আদানির বিদ্যুতের কী হবে

২৯ জানুয়ারি, ২০২৩ | ৯:৫৮ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

ভারতের আদানি গ্রুপের কাছ থেকে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আগামী মার্চ থেকেই ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হতে পারে। চলমান বিদ্যুৎ সংকট থেকে উত্তরণে সরকার এই বিদ্যুতের ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনের পর গত কয়েক দিন আদানির বিভিন্ন কোম্পানি শেয়ারদরে ধস নেমেছে। তাদের এই আর্থিক দুরবস্থায় বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানিতে প্রভাব ফেলবে কিনা, সেই প্রশ্ন উঠছে। হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনে আদানির ব্যবসা সম্প্রসারণের নানা অনিয়ম তুলে ধরা হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে আদানির চুক্তি নিয়েও নানা সমালোচনা রয়েছে। সূত্র বলছে, চুক্তির সীমাবদ্ধতার কারণে ভারতের ঝাড়খন্ডের গোড্ডায় নির্মিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহূত কয়লার দাম বেশি পড়বে, যা দিতে হবে বাংলাদেশকে। এ ছাড়া ভারতের উচ্চ করপোরেট ট্যাক্স, কয়লার পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় এই বিদ্যুতের দাম দেশের অন্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে বেশি হবে বলে সংশ্নিষ্টরা মনে করছেন। ভারত থেকে আমদানি করা অন্য বিদ্যুতের চেয়ে তিন গুণ আর পায়রা কেন্দ্রের চেয়ে দ্বিগুণ দাম হবে আদানির বিদ্যুতের। আদানিকে বিপুল অর্থ ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে দিতে হবে। বিপরীতে তারা চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশও ক্ষতিপূরণ পাবে। তবে ক্ষতিপূরণ সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে বিস্তারিত জানা যায়নি। বিশ্নেষকরা বলছেন, আদানির ব্যবসায় বড় ধরনের ধস নামলে জ্বালানি কিনতেই সংকটে পড়তে পারে। এটা ঘটলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সমস্যা হতে পারে। এর বাইরে বাংলাদেশের আর্থিক লোকসান হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে আদানির বিদ্যুৎ না পেলে গ্রীষ্ফ্ম ও সেচ মৌসুমে বাড়তি চাহিদা সামলানো সরকারের জন্য কঠিন হবে বলে মনে করছেন খাত-সংশ্নিষ্টরা। জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, প্রথমত. ক্লিন এনার্জির কথা চিন্তা করলে আদানির বিদ্যুৎ পরিবেশের জন্য ভালো নয়। দ্বিতীয়ত. চুক্তির নানা অসংগতির কারণে এই বিদ্যুতের খরচ তুলনামূলক বেশি। ফলে আদানির সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ কেনার চুক্তিটিতে দেশের স্বার্থ সেভাবে রক্ষিত হয়নি। এখন আর্থিক দিক দিয়ে বলতে গেলে দেখতে হবে যে কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ কিনছে, সেটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কিনা। কারণ, আদানির ক্ষতি হয়েছে মূলত কোম্পানির শেয়ারদরে পতনের কারণে। তাই আদানির জ্বালানি কেনা বিঘ্নিত না হলে আমাদের ওপর তেমন প্রভাব ফেলবে না। জানতে চাইলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আদানির শেয়ারের দাম কমেছে। এর সঙ্গে বিদ্যুৎ বিক্রির সম্পর্ক নেই। তাদের শেয়ারের দাম বাড়তে পারে, কমতেও পারে। তাতে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ প্রাপ্তি বাধাগ্রস্ত হবে না। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানির জন্য কেন্দ্রটি নির্মাণ প্রায় শেষ করেছে আদানি গ্রুপ। সেখান থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ১০৬ কিলোমিটার ও বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে জাতীয় গ্রিড পর্যন্ত আরও প্রায় ৩০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনের কমিশনিং সম্পন্ন হয়েছে। গত ১০ ডিসেম্বর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করছে আদানি। এখন ২০০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ আসছে। এই কেন্দ্র থেকে ১ হাজার ৩৪৪ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। আদানি ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি বিশ্নেষণ করে ওয়াশিংটন পোস্টের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম যত বেশিই হোক না কেন, নির্দিষ্ট পরিমাণ ছাড় পায় বাংলাদেশ। কিন্তু আদানির সঙ্গে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ কয়লার দাম আন্তর্জাতিক দর অনুযায়ী দেবে। এতে জ্বালানি খরচ বেশি পড়বে। ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের (আইইইএফএ) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদানি ভারতে যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র চালায়, এগুলো অধিকাংশই সমুদ্রের কাছে; যাতে সড়ক অথবা রেলে কয়লা পরিবহনের খরচ কমানো যায়। কিন্তু গোড্ডার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্দর থেকে বেশি দূরে হওয়ায় কয়লা পরিবহনে বাড়তি ব্যয় বিদ্যুতের দাম বাড়াবে। এতে আদানির ব্যবসা হলেও বাংলাদেশের জন্য তা বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদানির প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ১৬-১৭ টাকায় কিনতে হবে বাংলাদেশকে। যদিও আমদানি করা কয়লা দিয়ে উৎপাদিত পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়ছে ৮-৯ টাকা। অন্য বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে আদানির ক্যাপাসিটি চার্জও বেশি বলে পাওয়ার সেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তিতে আদানিকে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে ৯৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা দিতে হবে।