের খেলা দেখতে। সেবার গ্রুপ পর্বে যুক্তরাষ্ট্র ১-০ গোলে হারিয়েছিল ইরানকে। ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বহু বছর ধরেই শীতল। ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে চলছে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে। সমাধান না হলে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক পদক্ষেপ নেবে বলেও হুমকি দিয়েছে। ট্রাম্প দাবি করেছেন, কলোরাডোর এক ইহুদি বিক্ষোভে একটি অস্থায়ী ফ্লেম থ্রোয়ার হামলার পর তিনি এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। তিনি বলেন, হামলাকারী ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে অবস্থান করছিল। এই নিষেধাজ্ঞা অ্যাথলেটদের জন্য প্রযোজ্য হবে না। ফলে ইরানি খেলোয়াড়রা ২০২৬ বিশ্বকাপ ও ২০২৮ অলিম্পিকে অংশ নিতে পারবেন। কিন্তু সমর্থকরা আর যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে খেলাটি দেখতে পারবেন না। ১৬ বছর বয়সী ফুটবলভক্ত হাসতি তৈমুরপুর বলেন, ‘প্রত্যেক ইরানিরই অধিকার আছে তাদের দলকে সমর্থন করার। সেটা আমেরিকাতেই হোক কিংবা অন্য কোনো দেশে।’ ট্রাম্প আবার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে ইরানের ওপর ‘ম্যাক্সিমাম প্রেসার’ নীতি চালু করেছেন। তিনি হুঁশিয়ার করে বলেছেন, ‘যদি ইরানিরা তাড়াতাড়ি চুক্তির পথে না আসে, তাহলে খারাপ কিছু ঘটবে।’ সোহরাব নাদেরি এই নিষেধাজ্ঞাকে ‘অমানবিক’ এবং ‘সব ইরানির জন্য অপমানজনক’ বলেছেন। তিনি এখনো আশায় বুক বাঁধছেন, ইরান-যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু আলোচনা কোনো একটা সমাধান দেবে। তখন ট্রাম্প হয়তো সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারেন। তবে অনেকেই আশঙ্কা করছেন, যদি চুক্তিও হয়, ততদিনে হয়তো অনেক দেরি হয়ে যাবে। তবে কেউ কেউ এখনো আশা ছাড়ছেন না। বিশ্বকাপকে তারা দুই দেশের সম্পর্কে বরফ গলানোর একটি সুযোগ হিসেবে দেখছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোহাম্মদ রেজা মানাফি বলেন, ‘স্পোর্টস ডিপ্লোম্যাসি অনেক সময় বড় ভূমিকা রাখে। এটা রাজনৈতিক আলোচনার ফলাফল ত্বরান্বিত করতে পারে। এই বিশ্বকাপ দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে উন্নতি আনতে পারে।’ ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে দুই দলের একটি ম্যাচ স্মরণীয় হয়ে আছে। ইরানি খেলোয়াড়রা আমেরিকান খেলোয়াড়দের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। এরপর দুই দলের খেলোয়াড়রা একসাথে ছবি তুলেছিলেন। ইরান সে ম্যাচে ২-১ গোলে জিতেছিল। তেহরানে সেই জয় ক্রীড়া ও রাজনীতির দুই দিক থেকেই উদযাপিত হয়েছিল। ২০২৬ বিশ্বকাপে আবার ইরান-যুক্তরাষ্ট্র মুখোমুখি হবে কিনা, তা এখনো পরিষ্কার নয়। ডিসেম্বরেই হবে ড্র। তবে সেই সম্ভাবনা নিয়ে অনেকেই এখন থেকে উত্তেজিত। ৪৪ বছর বয়সি দিনমজুর সিয়ামাক কালান্তারি বলেন, ‘এই দুই দেশের মধ্যে শত্রুতা নেই। এটা সরকারগুলোর রাজনৈতিক আলোচনা।’ ১৮ বছর বয়সি সমর্থক মাহদিয়েহ ওলফাতি বলেন, ‘যদি আবার যুক্তরাষ্ট্রের মুখোমুখি হই, আমরা অবশ্যই জিতব। আমাদের খেলোয়াড়রা আসল খেলোয়াড়।’ বিশ্লেষক মানাফি বলেন, বিশ্বকাপের আগে কোনো তৃতীয় দেশে দুই দলের প্রীতি ম্যাচ হতে পারে। সেটা হলে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়নে সাহায্য করবে। তিনি বলেন, ‘যেটা রাজনীতিবিদরা পারেননি, সেটা খেলোয়াড়রা হয়তো পারবে।’